সৈয়দ মূসা রেজা
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলায় ক্ষোভে ফুঁসছে ইয়েমেন। দেশটির প্রভাবশালী রাজনৈতিক শক্তি আনসারুল্লাহ ঘোষণা করেছে, আমেরিকার এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ আগ্রাসনের দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয়ার জন্য তারা ইরানের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে।
ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য মোহাম্মাদ আল-বোখাইতি তাসনিম বার্তা সংস্থাকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা ইরানের পক্ষ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই আগ্রাসনের জবাব দেয়ার সময় নির্ধারণ করে দেয়ার অপেক্ষায় আছি।’ তিনি বলেন, ‘আমেরিকা এবং ইসরাইল কখনোই ফিলিস্তিন, ইয়েমেন এবং ইরানের জাতির অদম্য ইচ্ছাশক্তিকে পরাজিত করতে পারবে না।’
আল-বোখাইতি স্পষ্ট ভাষায় জানান, এই আগ্রাসনের জবাবে প্রতিরোধ জোটের বা অ্যাক্সিস অব রেজিস্ট্যান্স-এর সাথে আমরা সমন্বয় করে চলছি। তিনি বলেন, ‘আমরা সক্রিয়ভাবে কাজ করছি এবং প্রয়োজনমতো প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।’
তিনি ইসরাইলের অস্তিত্ব প্রসঙ্গে বলেন, ‘ইসরাইলের অস্তিত্বের সঙ্কটের একমাত্র সমাধান হলো তেল আবিবের পুরোপুরি ধ্বংস।’ এই বক্তব্যে মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিরোধকামী শক্তিগুলোর মধ্যে একটি সুস্পষ্ট ঐক্যের বার্তাও উঠে এসেছে।
ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ এই ঘটনায় শুধু নিন্দা জানানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। বরং সরাসরি ঘোষণা করেছে, তারা নিছক কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া নয়; বরং কার্যকর জবাবের অপেক্ষায় রয়েছে। এই ঘোষণায় ইঙ্গিত মিলেছে যে ইরানের পক্ষ থেকে সঙ্কেত পেলেই প্রতিরোধ জোটের বিভিন্ন অংশ একযোগে প্রতিক্রিয়ায় নামতে শুরু করবে।
ইরান, ইরাক, সিরিয়া, লেবানন, ফিলিস্তিন এবং ইয়েমেন এই ছয়টি অঞ্চলকে ঘিরে যে প্রতিরোধ বলয় গড়ে উঠেছে, তা এখন এক শক্তিশালী আঞ্চলিক বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে। মার্কিন হামলার জেরে এই বলয়ের প্রতিটি অংশ আরো দৃঢ় অবস্থানে যাচ্ছে বলেই ধারণা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।
আল-বোখাইতির বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, প্রতিক্রিয়া শুধু মৌখিক হবে না। বরং সময় মতো তা সঙ্ঘাতমূলক জবাবের রূপ নিতে পারে। এখন দৃষ্টি ইরানের দিকে। কবে, কিভাবে এবং কোথায় এই আগ্রাসনের জবাব দিতে হবে তেহরান তা নির্ধারণ করলেই গোটা প্রতিরোধ জোট নড়েচড়ে বসবে।
ইরান যদি সিদ্ধান্ত নেয় সামরিক জবাব দেয়ার, তাহলে ইয়েমেনসহ অন্যান্য অংশীদাররা তাদের নিজ নিজ কৌশল অনুসারে একযোগে মাঠে নামবে, এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইয়েমেনের এই ঘোষণা।
সার্বিকভাবে, এই বক্তব্য মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের পূর্বাভাস দিচ্ছে। এই ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের মুখোমুখি হচ্ছে একটি সমন্বিত প্রতিরোধ ফ্রন্ট। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।