হিজবুল্লাহ, ইরান, ইসরাইল

ইরান-ইসরাইল যুদ্ধে হিজবুল্লাহর ভূমিকা কী

টুডেনিউজ ডেস্ক

২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ইসরাইল লেবাননের রাজধানী বৈরুতের দাহিয়েহ এলাকায় বোমা হামলা শুরু করলে বহু মানুষ এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। এরই মধ্যে ফাতিমা কান্দিল নামের এক লেবানিজ নারী দক্ষিণ উপকণ্ঠের নিজ বাড়ি ছেড়ে ইরাকে আশ্রয় নেন। কয়েক মাস পর তিনি লেবানে ফিরে এলেও আবারও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে—এইবার সরাসরি ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে সামরিক হামলার মাধ্যমে। তবে এবারে হিজবুল্লাহ সরাসরি সংঘাতে জড়ায়নি।

ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে সাম্প্রতিক আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের মধ্যে হিজবুল্লাহ এখনো নিষ্ক্রিয় থাকায় নানা প্রশ্ন উঠেছে। হিজবুল্লাহ কেবলমাত্র ইসরাইলের ইরানে চালানো হামলার নিন্দা এবং নিহত আইআরজিসি কর্মকর্তাদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এতে হিজবুল্লাহর সরাসরি অংশগ্রহণের কোনো ইঙ্গিত নেই।

লেবাননের রাজনৈতিক বিশ্লেষক কাসেম কাসির বলেন, “বর্তমানে হিজবুল্লাহর হস্তক্ষেপের প্রয়োজন নেই, কারণ ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রই ইসরাইলের মোকাবিলা করতে পারছে। তবে পরিস্থিতি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে রূপ নিলে হিজবুল্লাহও জড়াতে পারে।”

১৯৮২ সালে ইরানের সহায়তায় গঠিত হিজবুল্লাহ মূলত শিয়া জনগোষ্ঠীর সমর্থনপুষ্ট। গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর ২০২৩ সালের অক্টোবরে তারা ইসরাইলের দিকে রকেট ছোড়ে। এরপর ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ইসরাইলি হামলায় দক্ষিণ লেবাননের শিয়া অধ্যুষিত এলাকাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং প্রায় ৪,০০০ বেসামরিক ব্যক্তি ও যোদ্ধা নিহত হন।

বর্তমানে হিজবুল্লাহর অগ্রাধিকার হলো ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর পুনর্গঠন, তবে তাদের সামরিক অস্ত্রাগারের একটি বড় অংশ ধ্বংস হয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রসহ কিছু অস্ত্র মজুত রয়েছে, বিশ্লেষক করিম সাফিদ্দীনের মতে, বর্তমান সংঘাতে হিজবুল্লাহর নিষ্ক্রিয়তা তাদের সক্ষমতা হ্রাসের ইঙ্গিতও হতে পারে।

ইসরাইলের সাম্প্রতিক অভিযান শুধু হিজবুল্লাহর সামরিক শাখাই নয়, রাজনৈতিক নেতৃত্বকেও দুর্বল করে তুলেছে। হাসান নাসরুল্লাহসহ অনেক সিনিয়র কমান্ডার ইসরাইলি হামলায় নিহত হয়েছেন। একইসাথে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের চাপে লেবাননের রাষ্ট্র হিজবুল্লাহর রাজনৈতিক আধিপত্য চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।

অন্যদিকে, ইরানও হিজবুল্লাহকে তাদের ভান্ডারের আরও শক্তিশালী অস্ত্র ব্যবহারে বাধা দিয়েছে বলে জানা গেছে। বিশ্লেষকদের মতে, তেহরান ইসরাইলি প্রতিক্রিয়ার ভয়েই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আটলান্টিক কাউন্সিলের সিনিয়র ফেলো নিকোলাস ব্লানফোর্ড বলেন, “দেশীয় রাজনৈতিক বাস্তবতা হিজবুল্লাহর জন্য ইরানের প্রতিশোধে অংশগ্রহণ কঠিন করে তুলেছে, এবং ইরানিরাও তা বুঝে।”

যদিও হিজবুল্লাহকে সাধারণত ইরানি প্রক্সি বলা হয়, অনেক বিশ্লেষকের মতে, এটি আসলে ইরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র যাদের স্বার্থ ও মতাদর্শ এক। লেবাননে ইসরাইলের দখলে থাকা পাঁচটি এলাকা এখনো মুক্ত হয়নি। এতে হিজবুল্লাহর মধ্যে ইরান নিয়ে হতাশাও জন্মেছে।

তবে এখনো পর্যন্ত ইরান হিজবুল্লাহকে সংঘাতে সম্পৃক্ত হওয়ার কোনো আহ্বান জানায়নি। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যদি পুরো অঞ্চলজুড়ে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে, তবে হিজবুল্লাহর ভূমিকা বদলে যেতে পারে।

ব্লানফোর্ডের মতে, “আমি মনে করি না হিজবুল্লাহ পুরো মাত্রায় যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়বে। তবে ব্লু লাইন বরাবর সীমান্তে উত্তেজনা তৈরি হতে পারে এবং ইসরাইলি অধিকৃত এলাকায় হিজবুল্লাহ অভিযান চালানোর চেষ্টা করতে পারে।”

লেবাননের জনগণের মধ্যে এই উত্তেজনা নিয়ে বিভক্ত প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। কেউ কেউ ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা দেখে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন, আবার কেউ কেউ হিজবুল্লাহর ভূমিকায় হতাশা প্রকাশ করেছেন। তবে অনেকেই চান লেবানন আবারও পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে না জড়াক।

এই মুহূর্তে, হিজবুল্লাহের অবস্থান পর্যবেক্ষণকারী ভঙ্গিতে। বিশ্লেষকদের মতে, তারা এখনো অপেক্ষা করছে এবং পরিস্থিতির ওপর সতর্ক নজর রাখছে।

সূত্র : আল জাজিরা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Scroll to Top