ইসরাইল, ইরান, পাকিস্তান, ভারত, ট্রাম্প, বেলুচিস্তান, বেলুচ,

ইসরাইলের আতঙ্ক কি ইরান-পাকিস্তান জোটকে ত্বরান্বিত করছে

২০২৪ সালের ১৬ জানুয়ারি। পাকিস্তানের কোহ-ই সাবজ গ্রামে এক বিস্ফোরণ ঘটে। এ সময় স্থানীয়রা আকাশে কিছু উড়তে দেখেন। কিছুক্ষণ পর একটি মাটির ঘর ধসে পড়ে। এতে প্রাণ হারান এক ব্যক্তি ও তার দুই সন্তান। আহত হন তার স্ত্রী ও তিন কন্যা। এ সময় একটি মসজিদেও আগুন লাগে।

পরদিন ইরান জানায়, তারা পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে জইশ আল-আদলের ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। ৪৮ ঘণ্টা পর পাকিস্তান পাল্টা হামলায় ইরানের সিস্তান-বেলুচিস্তানে দু’টি বালুচ বিদ্রোহী সংগঠনের ওপর হামলা চালায়।

এই ঘটনা দু’দেশের মধ্যে বিরল সামরিক উত্তেজনা সৃষ্টি করে। যদিও তারা পরস্পরকে লক্ষ্যবস্তু করতে চায়নি। উভয়ই জইশ আল-আদল, বেলুচ লিবারেশন আর্মি ও বেলুচিস্তান লিবারেশন ফ্রন্টকে সন্ত্রাসী বলে বিবেচনা করে। তবু একে অপরের সীমান্তে হামলা লাল রেখা অতিক্রম বলেই বিবেচিত হয়।

এরপর পাকিস্তান ইরানের সিরিয়াভিত্তিক শিয়া মিলিশিয়া জয়নাবিয়ুন ব্রিগেডের দিকে নজর দেয়। ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে তারা এটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করে।

অন্যদিকে, এই সঙ্ঘাতের মূলেই রয়েছে একটি অভিন্ন জাতিগোষ্ঠী- বেলুচরা। তারা ইরানে সংখ্যাগরিষ্ঠ শিয়া সরকারের প্রতি সাম্প্রদায়িক বৈষম্যের অভিযোগ করে আর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে উন্নয়ন বঞ্চনা ও সম্পদ শোষণের। ইরানে নেতৃত্বে জইশ আল-আদল, আর পাকিস্তানে বেলুচ লিবারেশন আর্মি ও ফ্রন্ট।

তবে দ্রুত কূটনৈতিক উদ্যোগে উত্তেজনা প্রশমিত হয়। এপ্রিলেই ইরানের প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম রাইসি ইসলামাবাদে এসে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের সাথে বৈঠক করেন। তারা সীমান্তকে যুদ্ধক্ষেত্র নয়, বাজারে পরিণত করার প্রতিশ্রুতি দেন। রাইসি সফরের ফল দেখার আগেই হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হন, যা আজও প্রশ্নের জন্ম দেয়।

এই সফরের পর দ্রুত অগ্রগতি হয়। জুলাইয়ে ইসলামাবাদ একজন জইশ আল-আদল সদস্যকে ইরানের হাতে তুলে দেয়। বিনিময়ে তেহরান এক পাকিস্তানি বেলুচ বিচ্ছিন্নতাবাদীকে ফেরত পাঠায়। নভেম্বরে যৌথ অভিযানে জইশ আল-আদের ১২ সদস্য নিহত হয়। ইরান আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার না করলেও সফলতা উদযাপন করে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, দুই দেশ এখন অভূতপূর্ব সহযোগিতার দিকে এগোচ্ছে। তবে এটি হঠাৎ সৃষ্টি হয়নি। ইতিহাসে তাদের ঘনিষ্ঠতা ছিল ১৯৪৭ সালে। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর ইরানই প্রথম স্বীকৃতি দেয়। শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভি ১৯৫০ সালে পাকিস্তান সফর করেন। পাকিস্তানের প্রথম ফার্স্ট লেডি ছিলেন এক ইরানি কূটনীতিকের কন্যা।

