ইরান, রাশিয়া, পুতিন, মস্কো,

ইরান যুদ্ধে রাশিয়ার তৎপরতায় হতাশ তেহরান

মার্কিন ও ইসরাইলি বিমান হামলার মধ্যে ইরান যখন রাশিয়া থেকে সামরিক সহায়তার প্রত্যাশা করছিল, তখন মস্কোর প্রতিক্রিয়া ছিল অনেকটাই প্রতীকী ও বাকপটু সমর্থনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইরান এখন আবিষ্কার করছে যে রাশিয়া প্রয়োজনের সময় বন্ধুদের পরিত্যাগ করে।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, মস্কো এর আগে তেহরানকে সামরিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিলেও আক্রমণ শুরু হলে তারা নিজেদের কৌশলগত স্বার্থের কথা ভেবে কার্যত নীরব থেকেছে। টাইমস পত্রিকার মতে, প্রেসিডেন্ট পুতিন মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে তার অস্পষ্ট অবস্থানের কারণে ইরানের আশাভঙ্গ ঘটিয়েছেন। তিনি ইরানের উদ্বেগকে অগ্রাধিকার না দিয়ে উত্তেজনা এড়ানোর কৌশলই বেছে নিয়েছেন।

রিচার্ড স্পেন্সারের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, পুতিনের দৃষ্টিভঙ্গি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মতোই সঙ্কীর্ণ ও স্বার্থকেন্দ্রিক। তিনি প্রায়ই অন্য দেশগুলোর স্বার্থে নিজ দৃষ্টিভঙ্গি চাপিয়ে দেন এবং সমর্থনের কথা বললেও সেটি বাস্তব পদক্ষেপে রূপ নেয় না। ইরান যেন মনে না করে যে পুতিন কখনো তাদের জন্য ঝুঁকি নেবেন।

থমাস গ্রোভ ও বোয়ান বানসেভস্কির যৌথ প্রতিবেদনে বলা হয়, বছর শুরুর দিকে পুতিন তেহরানের সম্ভাব্য নতুন প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সাথে একটি কৌশলগত অংশীদারিত্ব স্বাক্ষর করেছিলেন। কিন্তু এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলা মার্কিন ও ইসরাইলি হামলার পর এই অংশীদারিত্ব ইরানের দৃষ্টিতে অর্থহীন হয়ে পড়েছে।

মস্কোতে বৈঠকে রুশ প্রেসিডেন্ট হামলাকে ‘অযৌক্তিক’ আখ্যা দিয়ে সঙ্ঘাত থেকে বেরিয়ে আসার উপায় নিয়ে আলোচনা করার প্রস্তাব দিলেও সামরিক সহায়তা সম্পর্কে স্পষ্ট কিছু বলেননি। পুতিন শুধু বলেন, ‘এই পরিস্থিতি থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসা যায়, সে বিষয়ে একসঙ্গে ভাবার সুযোগ এটি।’

ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল আরো জানিয়েছে, ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচি, ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন ও শীর্ষ সামরিক নেতাদের ওপর পশ্চিমা হামলার মুখে পড়লেও রাশিয়া ও চীনের কাছ থেকে শুধু বিবৃতিগত সমর্থনই পেয়েছে।

ইরান অতীতে রাশিয়ার যুদ্ধ প্রচেষ্টাকে গোলাবারুদ, কামান ও ড্রোন সরবরাহের মাধ্যমে সমর্থন দিলেও এখন রাশিয়া তাদের পাশে নেই। কারণ, ইরান-রাশিয়া অংশীদারিত্বে কোনো পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি অন্তর্ভুক্ত ছিল না। বরং এটি শুধুই গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগি ও একে অপরের শত্রুকে সরাসরি সহায়তা না করার সীমিত মাত্রার ছিল।

রাশিয়া-ইরান সম্পর্ক বিশ্লেষক নিকোলাই কোজানভ বলেন, ‘ইরান চাইতে পারে, কিন্তু রাশিয়া দেবে না।’ তিনি যোগ করেন, রাশিয়া ইতিপূর্বেও ইরানকে হতাশ করেছে এবং এবারো ব্যতিক্রম নয়।

২০২৩ সালে আল-আকসা ইন্তিফাদার পর ইরান সুখোই-৩৫ যুদ্ধবিমান, এমআই-২৮ হেলিকপ্টার, এস-৪০০ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও ইয়াক-১৩০ প্রশিক্ষণ বিমান পাওয়ার চুক্তি করলেও এখন পর্যন্ত তারা শুধুমাত্র প্রশিক্ষণ বিমান পেয়েছে। উৎপাদন সমস্যা ও উপসাগরীয় দেশগুলোর কূটনৈতিক চাপে রাশিয়া সম্ভবত উন্নত প্রযুক্তি সরবরাহ থেকে বিরত থেকেছে।

আরাঘচি পুতিনের সাথে বৈঠকে নতুন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও পারমাণবিক বিদ্যুৎ সহায়তা চাইলেও কোনো প্রতিশ্রুতি পাননি। পুতিনের উত্তর ছিল, ‘আসলে বলার মতো কিছু নেই।’

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের বিশ্লেষণে বলা হয়, ইরান রাশিয়ার সর্বশেষ মিত্র যাকে মস্কো তাদের প্রয়োজনে উপেক্ষা করেছে। আগেও আর্মেনিয়া ও সিরিয়ার বেলায় একই ধরনের আচরণ করেছে রাশিয়া।

ন্যাটো-নেতৃত্বাধীন মিত্রবাহিনীর সাবেক উপদেষ্টা ফ্যাব্রিস পোটিয়ার বলেন, ‘রাশিয়া ভালো বন্ধু নয়। পুতিন প্রায়ই তার বন্ধুদের সবচেয়ে দরকারের সময় মুখ ফিরিয়ে নেন।’

সূত্র : ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল/আল জাজিরা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Scroll to Top