মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন যে ইরান ও ইসরাইল একটি পূর্ণ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে, যা আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কার্যকর হবে। তবে এই ঘোষণা এমন এক সময় এলো, যখন মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে উত্তেজনা চরমে এবং ইরান কাতারে অবস্থিত মার্কিন আল উদেইদ বিমান ঘাঁটিতে অভূতপূর্ব ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে।
ট্রাম্প তার ঘোষণায় বলেন, ‘আমি উভয় দেশ ইসরাইল ও ইরানকে অভিনন্দন জানাতে চাই যে তারা ১২ দিনের এই যুদ্ধের অবসান ঘটাতে পেরেছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘এই যুদ্ধ বছরের পর বছর ধরে চলতে পারত এবং সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যকে ধ্বংস করে দিতে পারত। কিন্তু তা হয়নি এবং কখনো হবে না! ইসরাইল, ইরান, মধ্যপ্রাচ্য, আমেরিকা ও বিশ্বের প্রতি আল্লাহ দয়া করেন!’
তবে এই ঘোষণার পরপরই একটি গুরুত্বপূর্ণ বাস্তবতা সামনে আসে। ইসরাইল বা ইরান কেউই আনুষ্ঠানিকভাবে এই যুদ্ধবিরতির বিষয়টি নিশ্চিত করেনি। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এতে পরিস্থিতি শান্ত হয়েছে বলা যায় না।
মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষক ওমর রহমান আল জাজিরাকে বলেন, ট্রাম্পের ঘোষণায় গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য অনুপস্থিত, বিশেষ করে যুদ্ধবিরতির পর আলোচনা হবে কিনা তা স্পষ্ট নয়। তিনি আরো বলেন, অতীতেও ইসরাইল কূটনীতির প্রতিশ্রুতির বিপরীতে হঠাৎ সামরিক অভিযান চালিয়েছে, যেমন ঘটেছিল কয়েক ঘণ্টা আগেই যখন ইসরাইল ইরানে বড় আকারের বিমান হামলা চালায়।
এই হামলায় ইরানের কয়েকজন জেনারেল নিহত হন, আর লক্ষ্যবস্তু ছিল পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি। ইরান এই হামলাকে জাতিসঙ্ঘ সনদের লঙ্ঘন বলে অভিহিত করে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মাধ্যমে ইসরাইলের অভ্যন্তরে ধ্বংসাত্মক জবাব দেয়।
এছাড়া শনিবার ট্রাম্প তিনটি ইরানি পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলার অনুমোদন দেন, যা ইরানের পক্ষ থেকে কাতারে আল উদেইদ ঘাঁটিতে পাল্টা হামলার কারণ হয়।
আল জাজিরা মিডিয়া ইনস্টিটিউটের গবেষক লিকা মাকি বলেন, এই হামলাগুলো আমেরিকার সামরিক অর্জনকে রাজনৈতিক চুক্তিতে রূপ দেয়ার একটি কৌশল হতে পারে। তবে তিনি সতর্ক করে দেন যে ইরানের হাতে এখনো উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিগত জ্ঞান রয়েছে, যা ভবিষ্যতে পারমাণবিক কর্মসূচি পুনরায় শুরু করার সুযোগ দিতে পারে।
তিনি বলেন, ‘ইরান দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে পরিদর্শন ছাড়াই বোমা তৈরির সক্ষমতা অর্জন করতে পারে।’ যদিও ইরান বরাবরই বলে আসছে যে তারা পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণে আগ্রহী নয়। তবুও ইসরাইলের অঘোষিত পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডারের প্রসঙ্গ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বারবার আলোচনায় এসেছে।
এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি ইসরাইল ও ইরানের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে। যদিও ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন, বাস্তবে তা কতটা কার্যকর হবে এবং দীর্ঘস্থায়ী শান্তির পথে এটি কোনো ফল আনবে কি না—তা সময়ই বলবে।
সূত্র : আল জাজিরা