ইসরাইলি সেনাবাহিনীতে ক্রমবর্ধমান ক্ষোভ: এক সপ্তাহে ছয়টি বিদ্রোহমূলক বিবৃতি

টুডেনিউজ বিডি ডটনেট

ইসরাইলি সেনাবাহিনীর বিভিন্ন বাহিনীর পক্ষ থেকে একের পর এক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দেয়া হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ছয়টি বাহিনীর পক্ষ থেকে বিবৃতির খবর পাওয়া গেছে।

সোমবার (১৪ এপ্রিল) তুর্কি সংবাদসংস্থা আনাদোলু এজেন্সির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ছয়টি আলাদা আবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন প্রায় এক হাজার বিমান বাহিনীর রিজার্ভ সদস্য। এরপরে আরো এক হাজার শিক্ষাবিদ তাদের সমর্থন জানান। পরবর্তীতে আবেদন আসে সাঁজোয়া বাহিনী, নৌবাহিনী এবং অভিজাত সামরিক ইউনিটগুলোর পক্ষ থেকেও, যার মধ্যে রয়েছে ইউনিট ৮২০০, প্যারাট্রুপার্সের ১৩তম ব্যাটালিয়ন, শালদাগ, সায়েরেত মাতকাল এবং মোরান। সাম্প্রতিক ডাক্তারদের আবেদনের আগেও সামরিক চিকিৎসকদের একটি ছোট পরিসরের আবেদন প্রচারিত হয়েছিল।

সূত্রটি আরো জানিয়েছে, গাজা থেকে বন্দীদের ফিরিয়ে আনার দাবিতে দুই শতাধিক ইসরাইলি সামরিক ডাক্তার সম্প্রতি একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। তারা স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, বন্দীদের মুক্তি নিশ্চিত করতে যদি গাজায় চলমান যুদ্ধ বন্ধ করতে হয়, তবে তা-ই করা উচিত। ইসরাইলি চ্যানেল ১৩-এর এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে তারা বলেছেন, ‘আমরা ইসরাইলি সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের রিজার্ভ ডাক্তার। বন্দীদের অবিলম্বে ফিরিয়ে আনার এবং গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ বন্ধ করার দাবি জানাচ্ছি।’

এই আবেদন ইসরাইলি সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে ক্রমবর্ধমান হতাশা এবং নীতিগত দ্বন্দ্বের প্রতিফলন হিসেবে দেখা হচ্ছে। ডাক্তাররা জানান, ‘যুদ্ধ তার ঘোষিত লক্ষ্য থেকে বহু আগেই বিচ্যুত হয়েছে।’ তারা আরো বলেন, ‘৫৫০ দিনের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধ ইতোমধ্যেই ইসরাইলের ওপর ব্যাপক ক্ষতি এনেছে। আমরা গভীর বেদনা নিয়ে লক্ষ্য করছি যে গাজায় এই যুদ্ধ আর নিরাপত্তার প্রয়োজনে নেই। বরং তা রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত স্বার্থে চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’

তারা আরো উল্লেখ করেন, গাজায় স্থল অভিযানের সময় প্রায় ৪০ জন বন্দী নিহত হয়েছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘চিকিৎসক হিসেবে আমাদের পেশাগত শপথ জীবনের পবিত্রতাকে রক্ষা করা। যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া এবং বন্দীদের অবহেলা করা এই মূল্যবোধের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।’

এই ডাক্তারদের বিবৃতিটি সাম্প্রতিক সময়ে সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন শাখা থেকে আসা বেশ কয়েকটি অভ্যন্তরীণ প্রতিবাদের ধারাবাহিক অংশ।

এই আবেদনের জবাবে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হুমকি দিয়ে বলেন, যেসব সক্রিয় সেনা এতে স্বাক্ষর করেছেন, তাদের বরখাস্ত করা হতে পারে।

উল্লেখ্য, ১৯ জানুয়ারির যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় চুক্তি ভেঙে ইসরাইল ১৮ মার্চ গাজায় নতুন করে আক্রমণ শুরু করে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় ইসরাইলি হামলায় প্রায় ৫১ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।

এছাড়া, গত নভেম্বর মাসে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এবং তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে।

গাজায় চলমান যুদ্ধের কারণে ইসরাইল বর্তমানে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার মামলার মুখোমুখিও।

সূত্র : আল জাজিরা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Scroll to Top