ইসরাইল, যুক্তরাষ্ট্র, ইরান, ট্রাম্প, হরমুজ প্রণালী,

ইরান বলার আগেই তেল আবিব খালি করে দিলো ইসরাইলিরা

ইরানের উপর ইসরাইলের আক্রমণ এবং তার প্রতিক্রিয়ায় ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ইসরাইলের বৃহত্তম শহর তেল আবিব কার্যত জনশূন্য হয়ে পড়েছে। রবিবার বিকেলে শহরের প্রাণকেন্দ্র ইবনে গাবিরল রাস্তায় দেখা গেছে এক অস্বাভাবিক নীরবতা, যেখানে সাধারণত থাকে মানুষ ও যানবাহনের উপচে পড়া ভিড়।

ইরানের প্রতিক্রিয়ার ফলে এখনও পর্যন্ত জরুরি অবস্থা জারি রয়েছে, যা ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজের ঘোষণায় কার্যকর হয়েছে। ক্যাফে, দোকান, স্কুল এবং গণপরিবহন হয় সম্পূর্ণভাবে বন্ধ, অথবা সীমিত পরিসরে পরিচালিত হচ্ছে।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী কাটজ বলেন, ‘তেহরানের দাম্ভিক একনায়ক এখন একজন কাপুরুষ খুনি হয়ে উঠেছেন।’ তিনি হুঁশিয়ারি দেন, “তেহরানের বাসিন্দারা এর মূল্য দিতে হবে এবং শীঘ্রই।”

তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস রেক্টর এ বক্তব্যের প্রতিধ্বনি করে বলেন, ইসরাইলের যুদ্ধের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত ইরানের শাসনব্যবস্থার অবসান।

ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরাইলে এখন পর্যন্ত ১৩ জন নিহত হয়েছেন, বিপরীতে ইসরাইলের হামলায় ইরানে ৭০ জন নারী ও শিশুসহ নিহত হয়েছেন ২২০ জনেরও বেশি। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গুশ দান অঞ্চল, যেখানে তেল আবিব অবস্থিত এবং যেখানে প্রায় ৪০ লাখ মানুষ বসবাস করে।

বর্তমানে ইসরাইলি নাগরিকদের দেশ ছাড়ার অনুমতি নেই। যারা দেশের বাইরে রয়েছেন, তাদেরও ফেরার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় শত শত ইসরাইলি আহত হয়েছেন এবং প্রচুর বসতবাড়ি ধ্বংস হয়েছে।

দ্য মার্কার পত্রিকার তথ্য অনুযায়ী, সংঘাত শুরুর পর দেশজুড়ে খাদ্যসামগ্রীর ঘাটতি দেখা দিয়েছে। অনেক খুচরা দোকানে দুধ, ডিম, শাকসবজি এবং পানির বোতলের সংকট তৈরি হয়েছে।

তেল আবিবের বাসিন্দারা আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। এক তরুণ দম্পতি ইতান ও অমিত বলেন, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর প্রথমবার তাঁরা আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়েছেন। আরেকজন বাসিন্দা ড্যানিয়েল বলেন, “এই দেশে বসবাস করা খুব কঠিন।”

ফুটবল কোচ নিভ জানান, তিনি ইসরাইলের আরব সম্প্রদায়ের জন্য আশ্রয়কেন্দ্রের অভাব এবং নিরাপদ ঘরের অপ্রতুলতা নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাঁর মতে, ইরান এমন চাপ সৃষ্টি করেছে যাতে পুরো তেল আবিব খালি হয়ে গেছে।

রবিবার ভোরে দক্ষিণের শহর বাত ইয়ামে ছয়জন নিহত হন, এবং উত্তর ইসরাইলের ফিলিস্তিনি শহর তামরায় একটি পরিবারের চার সদস্য নিহত হন। দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ধ্বংস হয়েছে। ট্যাক্স অথরিটি জানিয়েছে, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এক বিলিয়ন শেকেল বা প্রায় ২৮৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।

বাত ইয়ামের মেয়র একে “বিশাল ধ্বংস” হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, “এটি যেন সিনেমার দৃশ্য — ধুলোয় ভরা রাস্তা, ধ্বংসস্তূপ, পুরো রাস্তা উধাও।”

সমালোচনার মুখে থাকা প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বাত ইয়ামে হামলার স্থান পরিদর্শন করেন এবং বলেন, “নারী, শিশু এবং নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের হত্যার জন্য ইরানকে মূল্য দিতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “আমরা একটি অস্তিত্বের যুদ্ধে আছি।”

তবে সরকারপ্রধানের আশ্রয়কেন্দ্রে লুকিয়ে থাকার কারণে অনেকেই ক্ষুব্ধ। হাদাস ক্লেইন বলেন, “একদল কাপুরুষ লুকিয়ে থাকে আর টুইট করে। শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে, ধ্বংসাবশেষে মানুষ নিখোঁজ।”

সরকার ও নেতানিয়াহুর প্রতি সাধারণ জনমত বিভক্ত। কেউ কেউ বলছেন, “সরকারের সমালোচনার সময় এখন নয়,” আবার কেউ কেউ কৌশলগত দিক নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ফুটবল কোচ নিভ বলেন, “নেতানিয়াহু এখন পর্যন্ত অসাধারণভাবে ভালো পারফর্ম করছেন।” অন্যদিকে ইতান প্রশ্ন করেন, “লক্ষ্য কী? আমরা বোমা মেরেছি, তারপর কী?”

তবে সবাই একমত যে যুদ্ধটি পূর্বের যেকোনও সময়ের তুলনায় ভয়াবহতর, এবং ইসরাইল এখন এক নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি।

সূত্র : মিডল ইস্ট আই

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Scroll to Top