টুডেনিউজ বিডি ডটনেট
গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফায় ইসরাইলি সেনাবাহিনীর লাগাতার হামলায় শহরটির ৯০ শতাংশ আবাসিক এলাকা ধ্বংস হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। রোববার আনাদোলু এজেন্সির বরাত দিয়ে এই তথ্য জানানো হয়।
গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস এক বিবৃতিতে জানায়, রাফার ১২,০০০ বর্গমিটার এলাকা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। তারা এই ধ্বংসযজ্ঞকে “আধুনিক যুগের অন্যতম ভয়াবহ গণহত্যা ও জাতিগত নিধনের দৃষ্টান্ত” বলে অভিহিত করেছে।
শুধু ঘরবাড়ি নয়, শহরের প্রয়োজনীয় অবকাঠামোও বিধ্বস্ত হয়েছে। শহরের ৮৫ শতাংশ পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় সেখানে রোগবালাই ছড়ানোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। শহরের ১২টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিটিই এখন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ। এর মধ্যে রয়েছে আবু ইউসুফ আল-নাজ্জার হাসপাতাল, যেখানে ইসরাইলি বাহিনী একটি বিস্ফোরক রোবট ব্যবহার করে হামলা চালায়।
ইসরাইলি হামলায় রাফার আটটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে এবং বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোও গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শহরের ১০০টিরও বেশি মসজিদ ধ্বংস হয়েছে বা কার্যত ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
প্রায় ৬০ বর্গকিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত রাফা, গাজার মোট এলাকার প্রায় ১৬ শতাংশ। এখানে প্রায় ৩ লাখ মানুষ বাস করতেন। কিন্তু শহরের ২৪টি পানির কূপের মধ্যে ২২টি ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় এখন হাজার হাজার মানুষ বিশুদ্ধ পানির সংকটে ভুগছেন।
এছাড়া, রাফার ৩২০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা শহরটিকে কার্যত অচল ও অস্বাস্থ্যকর করে তুলেছে। মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, এই ধ্বংসের ফলে রাফা এখন “দূষিত এবং বসবাসের অযোগ্য” শহরে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, যাতে ইসরাইলের ওপর চাপ সৃষ্টি করে রাফা থেকে নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার, মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত অবকাঠামো পুনর্গঠনের জন্য একটি নিরাপদ করিডোর খোলা যায়।
তবুও, সহিংসতা বন্ধ হওয়ার কোনো ইঙ্গিত নেই। গত সপ্তাহান্তে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু গাজায় সামরিক অভিযান আরও জোরদার করার প্রতিশ্রুতি দেন, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা অব্যাহত ছিল।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় ইসরাইলি হামলায় প্রায় ৫০,৭০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
ইসরাইলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মামলা চলমান। গত নভেম্বরে আদালত ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এবং তার তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। একইসাথে, ইসরাইল বর্তমানে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও গণহত্যার অভিযোগের মুখোমুখি।
সূত্র : মিডল ইস্ট মনিটর