টুডেনিউজ ডেস্ক
ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে চতুর্থ দিনের মতো চলমান সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যের তেল ও গ্যাস সমৃদ্ধ অঞ্চলে ব্যাপক অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে, যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এই সংঘাত পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে পরিণত হলে তা জ্বালানি বাজার, মুদ্রাস্ফীতি, বাণিজ্যিক আকাশপথ এবং শেয়ারবাজারে দীর্ঘমেয়াদি ধাক্কা দিতে পারে।
তেলের বাজারে অস্থিরতা
সোমবার ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ৭৪.৬০ ডলারে পৌঁছেছে, যা বৃহস্পতিবারের তুলনায় ৭ শতাংশ বেশি। হরমুজ প্রণালী, যা প্রতিদিন প্রায় ২.১ কোটি ব্যারেল তেল পরিবহন করে, সেটি বন্ধ হওয়ার আশঙ্কাও তেলের দামে এই ঊর্ধ্বগতি ডেকে আনে। ইরানের সংসদ সদস্য ইসমাইল কোসারি ইঙ্গিত দিয়েছেন, সংঘাত তীব্র হলে তেহরান প্রণালী বন্ধের কথা বিবেচনা করবে।
গোল্ডম্যান শ্যাক্স পূর্বাভাস দিয়েছে, হরমুজ অবরোধ হলে তেলের দাম ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। তবে বিশ্লেষক হামজেহ আল গাওদ বলেছেন, এমন পদক্ষেপ তেহরানের জন্যই ক্ষতিকর হতে পারে। কারণ এতে তার চীনে রপ্তানি ব্যাহত হবে।
মুদ্রাস্ফীতি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উপর প্রভাব
তেলের দামে এই বৃদ্ধির ফলে উৎপাদন খরচ বাড়বে এবং তা সরাসরি ভোক্তাদের উপর প্রভাব ফেলবে। বিশেষ করে খাদ্য, পোশাক ও রাসায়নিক পণ্যের দাম বাড়তে পারে।
জি৭ দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সুদের হার কমানোর প্রক্রিয়ায় থাকলেও জ্বালানির দামের ঊর্ধ্বগতি তাদের নীতিনির্ধারণে জটিলতা তৈরি করছে। যুক্তরাজ্য ইতিমধ্যেই তাদের বেস সুদের হার ৪.২৫ শতাংশে নামিয়েছে, অন্যদিকে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ হার কমানোর সিদ্ধান্ত স্থগিত রেখেছে।
ইরান যুদ্ধ : ইসরাইল কি যুক্তরাষ্ট্রের হিসাব-নিকাশ জটিল করে তুলেছে
ইরানের গোয়েন্দা ব্যর্থতা এত তীব্র কেন?
ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যর্থ কেন
বাজারের প্রতিক্রিয়া
শুক্রবার এসএন্ডপি ৫০০ এবং নাসডাক কম্পোজিট সূচক যথাক্রমে ১.১ ও ১.৩ শতাংশ কমেছে। মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে আরও তীব্র পতন দেখা গেছে—মিশরের ইজিইএক্স ৩০ সূচক ৭.৭ শতাংশ কমেছে, তেল আবিব স্টক এক্সচেঞ্জ সূচক কমেছে ১.৫ শতাংশ।
ইউরোপের শেয়ারবাজারগুলিও পতনের মুখ দেখেছে, তবে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা ও তেল কোম্পানিগুলোর কিছু শেয়ারমূল্য বেড়েছে। BAE সিস্টেমস ৩ শতাংশ, BP প্রায় ২ শতাংশ এবং শেল ১ শতাংশের বেশি বেড়েছে। সামরিক সরবরাহকারী লকহিড, নর্থরোপ গ্রুম্যান এবং RTX-ও মার্কিন বাজারে লাভ করেছে।
এদিকে, সোনার দামও শুক্রবার প্রায় ১ শতাংশ বেড়ে প্রতি আউন্স ৩,৪২৬ ডলারে পৌঁছেছে, যা এপ্রিলে রেকর্ড ৩,৫০০ ডলারের কাছাকাছি। তবে সোমবার বাজারে কিছুটা স্থিতিশীলতা ফিরে আসে।
বিমান খাতে বিপর্যয়
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে ইরাক, ইরান, লেবানন ও জর্ডান তাদের আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে, ফলে একাধিক ফ্লাইট বাতিল বা স্থগিত হয়েছে। এমিরেটস, এতিহাদ ও কাতার এয়ারওয়েজ একাধিক গন্তব্যে ফ্লাইট বাতিল করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদিও এই ব্যাঘাত অস্থায়ী হতে পারে এবং পর্যটন এক মাসের মধ্যে ঘুরে দাঁড়াতে পারে, তবে আকাশপথে চলাচল বর্তমানে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হয়েছে।
বিশ্লেষক আল গাওদ মনে করছেন, “যতক্ষণ সংঘাত নিয়ন্ত্রণে থাকবে, ততক্ষণ বাজার স্থিতিশীল থাকতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ হলো, ইরান এখনও পর্যন্ত কোনো মার্কিন সামরিক স্থাপনায় হামলা করেনি।” তবে এই উত্তেজনা অব্যাহত থাকলে বিশ্ব অর্থনীতির জন্য তা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।
সূত্র : আল জাজিরা
ইসরাইলের বিরুদ্ধে সঙ্ঘাতে ইরানের সামনে কী কী বিকল্প আছে
ইরান কিভাবে ইসরাইলি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিতে সক্ষম হয়েছিল
ইরান-ইসরাইল উত্তেজনার মধ্যে দক্ষিণ চীন সাগর থেকে মধ্যপ্রাচ্যে যাচ্ছে মার্কিন রণতরী