শীতল যুদ্ধকালে তারা বাগদাদ চুক্তির অংশ ছিল। ভারতের সমর্থনপুষ্ট বিচ্ছিন্নতাবাদ, সাদ্দাম হোসেন বা আফগানিস্তানে দাউদ খানের বিরুদ্ধে কৌশলগত সহযোগিতা করেছিল।

ইরানের ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা ও ইসরাইলি চাপ, আর পাকিস্তানের কাশ্মির ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ইস্যু এই পুরনো মিত্রতাকে আজ নতুন করে সক্রিয় হতে বাধ্য করছে। ইসরাইল-ভারত ঘনিষ্ঠতা ও চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ইরান-পাকিস্তান জোটের পুনরুত্থান হয়তো নতুন মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার জিওপলিটিক্সে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হয়ে উঠছে।

পাক-ইরান সম্পর্কের জটিল ইতিহাস : সহযোগিতা, দ্বন্দ্ব ও ভিন্নমতের সংলগ্ন পথচলা

১৯৭৭ সালে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টোর বিরুদ্ধে জেনারেল জিয়া-উল-হকের অভ্যুত্থানের পর ইসলামাবাদ ও তেহরানের সম্পর্ক কিছুটা শীতল হয়ে পড়ে। এর পেছনে একদিকে ছিল ভুট্টোর ইরানের শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভির সাথে সুসম্পর্ক-ভুট্টোর স্ত্রী নিজেও ইরানি কুর্দি বংশোদ্ভূত-অন্যদিকে জিয়ার ‘ইসলামী পুনর্জাগরণ’-ভিত্তিক শাসনযাত্রা, যা ইরানি রাজতন্ত্রের আদর্শের সাথে ছিল সাংঘর্ষিক। জিয়া-উল-হকের রক্ষণশীল ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গিকে অপছন্দ করতেন শাহ। তবে ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লব তাকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে।

পাকিস্তান দ্রুতই ইরানের নতুন ইসলামী সরকারকে স্বীকৃতি দেয়, এই আশায় যে ধর্মীয় মিল সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে সহায়ক হবে। কিন্তু খুব দ্রুতই ইসলামাবাদ বুঝতে পারে, ইরানের ইসলামী বিপ্লব তার নিজস্ব রক্ষণশীল সুন্নি ইসলামী আদর্শের চেয়ে অনেক বেশি বিপ্লবী, শিয়া-ঘনিষ্ঠ ও মার্কিনবিরোধী। পাকিস্তানে প্রায় ২০ শতাংশ শিয়া সংখ্যালঘু থাকায় শিয়াপন্থী রাজনীতির রফতানি ইসলামাবাদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

পরিস্থিতি আরো জটিল হয় ১৯৭৯ সালে সোভিয়েত আগ্রাসনের পর, যখন পাকিস্তান মার্কিন মদদে ইসলামি মুজাহিদদের সমর্থন করতে থাকে, আর ইরান পশ্চিম আফগানিস্তানের শিয়া গোষ্ঠীগুলোকে সহায়তা করে। ইরানের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল, এই সুন্নি উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলো তার সীমান্ত অস্থিতিশীল করতে পারে।

তবে ১৯৮০-এর দশকে ইরান-ইরাক যুদ্ধ চলাকালে ইসলামাবাদ আমেরিকার চাপের মুখেও ইরাককে সমর্থন দেয়নি এবং নিরপেক্ষতা বজায় রাখে। এই অবস্থান ১৯৯০-এর দশকে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কোন্নয়নে সহায়ক হয়। সাধারণভাবে দেখা যায়, পাকিস্তানে বেসামরিক সরকার থাকলে ইরানের সাথে সম্পর্ক উষ্ণ হয়; সামরিক শাসনে নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে তা আবার দুর্বল হয়।

একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত ১৯৯৫ সালে দেখা যায়, যখন আফগানিস্তানে তালেবান প্রসঙ্গে মতবিরোধ থাকা সত্ত্বেও তেহরান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোকে উষ্ণ সংবর্ধনা দেয়। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি তাকে ‘শহীদের কন্যা’ বলে আখ্যা দেন। বেনজিরের আফগান নীতিও তুলনামূলকভাবে নমনীয় ছিল; তিনি ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোর সাথে যোগাযোগ বজায় রাখতে চেয়েছিলেন, যা তার সামরিক পূর্বসূরিদের নীতির বিপরীত।

একইভাবে, ২০১৮ সালে ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ইরানের মাশহাদ শহর এবং ইমাম আলী রিজার মাজার সফর করেন, যা পাকিস্তানি শিয়াদের মধ্যে ভালো বার্তা পাঠায়। ওই সময় তিনি মন্তব্য করেন, পাকিস্তানের মাটিকে বিদেশী-সমর্থিত উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলো ইরানে হামলার জন্য ব্যবহার করছে। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে উগ্রবাদবিরোধী সহযোগিতা জরুরি। অনেকে মনে করেন, শিয়াপন্থী গোষ্ঠীর প্রতি ইমরানের কিছুটা সহানুভূতি এই বক্তব্যে প্রতিফলিত হয়।

পারমাণবিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা

পারমাণবিক কর্মসূচির ক্ষেত্রেও পাকিস্তান ও ইরানের মধ্যে কিছুটা নীরব সমর্থন ছিল। ১৯৯৮ সালে ভারতের পারমাণবিক পরীক্ষার পর পাকিস্তানও একই বছর সফলভাবে পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটায়। ইরান তখন পাকিস্তানের অবস্থানকে সমর্থন করে। ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল খারাজি ইসলামাবাদকে অভিনন্দন জানান। চার বছর পর ইরানের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ খাতামি মন্তব্য করেন, নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে চাপ পাকিস্তানের ওপর নয়, বরং ইসরাইলের ওপর থাকা উচিত।

১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকেই সন্দেহ তৈরি হয় যে ইরান পাকিস্তানি পদার্থবিদ ড. আব্দুল কাদির খানের পারমাণবিক নেটওয়ার্ক থেকে গোপনে সহায়তা পেয়েছিল। পাকিস্তান সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করে এবং তৎকালীন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাসুদ খান বলেন, ‘এই প্রতিবেদনের সত্যতা প্রশ্নবিদ্ধ। আমরা এটিকে গুরুত্ব দেই না।’

সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ ও পারস্পরিক বিচ্যুতি

নতুন সহস্রাব্দে যুক্তরাষ্ট্র ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ’ শুরু করলে মধ্যপ্রাচ্য ও মধ্য এশিয়ার জোটগত কাঠামো আমূল পাল্টে যায়। দেশগুলোকে ঘোষণা করা হয়, তারা হয় আমেরিকার সঙ্গে, নয়তো বিপক্ষে।

পাকিস্তান সরাসরি পশ্চিমা জোটের অংশ হয়ে ওঠে এবং ভারতের তুলনায় আমেরিকার ঘনিষ্ঠ কৌশলগত মিত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এ সময় তারা তালেবানদের সাথে পুরনো সম্পর্ক হারানোর ঝুঁকিও গ্রহণ করে। এতে ইরান পূর্বে (আফগানিস্তান) ও পশ্চিমে (ইরাক) মার্কিন সেনা বেষ্টিত হয়ে পড়ে। তারা আশঙ্কা করতে শুরু করে যে একদিন হয়তো তাদের বিরুদ্ধেও হামলা হতে পারে।

প্রথমদিকে আফগানিস্তান ও ইরাকে নতুন শাসনের সাথে ইরান নিরাপত্তা সহযোগিতা করলেও পরবর্তী সময়ে তারা ইরাকের শিয়া মিলিশিয়া ও তালেবানদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলে। বর্তমানে এই সম্পর্ক তালেবান-শাসিত কাবুলের সাথে ইরানের ঘনিষ্ঠতার ভিত্তি গড়ে তুলেছে।

