টুডেনিউজবিডিডটনেট
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তির সাম্প্রতিক অগ্রগতির কেন্দ্রে রয়েছে ‘খোররামশাহর’ নামের একটি শক্তিশালী ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। এই ক্ষেপণাস্ত্র পরিবার, বিশেষত এর সর্বশেষ সংস্করণ ‘খোররামশাহর-৪’ বা ‘খায়বার’, বর্তমানে ইরানের সর্বোচ্চ পাল্লার মিসাইল হিসেবে বিবেচিত। এর পাল্লা আনুমানিক ২,০০০ কিলোমিটার। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই প্রযুক্তি কি ইরানকে দক্ষিণ ভারত মহাসাগরের ‘ডিয়েগো গার্সিয়া দ্বীপ’ মার্কিন ঘাঁটি পর্যন্ত হামলা চালাতে সক্ষম করে তুলেছে?
খোররামশাহর-৪ একাধিক উন্নত বৈশিষ্ট্যযুক্ত একটি মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (এমআরবিএম)। এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রায় ১,৫০০–১,৮০০ কেজি ওজনের বোমা বা ওয়ারহেড বহন করতে পারে। প্রয়োজন দেখা দিলে মাত্র ১৫–২০ মিনিটের মধ্যে ছোঁড়ার জন্য প্রস্তুত করা যায়। স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রজ্জ্বলেন সক্ষম তরল হাইপারগলিক জ্বালানির ব্যবহার করায় ক্ষেপণাস্ত্রটি দীর্ঘ সময় ধরে প্রস্তুত অবস্থায় থাকতে পারে।
খোররাশশাহর বায়ুমণ্ডলের বাইরে শব্দের থেকে ১৬ গুণ দ্রুত গতিতে বা মাখ-১৬ এবং বায়ুমণ্ডলের ভেতরে ৮ গুণ অর্থাৎ মাখ-৮ বেগে ছুটতে পারে। ইলেকট্রনিক জ্যামিং প্রতিরোধ এবং মধ্যপথে গতি এবং দিক পরিবর্তনের ক্ষমতা থাকায় এ ক্ষেপণাস্ত্র আরো মারাত্মক হয়ে উঠেছে।
দিয়েগো গার্সিয়া দ্বীপটি ব্রিটিশ ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের একটি সামরিক ঘাঁটি, যেটি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ইরান থেকে এই দ্বীপটির দূরত্ব প্রায় ৩,৮০০ কিলোমিটার, যা খোররামশাহর ক্ষেপণাস্ত্রের ঘোষিত পাল্লার প্রায় দ্বিগুণ। এমন অবস্থায় ‘প্রশ্ন’ দেখা দিয়েছে ইরান কি আদৌ এই দ্বীপে হামলা চালাতে সক্ষম?
ইরানের অন্যতম দৈনিক হামশাহরি-এ প্রকাশিত ইরানি এক প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞের মতে, খোররামশাহর ক্ষেপণাস্ত্র যদি বহনকারী বোমা বা ওয়ারহেডের ওজন কমিয়ে দেয়। সে জায়গায় অতিরিক্ত জ্বালানি বহন করে, তবে এর কার্যকর পাল্লা আরো বাড়ানো সম্ভব। অর্থাৎ বোমার ওজন হালকা করে দিলে ক্ষেপণাস্ত্রটি ২,০০০ কিলোমিটারের বেশি যেতে পারবে। তবে ‘এখন পর্যন্ত’ সরাসরি ৩,৮০০ কিলোমিটার দূরের ডিয়েগো গার্সিয়াকে আঘাত করার মতো ক্ষমতা খোররামশাহর ক্ষেপণাস্ত্রের নেই।
কিন্তু প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ইরান যদি ‘নৌযান’ বা সমুদ্রভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে উৎক্ষেপণ স্থানের ভৌগলিক অবস্থান এগিয়ে নেয়, তাহলে তাত্ত্বিকভাবে দিয়েগো গার্সিয়া দ্বীপে হামলা সম্ভব হতে পারে। এর মানে, সমুদ্রে মোতায়েন কোনো জাহাজ বা ভাসমান লঞ্চিং প্যাড থেকে ক্ষেপণাস্ত্রটি ছোঁড়া হলে এই দ্বীপে আঘাত হানা সম্ভব।
ইরানের এই ক্ষেপণাস্ত্র দেখিয়ে আসলে একটি কৌশলগত বার্তা দিচ্ছে। তা হলো, সরাসরি দিয়েগো গার্সিয়ায় হামলার প্রস্তুতি নেয়া হোক বা না হোক সেটা বড় কথা নয়। ইরান তার প্রতিপক্ষকে বোঝাতে চাচ্ছে, ইরান সদা প্রস্তুত এবং প্রয়োজনে সক্ষমতাও আরো বাড়াতে পারে।
প্রযুক্তিগর হিসেবে এই ধরনের হামলা এখনো সম্ভব নয়। কিন্তু ভবিষ্যতে এটি আর অসম্ভব হয়ত থাকবে না। কারণ ইরান তার ব্যালিস্টিক প্রযুক্তিতে যে গতিতে অগ্রগতি করছে, তাতে করে এই ধরনের ক্ষমতা অর্জনের পথ খোলাই রয়েছে।
খোররামশাহর ক্ষেপণাস্ত্র বর্তমানে ইরানের শক্তির প্রতীক। এই ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইসরাইল, উপসাগরীয় অঞ্চল এমনকি ইউরোপের দক্ষিণাংশ পর্যন্ত হামলা চালানো যেতে পরে। কিন্তু দিয়েগো গার্সিয়ার মতো দীর্ঘ দূরত্বের লক্ষ্যবস্তু আপাতত ইরানে এর নাগালের বাইরে।
ইরান প্রযুক্তিগতভাবে আরো উন্নতি করে এবং নতুন প্রজন্মের ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করে, অথবা ভাসমান উৎক্ষেপণ প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে পারে। তবে এই ছবিটা বদলে যেতে পারে।