ইফতেখার সিফাত
আরসার প্রধানকে গ্রেপ্তারের ব্যাপারটিকে বাংলাদেশের মানুষ সাধারণ কিংবা উচিত ঘটনা হিসেবে নিয়েছে। কিন্তু এটা ছিল সাম্রাজ্যবাদী শক্তির একটি আক্রমণ।
আরাকানে মুসলিমদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন ছিল আরসা। আরসাকে দমন ও দূর্বল করা পশ্চিমা পলিসি। উপদেষ্টা সরকার এটাই বাস্তবায়ন করেছে। বিপরীতে আরাকান আর্মিকে প্রতিষ্ঠিত করা এবং শক্তিশালী করা আমেরিকান প্রজেক্ট। অথচ আরাকান আর্মি মুসলিম বিদ্বেষী।
তারা এখনো আরাকানের মুসলিমদের উপর নির্মম নির্যাতন চালাচ্ছে। তাদের অত্যাচারে এখনো আরাকানি মুসলিমরা বাংলাদেশে হিজরত করছে। তারা সেখানে মুসলিমদের উপর বলতে গেলে বর্বর দাসপ্রথার প্রচলন করেছে।
আরাকান আর্মি কেবল মুসলিম বিদ্বেষীই নয়, তারা বাংলাদেশের অখণ্ডতা ও নিরাপত্তার জন্যও হুমকি। বাংলাদেশে এসে তারা ডাকাতি করে। উপজাতিদের সাথে তাদের গভীর যোগাযোগ, যেই উপজাতিরা আবার পার্বত্য চট্টগ্রামে আলাদা স্বায়ত্তশাসন বা জুমল্যান্ড নামে আলাদা রাষ্ট্র চায়।
আপনি পরিপূর্ণ ছকটা একটু খেয়াল করুন। আরসাকে দমন ও আরাকান আর্মিকে প্রতিষ্ঠা। তাদের জন্য মানবিক করিডোরের পরিকল্পনা। অন্যদিকে পশ্চিমা ও খ্রিস্টান মিশনারীদের জুমল্যান্ড গঠনের তৎপরতা। পাহাড়ি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর রেন্ডিয়া থেকে প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র সাপ্লাই। সরকারের কাছে পাহাড়ি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ইউপিডিএপের স্বায়ত্বশাসনের প্রস্তাবনা। এরপর আছে চট্টগ্রামের বন্দরকে মার্কিনপন্থী ডিপি ওয়ার্ল্ডের কাছে তুলে দেয়া।
ডিপি ওয়ার্ল্ড বিভিন্ন দেশে বন্দর পরিচালনা করে। কিন্তু বাংলাদেশে সেটা স্বাভাবিক না। কারণ চট্টগ্রাম বাংলাদেশের ঝুকিপূর্ণ এলাকা। একে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রমূলক তৎপরতা চলমান। যেখানে রেন্ডিয়া ও পশ্চিমা শক্তি উভয়েই ইনভলভ। এছাড়া মার্কিন এম্বাসি যখন বন্দর পরিদর্শন করে এসে বিদেশী এই কোম্পানির কাছে বন্দর তুলে দেয়ার ব্যাপারে আনন্দ প্রকাশ করে, তখন সন্দেহ আরো তীব্র হয়।
করিডোর দিবেন, বন্দর দিবেন। এসব দিয়ে দেশে কি ঢুকবে, কাদেরকে পশ্চিমা বিশ্ব শক্তিশালী করবে- এসব খুবই গুরুত্বপূর্ণ কনসার্ন। আরাকান আর্মির সাথে যেমন পশ্চিমাদের সম্পর্ক আছে, তেমনি আছে পাহাড়ের সন্ত্রাসী ও মিশনারীদের সাথে। এই দুই শক্তিকে ব্যবহার করে পার্বত্য অঞ্চলকে অস্থির করে তোলা পশ্চিমাদের জন্য খুবই সহজ। আর অস্থিরতায় জাতিসংঘ আর পশ্চিমা বিশ্ব কি করে সেটা আমরা জানি। তারা ঘাঁটি স্থাপনের ন্যায্যতা পাবে এবং মাতব্বরি করে পূর্ব তিমুর কিংবা দক্ষিণ সুদানের মত আলাদে রাষ্ট্রের ফায়সালা দিবে।
উন্নতি, অর্থনীতি এসব দরকার। দরকার আওয়ামী আমলের দূর্নীতিবাজ প্রতিষ্ঠান থেকে মুক্তি, শ্রমিকদের ন্যায্য পারিশ্রমিক। কিন্তু দেশের অখণ্ডতা ও নিরাপত্তা আরো বেশি জরুরী। যেখানে কেবল ব্যবসার মাধ্যমেই উপমহাদেশে উপনিবেশ কায়েমের ইতিহাস আছে, সেখানে পূর্ব থেকেই এতো এতো তৎপরতা আর কনসার্নের মাঝে ব্যবসাকে কেবল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। এই এলাকার নিরাপত্তা ও হুমকিকে বিবেচনায় নিয়েই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বিদেশীদের সকল তৎপরতাকে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখতে হবে।
সবশেষে বলব, আমরা আসলে দূরদেশ নিয়ে যতটুকু আবেগাপ্লুত। পাশের আরাকানের মুসলিমদের জন্য তেমন না। তাদের উপর এখনো প্রতিনিয়ত নির্যাতন হচ্ছে, দেশ ছেড়ে চলে আসতে হচ্ছে। আরো নির্মম পরিহাস হলো, জাতিসংঘসহ এই সরকার আরাকানে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পূনর্বাসনের জন্য পছন্দ করেছে আরাকান আর্মিকে। অথচ তারা মুসলিমদের হত্যাকারী। মুসলিমদের দাস ছাড়া কিছুই মনে করে না। জাতিসংঘের পুনর্বাসন খেলায় আনন্দে গদ গদ হওয়ার কিছু নেই। এটা তাদের পরাশক্তির লড়াই, আন্তরিক সমাধান নয়।
লেখকের ফেসবুক পোস্ট থেকে নেয়া