এই সময়ই পাকিস্তান-আমেরিকা সম্পর্ক দৃঢ় হলেও ইরানের সাথে দূরত্ব বাড়তে থাকে। পাশাপাশি ১৯৮০ ও ১৯৯০-এর দশকে আপাত নিস্তেজ হয়ে পড়া বেলুচিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদ আবার জেগে ওঠে। পারভেজ মোশাররফের শাসনামলে বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি ও বেলুচিস্তান লিবারেশন ফ্রন্ট একাধিক হামলার মাধ্যমে ইসলামাবাদের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়।

ইসলামাবাদ অভিযোগ করে, ভারত এই গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন করছে এবং ইরান তাদের দমনে যথাযথ সহায়তা দিচ্ছে না। ইরান, একদিকে ভারতের সাথে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্ক রাখলেও, অন্যদিকে পাকিস্তানের কৌশলগত ভারসাম্য রক্ষারও চেষ্টা করে।

তাদের দাবি অনুযায়ী, তালেবানরা দক্ষিণ আফগানিস্তানে তাদের যোদ্ধাদের নিরাপদ আশ্রয় দিচ্ছিল। কারণ ওই সময় পাকিস্তানের সাথে তাদের সম্পর্ক খারাপ ছিল। একইসাথে তারা সুন্নি সংগঠন জুনদাল্লাহর মতো গোষ্ঠীগুলোর জন্যও জায়গা করে দেয়, যারা ইরানের সিস্তান-বেলুচিস্তান প্রদেশকে লক্ষ্যবস্তু করেছিল।

যদিও জুনদাল্লাহ বিদেশী পক্ষের সমর্থন অস্বীকার করেছিল, ২০১২ সালে মার্কিন বিশ্লেষক মার্ক পেরি ‘ফরেন পলিসি’তে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখান, কিভাবে ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ দ্বৈত নাগরিকত্ব ব্যবহার করে আমেরিকান ছদ্মবেশে এই গোষ্ঠীর সাথে কাজ করেছিল এবং তাদের সিআইএ এজেন্ট হিসেবে পরিচয় দিয়ে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতো।

সংগঠনের সাবেক নেতা আব্দুল মালিক রিকি, যাকে ২০১০ সালে ইরান ফাঁসি দেয়, এক টিভি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তাদের লক্ষ্য ছিল না ইরান থেকে বিচ্ছিন্নতা, বরং বালুচদের অধিকার আদায়ই ছিল তাদের লক্ষ্য।

রিকির মৃত্যুর পর সংগঠনের প্রভাব কমে যায় এবং জইশ আল-আদল নামে একটি নতুন দল বেরিয়ে আসে। সিরিয়ায় ইরানি হস্তক্ষেপের প্রেক্ষাপটে জইশ আল-আদল কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদী ও আইএসআইএসের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরান ও পাকিস্তানে তিনটি বেলুচ সংগঠনের কার্যক্রম বেড়েছে। ২০১৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত জইশ আল-আদল ইরানে অন্তত ৭০ জন নিরাপত্তাকর্মী হত্যা করেছে। এদিকে, বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মির (বিএলএ) হামলায় পাকিস্তানে ১০০ জনেরও বেশি নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে সাতজন চীনা নাগরিকও রয়েছেন। বেলুচিস্তান লিবারেশন ফ্রন্ট (বিএলএফ) একই সময়ে ১০০ জনের বেশি কর্মকর্তা ও ৬০ জন বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছে।

বারাক ওবামার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টি চীন ও ভারতের দিকে ঝুঁকতে থাকে। একই সময়ে, আফগানিস্তানে মার্কিন হামলায় পাকিস্তানি স্বার্থ উপেক্ষিত হওয়ায় ইসলামাবাদ ক্রমেই বিরক্ত হয়। এই প্রেক্ষাপটে ইরান ও পাকিস্তানের সম্পর্ক নতুন করে ঘনিষ্ঠ হয়, যা তালেবানের সাথেও ইরানি যোগাযোগ বাড়ার সূত্রপাত করে।

