ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর মার্কিন বিমান হামলার জবাবে রবিবার সকালে ইরান সরাসরি ইসরাইলের দিকে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এই হামলা ইরান-ইসরাইল সংঘর্ষকে আরো গভীর ও বিস্তৃত করেছে, যা ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি জড়িয়ে ফেলেছে।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানায়, রবিবার সকালে ইরান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শনাক্তের পর উত্তর ও মধ্য ইসরাইলের বিস্তীর্ণ এলাকায় বিমান হামলার সতর্কতা সাইরেন বাজানো হয়। ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম ইসরাইল হায়োম জানায়, প্রায় ৩০টি ক্ষেপণাস্ত্র এই হামলায় ব্যবহার হয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
আর্মি রেডিও জানায়, সাইরেন সক্রিয় হওয়ার আগেই হাইফা শহরে একটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। এছাড়া চ্যানেল ১২ নিশ্চিত করেছে, পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত ইসরাইল আকাশসীমা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ইয়েদিওথ আহরোনোথ জানায়, ইসরাইলি সেনাবাহিনী লেবানন সীমান্তে হিজবুল্লাহর সম্ভাব্য আক্রমণ ঠেকাতে সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছে। একইসাথে তেল আবিব থেকে জানানো হয়, ইরানি হামলার প্রেক্ষিতে দেশের বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থা সম্পূর্ণ প্রস্তুত অবস্থানে রয়েছে।
এর আগে রবিবার ভোরে, মার্কিন বাহিনী ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনা ফোরডো, নাতানজ এবং ইসফাহানে নির্ভুল বিমান হামলা চালায়। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই হামলাকে শক্তিশালী ও ঐতিহাসিক বলে অভিহিত করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সাহসী সিদ্ধান্তের জন্য প্রশংসা জানান।
নেতানিয়াহু বলেন, “আমি এমন একটি কাজ করেছি, যা পৃথিবীর অন্য কোনও দেশ করতে পারেনি।” তিনি যুক্তরাষ্ট্রের হামলার প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে বলেন, এটি শুধু ইসরাইলের নয়, পুরো বিশ্বের জন্য একটি নিরাপত্তামূলক পদক্ষেপ।
ইসরাইলি সূত্র জানায়, হামলার পর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ মূল্যায়নের জন্য স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ চলছে। বিশেষ করে ফোরডো স্থাপনাটি ধ্বংস না হওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ বলে মনে করা হচ্ছে। নাতানজ কেন্দ্রেও “নির্ভুল হামলা” হয়েছে বলে দাবি করা হয়।
ইসরাইলি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ বলেন, “আজ সকালে পৃথিবী আরও নিরাপদ ও ভালো হয়েছে।” তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, যুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি এবং জনগণকে সকল সরকারি নির্দেশনা মেনে চলতে হবে।
১৩ জুন থেকে ইসরাইল যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় ইরানের সামরিক ও পরমাণু স্থাপনাগুলোর বিরুদ্ধে একাধিক হামলা চালাচ্ছে। এর জবাবে ইরান ড্রোন ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। এই পরিস্থিতিকে সাম্প্রতিক ইতিহাসে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সবচেয়ে বড় সরাসরি সংঘর্ষ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই হামলা মধ্যপ্রাচ্যের কৌশলগত ভারসাম্যকে মারাত্মকভাবে নাড়িয়ে দিয়েছে এবং পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র আলোচনাকে অনিশ্চয়তার মুখে ফেলেছে।
সূত্র : আল-জাজিরা।