গাজা, ইসরাইল, ফিলিস্তিন, আমেরিকা, নেতানিয়াহু

ইসরাইলি আগ্রাসনে ৮৪ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত : জরিপ

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারির প্রথম দিক পর্যন্ত গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের চালানো নির্মূল অভিযানে প্রায় ৮৪ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রথম স্বাধীন জরিপে অনুমান করা হয়েছে। গত সপ্তাহে প্রিপ্রিন্ট সার্ভার মেডআরক্সিভ-এ প্রকাশিত গবেষণাপত্রে এই তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি নারী, শিশু অথবা ৬৫ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তি।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে অঞ্চলটিতে মৃত্যু পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করে আসছে। তারা নিয়মিতভাবে নিহতদের তালিকা প্রকাশ করে। সর্বশেষ ২৫ জুন প্রকাশিত পরিসংখ্যানে ৫৬ হাজার ২০০ জনের মৃত্যুর খবর জানানো হয়। যদিও মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান ও নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে কিছু মহলে প্রশ্ন উঠেছে, বিশেষ করে যুদ্ধকালীন সময়ে তাদের তথ্যসংগ্রহকারী চিকিৎসাকেন্দ্রগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায়।

তবে সর্বশেষ এই পরিসংখ্যান কেবল মন্ত্রণালয়ের তথ্যের উপর নির্ভর নয়। বরং এটি নির্ভর করছে একটি স্বাধীন জরিপের উপর, যেখানে মৃত্যু গণনার নতুন পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়ার সান ফ্রান্সিসকোতে অবস্থিত হিউম্যান রাইটস ডেটা অ্যানালাইসিস গ্রুপ-এর পরিসংখ্যানবিদ ও গবেষণা পরিচালক প্যাট্রিক পুলের মতে, এই নতুন হিসাব চলতি বছরের শুরুতে অন্য একটি গবেষণা দলের প্রতিবেদনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ, যারা ভিন্ন পদ্ধতিতে কাজ করেছিল।

এই স্বাধীন জরিপ পরিচালনার জন্য গবেষকরা রামাল্লাভিত্তিক প্যালেস্টাইন সেন্টার ফর পলিসি অ্যান্ড সার্ভে রিসার্চ-এর সাথে যৌথভাবে কাজ করেন। এলোমেলোভাবে বাছাইকৃত গাজার প্রতিনিধিত্বকারী ২ হাজার পরিবারের ওপর জরিপ চালানো হয়, যার মধ্যে অস্থায়ী আশ্রয় ও তাঁবুতে থাকা ব্যক্তিরাও ছিলেন।

যদিও জরিপ দল উত্তর গাজা, গাজা সিটি ও রাফায় সরাসরি প্রবেশ করতে পারেনি। তথাপি এসব অঞ্চল থেকে বাস্তুচ্যুত মানুষদের মধ্যেই জরিপ পরিচালনা করা হয়। ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪ থেকে এক সপ্তাহব্যাপী পরিচালিত এই জরিপে পরিবারের সদস্যদের সংখ্যা ৭ অক্টোবর ২০২৩-এর পর জন্ম নেয়া শিশুর সংখ্যা এবং প্রত্যেক সদস্যের বর্তমান অবস্থা জীবিত, মৃত অথবা নিখোঁজ জানতে চাওয়া হয়।

নিহতের ক্ষেত্রে অংশগ্রহণকারীদের জিজ্ঞাসা করা হয়, তারা সহিংস নাকি অহিংস কারণে মৃত্যুবরণ করেছেন।

গবেষণায় দেখা গেছে, ৫ জানুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত গাজায় ১৫ মাসে আনুমানিক ৭৫ হাজার ২০০ জন সহিংস ঘটনায় এবং ৮ হাজার ৫৪০ জন অহিংস কারণে মারা গেছেন। যদিও গবেষণার সহ-লেখক মাইকেল স্পাগাট মনে করেন, জরিপের সময়ের পর থেকে অহিংস মৃত্যুর সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। কারণ, যুদ্ধের আগে ফিলিস্তিনিদের স্বাস্থ্যসেবার অবস্থা তুলনামূলক ভালো থাকলেও দীর্ঘমেয়াদে যুদ্ধের প্রভাবে তা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বেলজিয়ামের লিউভেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মহামারীবিদ ও সহ-লেখক দেবারতি গুহ-সাপির বলেন, স্বাস্থ্যসেবার অবনতি অহিংস মৃত্যুর সংখ্যা বাড়িয়ে তুলতে পারে। দোহার ওয়েল কর্নেল মেডিসিন-কাতার-এর সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ লাইথ জামাল আবু-রাশাদ বলেন, জরিপটি ছয় মাস আগে পরিচালিত হলেও এটি এখনো অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। কারণ পরিস্থিতি আরো অবনতি হয়েছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে আমেরিকার সহায়তায় ইসরাইল গাজা উপত্যকায় আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে, যেখানে ১ লাখ ৮৬ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত বা আহত হয়েছেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো নিখোঁজ রয়েছেন ১১ হাজারেরও বেশি মানুষ, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

এদিকে, ১৮ মার্চ শেষ হওয়া দুই মাসব্যাপী যুদ্ধবিরতির পর গাজার হাসপাতালসহ গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো আরো বিধ্বস্ত হয়েছে, লাখ লাখ মানুষ গৃহহীন হয়েছেন এবং মানবিক সহায়তা প্রবাহ মারাত্মকভাবে সীমিত হয়ে পড়েছে।

সর্বশেষ এই স্বাধীন জরিপের তথ্য চলতি বছরের শুরুতে আরেক গবেষণা দলের অনুমানের সাথে মিলে যায়, যেখানে ২০২৪ সালের জুনের শেষ নাগাদ প্রায় ৬৪ হাজার ২৬০ জন সহিংস মৃত্যুর আভাস পাওয়া গিয়েছিল।

সূত্র : আল জাজিরা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Scroll to Top