২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে ইরান কাশ্মিরে কুরআন পোড়ানোকে কেন্দ্র করে ভারতীয় দমন-পীড়নের নিন্দা জানায়। তেহরানভিত্তিক প্রেস টিভির প্রচারের জেরে দিল্লি কর্তৃপক্ষ ওই চ্যানেল নিষিদ্ধ করে। ওই বছরের হজ মৌসুমে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনি কাশ্মির, ফিলিস্তিন, গাজা, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের জনগণের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে মুসলিম বিশ্বের প্রতি মার্কিন-ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

আরব বসন্ত, ট্রাম্প প্রশাসনের উত্থান ও আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ফলে ইরান-পাকিস্তান অংশীদারত্ব আরো সম্ভাবনাময় হয়ে ওঠে। মোদির নেতৃত্বে ভারত-ইসরাইল সম্পর্ক গভীর হওয়া, উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর পাকিস্তান নিয়ে নিরপেক্ষতা এবং ওয়াশিংটনের কৌশলগত অনীহা এই ঘনিষ্ঠতাকে ত্বরান্বিত করেছে।

চীন-পাকিস্তান জোট ও মার্কিন অজ্ঞতা

শীতল যুদ্ধ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান ছিল যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক অংশীদার। ২০০২–২০১৮ সালের মধ্যে তারা প্রায় ৩৪ বিলিয়ন ডলার সহায়তা পায়, যার বড় অংশ সামরিক ব্যয়ে ব্যবহৃত হয়। ইসরাইল ও মিসরের পর পাকিস্তান ছিল তৃতীয় বৃহত্তম মার্কিন সহায়তাপ্রাপক।

কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের ক্ষমতায় আসার পর ওয়াশিংটন মনে করে, এই সহায়তা কাঙ্ক্ষিত ফল দিচ্ছে না। ২০১৮ সালে ট্রাম্প টুইট করে পাকিস্তানের নীতিকে ‘মিথ্যা ও প্রতারণামূলক’ বলে অভিহিত করেন এবং সামরিক সহায়তা স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেন।

বাইডেন প্রশাসনের সময়েও পাকিস্তানের প্রতি অবহেলা অব্যাহত থাকে। ২০১৯–২০২৪ সালের মধ্যে পাকিস্তান গড়ে বছরে মাত্র ২৬৫ মিলিয়ন ডলার মার্কিন সাহায্য পায়। বাইডেন প্রেসিডেন্সির পুরো সময় তিনি কখনো পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথাই বলেননি। এটা ইতিহাসে প্রথম। বাইডেন প্রশাসনের দৃষ্টিতে পাকিস্তান হয়ে ওঠে ‘কৌশলগতভাবে অপ্রয়োজনীয়’।

২০২৪ সালের এপ্রিলে মার্কিন সরকার পাকিস্তানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিতে ভূমিকার জন্য কয়েকটি কোম্পানি ও সরকারি সংস্থার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা সত্ত্বেও পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্র অংশীদারিত্ব পুনরুজ্জীবিত হওয়ার আশার মৃত্যু ঘটে। এপ্রিলেই ওয়াশিংটন নিষেধাজ্ঞার তালিকায় আরো ১৯টি পাকিস্তানি প্রতিষ্ঠানের নাম যোগ করে, যা এই বিচ্ছিন্নতার দিকটি চূড়ান্তভাবে নিশ্চিত করে।

চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক ও সামরিক ঘনিষ্ঠতা : নতুন কৌশলগত সমীকরণ

আন্তর্জাতিক পরিবর্তনের প্রভাবে পাকিস্তানের অর্থনীতিও ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে চীন পাকিস্তানে সর্বোচ্চ বিদেশী বিনিয়োগকারী হিসেবে উঠে এসেছে। তারা পাকিস্তানে অর্ধ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করে। এর পর হংকং ৩৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যুক্তরাজ্য ২৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং যুক্তরাষ্ট্র মাত্র ১৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। অথচ ২০২১-২২ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র ২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করে দ্বিতীয় স্থানে ছিল। এর আগের বছর তা ছিল ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের চেয়ে বেশি।

