ইমামোগলুর গ্রেফতার : কোন পথে এগোচ্ছে এরদোগানের রাজনীতি

 

দুর্নীতির অভিযোগে ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুর গ্রেফতার দেশ-বিদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। কয়েক মাস ধরে তুর্কি সাংবাদিকরা তার বিরুদ্ধে তদন্তের গুজব শুনে আসছিলেন। তবে অনেকে বিশ্বাস করেননি যে সরকার এত বড় পদক্ষেপ নেবে।

মাত্র এক বছর আগে ৫১ শতাংশ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হওয়া ইমামোগলুকে প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যিব এরদোগানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখা হয়। সোমবার প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি) তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য তাদের প্রার্থী মনোনীত করে। তবে তার গ্রেফতার রাজনৈতিক সমীকরণ বদলে দিয়েছে এবং স্পষ্ট করছে যে এরদোগানের বিরোধিতা করলে যে কেউ কারাদণ্ডের ঝুঁকিতে পড়তে পারেন।

যদিও তুরস্কে দুর্নীতি দীর্ঘদিনের সমস্যা, বিরোধী রাজনীতিবিদদের টার্গেট করে সরকার যে পদক্ষেপ নিচ্ছে, তা প্রকৃতপক্ষে ন্যায়বিচারের চেয়ে রাজনৈতিক পুনর্গঠনের কৌশল বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।

ইমামোগলুর গ্রেফতার আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। বিরোধীরা এটিকে ‘বেসামরিক অভ্যুত্থান’ এবং গণতন্ত্র ধ্বংসের ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন। দ্য ইকোনমিস্ট তুরস্ককে ‘নগ্ন স্বৈরশাসন’ হিসেবে অভিহিত করেছে।

অর্থনৈতিক ক্ষতিও গভীর। মাত্র তিন দিনে ইস্তাম্বুল স্টক এক্সচেঞ্জে ১৬ শতাংশ পতন ঘটেছে, আর লিরার স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০ বিলিয়ন ডলার খরচ করতে বাধ্য হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা নড়বড়ে হয়ে যাওয়ায় সরকার জরুরি বাজার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিচ্ছে।

আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি এরদোগানের অনুকূলে। ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে যুক্তরাষ্ট্র গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ উপেক্ষা করছে এবং ইমামোগলুর গ্রেফতারের ব্যাপারে নিষ্ক্রিয় থেকেছে। ইউরোপের ভূ-রাজনৈতিক প্রয়োজনের কারণে পশ্চিমা শক্তিগুলোও এরদোগানকে চ্যালেঞ্জ করতে পিছপা রয়েছে। পাশাপাশি, সিরিয়ায় সামরিক সাফল্য তার অভ্যন্তরীণ জনপ্রিয়তা আরো বৃদ্ধি করেছে।

বিরোধী জোট, যারা একসময় ইমামোগলুকে সমর্থন করেছিল, এখন বিভক্তির ইঙ্গিত দিচ্ছে। কুর্দি ভোটারদের সমর্থন ছিল গুরুত্বপূর্ণ। তবে পিকেকে ও সরকারের মধ্যে সাম্প্রতিক সংলাপের ফলে কুর্দিপন্থী ডেম পার্টি (ডিইএম) দ্বিধায় পড়েছে। ইমামোগলুর সমর্থকরা প্রতিবাদে অংশ নিলেও ডিইএম পার্টির সদস্যরা নওরোজ উদযাপনে মনোযোগ দিয়েছে, যা সরকারের বিরুদ্ধে সরাসরি আন্দোলনে তাদের অনাগ্রহ প্রকাশ করে।

পরবর্তী নির্বাচনের এখনো তিন বছর বাকি, তাই এরদোগান বাজি ধরছেন যে অর্থনৈতিক ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব এবং জনগণের ক্ষোভ সময়ের সাথে ম্লান হয়ে যাবে। তিনি বিরোধী দলকে দুর্বল করার কৌশল নিয়ে এগোচ্ছেন, যাতে পরবর্তী বড় রাজনৈতিক লড়াইয়ের আগে তার অবস্থান শক্তিশালী হয়।

সিএইচপি আরো সংকটে রয়েছে। দলীয় প্রধান ওজগুর ওজেলের বিরুদ্ধে নির্বাচনী জালিয়াতির অভিযোগ এনে তার অপসারণের চেষ্টা চলছে। অন্যদিকে, ইমামোগলুর বিরুদ্ধে সন্ত্রাস-সম্পর্কিত অভিযোগ আনলে সরকার ইস্তাম্বুল পৌরসভায় একজন ট্রাস্টি নিয়োগ করতে পারে।

সংক্ষেপে, এরদোগান ২০২৪ সালের স্থানীয় নির্বাচনে বিজয়ী বিরোধী দলকে দুর্বল করে ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে শক্তিশালী অবস্থানে থাকতে চান।

সূত্র : মিডল ইস্ট আই

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Scroll to Top