ইরান যুদ্ধ : ট্রাম্প-নেতানিয়াহুর সম্পর্কে ফাটলের আড়ালের গল্প

টুডেনিউজ ডেস্ক

মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনার মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মধ্যে ইরান যুদ্ধবিরতি নিয়ে একটি ‘কঠিন’ ফোনালাপ হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরাইলি সংবাদপত্র দ্য জেরুজালেম পোস্ট।

একটি সূত্রের বরাত দিয়ে সংবাদপত্রটি জানায়, ট্রাম্প ফোনালাপে নেতানিয়াহুর প্রতি উচ্চস্বরে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং ইরানে সামরিক আক্রমণ অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য চাপ দেন।

সূত্রটি আরো জানায়, ফোনালাপের সময় নেতানিয়াহু কার্যত নিশ্চুপ ছিলেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের প্রতি কেবল কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। ট্রাম্প এই যুদ্ধবিরতিকে তার ব্যক্তিগত কূটনৈতিক অর্জন হিসেবে বিবেচনা করেন এবং স্পষ্ট করে দেন, কেউ যাতে এই অর্জন ক্ষুণ্ন না করতে পারে, সেজন্য তিনি কঠোর অবস্থানে রয়েছেন।

ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, ফোনালাপে ট্রাম্প নেতানিয়াহুর প্রতি ব্যতিক্রমীভাবে কঠোর ও সরাসরি ছিলেন, যা দুই নেতার সম্পর্কের ক্ষেত্রে নজিরবিহীন ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা করেন, ১৩ জুন ইসরাইল তেহরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি নির্মূলের লক্ষ্যে যে সামরিক অভিযান শুরু করেছিল, তার পরিপ্রেক্ষিতে ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। ওয়াশিংটন এই সংঘাতে সরাসরি হস্তক্ষেপ করে ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরানের তিনটি প্রধান পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়।

তবে পরে ট্রাম্প জানান, যুদ্ধবিরতির শর্ত লঙ্ঘিত হয়েছে এবং এতে তিনি সন্তুষ্ট নন। তিনি বলেন, “ইসরাইল এবং ইরান এতদিন ধরে যুদ্ধ করছে যে তারা নিজেরাই জানে না কী করা উচিত।” পাশাপাশি তিনি জোর দিয়ে বলেন, “ইরান কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র পাবে না বা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারবে না।”

ট্রাম্প আরও বলেন, তিনি ইরানে শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন চান না, বরং পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ সমাধান চান। “আমি বিশৃঙ্খলা চাই না, আমি শান্তি চাই যত দ্রুত সম্ভব,”—এমন মন্তব্য করে তিনি জানান, ইরান একটি বুদ্ধিমান বাণিজ্য অংশীদার হতে পারে এবং তাদের তেলসম্পদ দেশটির ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট দাবি করেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলিতে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা ছিল নিখুঁত এবং নির্ধারিত লক্ষ্যবস্তু সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে। অন্যদিকে, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইরান কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র পাবে না। তিনি আরো বলেন, যদি ইরান পারমাণবিক কর্মসূচি পুনর্নির্মাণের চেষ্টা করে, তাহলে ইসরাইল তা ধ্বংস করে দেবে। তার ভাষায়, “ইসরাইল ইরানের বিরুদ্ধে একটি ঐতিহাসিক বিজয় অর্জন করেছে।”

পাল্টা প্রতিক্রিয়ায়, ইরানের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেন, তার দেশ পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আবারও আলোচনার টেবিলে ফিরতে প্রস্তুত। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “আমরা পারমাণবিক অস্ত্র চাই না, আমরা শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক শক্তির বৈধ অধিকার চাই।”

উল্লেখযোগ্যভাবে, ইসরাইল মধ্যপ্রাচ্যের একমাত্র দেশ যার পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে এবং এসব অস্ত্র আন্তর্জাতিক কোনো তত্ত্বাবধানে নেই। একইসঙ্গে তারা কয়েক দশক ধরে ফিলিস্তিন, সিরিয়া ও লেবাননের কিছু ভূখণ্ড দখল করে রেখেছে, যা অঞ্চলটিতে দীর্ঘমেয়াদি অস্থিরতার অন্যতম প্রধান কারণ বলে অনেকে মনে করেন।

সূত্র : আল জাজিরা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Scroll to Top