টুডে ডেস্ক
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের বিস্ফোরক বিমান হামলার পর এক সংক্ষিপ্ত ভাষণে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জোর দিয়ে বলেন, “এখন শান্তির সময়।” তবে সেই শান্তির আহ্বানের আড়ালেই ছিল সুস্পষ্ট হুমকি—তেহরান যদি এই হামলার জবাব দেয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র আরও বড় ও সহজ হামলা চালাবে বলে তিনি ঘোষণা করেন।
তবে এমন অবস্থায় ইরানের জন্য নিঃশব্দ থাকা খুবই কঠিন। ইরানি সরকার দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েলের যেকোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে “ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার” হুমকি দিয়ে আসছে। এখন যদি তারা কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখায়, তাহলে অভ্যন্তরীণভাবে সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতা গভীর সংকটে পড়বে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক ও সামরিক মহলে নেতৃত্বের জবাবদিহি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।
এর পাশাপাশি এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই যে, ইরান যদি সাড়া না দেয়, তাহলে ইসরায়েল ইরানের অভ্যন্তরে অভিযান বন্ধ করবে অথবা যুক্তরাষ্ট্র তার সহযোগিতা প্রত্যাহার করবে। বরং ইসরায়েলের লক্ষ্য যদি হয় ইরানের শাসকগোষ্ঠীর পতন ঘটানো, তবে চুপ করে থাকা ইরানের জন্য আরও বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে।
ইরান অতীতে সংযত প্রতিক্রিয়ার পথ বেছে নিয়েছে। যেমন ২০২০ সালে জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে মার্কিন ড্রোন হামলায় হত্যার পর ইরাকের মার্কিন ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এবারও ইরান এমন একটি প্রতীকী প্রতিক্রিয়া বেছে নিতে পারে—যা সরকারকে অভ্যন্তরীণভাবে দৃঢ়তা দেখানোর সুযোগ দেবে এবং একই সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ এড়ানোর সুযোগও রাখবে।
তবে এবারের প্রেক্ষাপট অতীতের তুলনায় অনেক বেশি বিস্ফোরক। ট্রাম্প সরাসরি ইরানের ভেতরে পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে আঘাত হেনেছেন, যা সংঘাতের নিয়মকে আমূল পাল্টে দিয়েছে। অতীতে এই ধরনের আক্রমণ সীমিত পরিসরে থাকলেও এবার তা দেশের কৌশলগত অবকাঠামোর কেন্দ্রে পৌঁছেছে।
এই পরিস্থিতিতে ইরান যেকোনো পথই বেছে নিক না কেন, উত্তেজনা বৃদ্ধির ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। পাল্টা হামলা ওয়াশিংটন ও তেলআবিবকে আরও প্রতিক্রিয়াশীল করে তুলতে পারে। আবার প্রতিক্রিয়া না দেখালেও দেশীয় রাজনৈতিক চাপ এবং বৈদেশিক আগ্রাসনের পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা থাকবে।
ফলে এখন গোটা বিশ্বের নজর তেহরানের ওপর। তারা কি শান্তির পথ বেছে নেবে, নাকি সম্মান ও বিশ্বাসযোগ্যতা রক্ষায় কোনো ধরনের সামরিক জবাব দেবে—তা মধ্যপ্রাচ্যের আগামী দিনগুলোকে গভীরভাবে প্রভাবিত করবে।
সূত্র : আল জাজিরা