আল-শাবাব

আল-শাবাবের কৌশলগত সামরিক ঘাঁটি দখল : সোমালিয়া সরকারের বিরুদ্ধে নতুন লড়াই

সম্প্রতি বিদ্রোহী গোষ্ঠী আল-শাবাব দক্ষিণ সোমালিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত সামরিক ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণের জন্য সোমালি সেনা এবং মিত্র বাহিনীর সাথে তীব্র লড়াই শুরু করেছে। এটি সরকারী কর্মকর্তা ও সামরিক সূত্রের বরাতে জানা গেছে।

ওয়ারগাধি শহরের কৌশলগত গুরুত্ব

এই লড়াইটি মধ্য শাবেল অঞ্চলের ওয়ারগাধি শহরে সংঘটিত হচ্ছে, যেখানে সোমালিয়ার সেনা, বিশেষ বাহিনী এবং গোষ্ঠীটির যোদ্ধাদের অবস্থান রয়েছে। ওয়ারগাধি শহরটি রাজধানী মোগাদিশু এবং গালমুদুগ রাজ্যের মধ্যবর্তী একটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা বন্ধ করার সুযোগ দেয়, যা আল-শাবাবকে দক্ষিণ-পশ্চিমে ২০০ কিলোমিটার (১২৪ মাইল) দূরে রাজধানী মোগাদিশুর এবং কেন্দ্রীয় গালমুদুগের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ পথ বিচ্ছিন্ন করার সুযোগ দেবে। আল-শাবাব গোষ্ঠী এই অঞ্চলটিতে তাদের সাম্প্রতিক সাফল্যগুলো বিস্তার করার চেষ্টা করছে।

সোমালিয়ায় আল-শাবাবের হামলার পর তুরস্কের সেনা মোতায়েন দ্বিগুণ

আল-শাবাবের অভিযানের প্রস্তুতি

আল-শাবাব দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে সোমালি সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে, তাদের প্রধান লক্ষ্য থাকে সরকারি কর্মকর্তা এবং সামরিক কর্মকর্তারা। যদিও বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি তাদের কার্যক্রমের সাফল্য দাবি করেছে। কিন্তু সরকার এই দাবি অস্বীকার করেছে।

সোমালিয়ার তথ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, বৃহস্পতিবার সকালে আল-শাবাব বাহিনী ঘাঁটিতে আক্রমণ করলে সরকারী বাহিনী ৪০ জনেরও বেশি লোককে হত্যা করেছে।

তবে সেনা কর্মকর্তা হুসেইন আলী রয়টার্সকে জানিয়েছেন যে প্রচণ্ড লড়াই-এর পর বিদ্রোহীরা শহরটি দখল করতে সক্ষম হয়েছে। তিনি জানান, সরকারী বাহিনী ১২ জনকে হারিয়েছে, যাদের বেশিরভাগই গোষ্ঠী যোদ্ধা। প্রাথমিক লড়াইয়ে প্রায় ২০ জন বিদ্রোহীদের যোদ্ধাও নিহত হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত তারা শহরটি দখলে নিতে সক্ষম হয়।

তুরস্কসমর্থিত সোমালিয়া ইথিওপিয়া চুক্তির নেপথ্য কূটনীতি ও ভূরাজনীতি

বাহিনীর লড়াই ও পুনর্দখল অভিযান

সোমালিয়া সরকারের বাহিনী বিমান হামলার সহায়তায় দুপুর নাগাদ শহরের কিছু অংশ পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়। যদিও উভয় পক্ষের দাবিগুলো স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। তবে সেনা কর্মকর্তাদের মতে, যুদ্ধটি এখনও চলমান এবং পরিস্থিতি অস্থিতিশীল।

আল-শাবাবের চলমান আক্রমণ এবং আন্তর্জাতিক সহায়তার অনিশ্চয়তা

গত সপ্তাহে আল-শাবাব দাবি করেছে যে তারা মোগাদিশু থেকে প্রায় ২২০ কিলোমিটার (১৩০ মাইল) উত্তরে অবস্থিত আদান ইয়াবালের শহর এবং লজিস্টিক হাব দখল করেছে। তবে আদান ইয়াবালের সামরিক কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন হুসেইন ওলো এই দাবি অস্বীকার করেছেন এবং জানিয়েছেন যে সরকারি বাহিনী তাদের পিছনে ঠেলে দিয়েছে।

এই দুই আক্রমণই বিদ্রোহী গোষ্ঠীটির সাম্প্রতিক আক্রমণের অংশ। তারা মোগাদিশুর ৫০ কিলোমিটার (৩০ মাইল) মধ্যে কিছু গ্রাম সংক্ষেপে দখল করে। তবে সোমালিয়ার বাহিনী সেই গ্রামগুলি পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। এখন বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি গ্রামাঞ্চলে অগ্রসর হতে থাকলেও সোমালিয়ায় আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সহায়তার ভবিষ্যৎ ক্রমশ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

মার্কিন চাপে সোমালিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে বরখাস্ত

সোমালিয়ার সমর্থনে বৃহত্তর বাহিনী

ফেব্রুয়ারিতে আফ্রিকান ইউনিয়ন শান্তিরক্ষা মিশন, সোমালিয়ায় AU সমর্থন ও স্থিতিশীলতা মিশন নামে একটি বৃহত্তর বাহিনীর স্থলাভিষিক্ত হয়েছে। কিন্তু এর অর্থায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘের অর্থায়ন মডেলে রূপান্তরের বিরোধিতা করে আসছে, যা এই মিশনের কার্যক্রমে প্রভাব ফেলতে পারে।

আল-শাবাবের চলমান আক্রমণ এবং সোমালিয়ার সেনাবাহিনীর প্রতিরোধ এক নতুন অধ্যায় সৃষ্টি করেছে, যা সোমালিয়ার জন্য বড় ধরনের নিরাপত্তা সংকট তৈরি করতে পারে। দেশের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা এবং আন্তর্জাতিক সহায়তার অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ এই সংঘাতকে আরও জটিল করে তুলেছে।

সূত্র : আল জাজিরা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Scroll to Top