এই পতন মার্কিন বিনিয়োগের দীর্ঘমেয়াদি হ্রাসের অংশ, যা ২০১৬-২০২০ সালের গড় বার্ষিক ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের কাছাকাছি ছিল। বিপরীতে, চীনের বিনিয়োগ ২০১৪ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও আমিরাতের পরে থাকলেও ২০১৫ সাল থেকে ব্যাপক বৃদ্ধি পায়। বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ এবং সিপিইসি প্রকল্পের মাধ্যমে চীনা বিনিয়োগ ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৭০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছে। পরবর্তী দুই বছরে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যায়। এরপর থেকে চীন স্থায়ীভাবে শীর্ষ বিনিয়োগকারী হিসেবে নিজের অবস্থান ধরে রেখেছে।

সামরিক দিক থেকেও চীন-পাকিস্তান সম্পর্ক সুদৃঢ়। ১৯৫০-এর দশকে চীনকে স্বীকৃতি দেয়ার পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়, যার পেছনে ভারতবিরোধী কৌশলগত লক্ষ্য ছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের সামরিক ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতি পাকিস্তানকে বিশেষ সুবিধা দিয়েছে। ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে পাকিস্তানের সামরিক আমদানির ৮০ শতাংশের বেশি এসেছে চীন থেকে, যা তাকে প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারীতে পরিণত করেছে।

অতীতে চীন-পাকিস্তান সম্পর্ক যুক্তরাষ্ট্রের সাথে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করতো না, বিশেষত ১৯৭০-এর দশকে নিক্সন প্রশাসনের সময় এবং পরবর্তীকালে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে চীনের প্রভাব নিয়ে ওয়াশিংটনের উদ্বেগ পাকিস্তানকে একটি নতুন কৌশলগত চাপে ফেলেছে, যা তার ঐতিহ্যবাহী দুই অংশীদার ‘চীন ও যুক্তরাষ্ট্র- এর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষায় কঠিন করে তুলেছে।

ইরান সঙ্কট ও পাকিস্তানের অবস্থান

এই প্রেক্ষাপটে ২০২৫ সালের ১৯ জুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ইরানের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য যুদ্ধে অংশগ্রহণ নিয়ে আন্তর্জাতিক উত্তেজনার মধ্যেই পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির ওয়াশিংটন সফর করেন। হোয়াইট হাউসে দুই ঘণ্টার বৈঠকে মুনির ইরানি শাসনের পতনের ঝুঁকি এবং বেলুচিস্তানে জঙ্গি গোষ্ঠী বিশেষত জইশ আল-আদলের সক্রিয়তা নিয়ে উদ্বেগ জানান।

বৈঠকের পর ট্রাম্প বলেন, ‘পাকিস্তানিরা ইরানকে আমাদের চেয়েও ভালোভাবে চেনে। তারা যা ঘটছে তাতে মোটেই খুশি নয়।’ এ মন্তব্য পাকিস্তানের প্রতি ওয়াশিংটনের নতুন আগ্রহের ইঙ্গিত দেয়।

মুনির সতর্ক করেন, ইরানের পারমাণবিক প্রকল্পে হামলা একটি বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে, যা আঞ্চলিক পারমাণবিক সঙ্ঘাতকে উস্কে দিতে পারে। এই প্রসঙ্গে তিনি ১৯৮০-এর দশকে ইসরাইলের পাকিস্তানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার প্রস্তাবের কথাও স্মরণ করান, যা ভারতীয় ঘাঁটি ব্যবহার করে পরিকল্পিত হলেও বাস্তবায়িত হয়নি।

ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধেও স্পষ্ট অবস্থান

মুনিরের সফরের সমান্তরালে পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতৃত্বও ইরানের পাশে অবস্থান নিয়েছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ সংসদে বলেন, ‘ইসরাইল এখন ইরান, ইয়েমেন ও ফিলিস্তিনকে লক্ষ্যবস্তু করেছে। ইসলামী দেশগুলোর ঐক্য এখন জরুরি।’

জাতিসঙ্ঘে পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি আসিম ইফতিখার বলেন, ‘ইসরাইলি আগ্রাসন পুরো অঞ্চলের জন্য হুমকি। পাকিস্তান ইরানের জনগণের পাশে আছে এবং তাদের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন করে।’

ইসলামাবাদ এবং সকল পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি

পাকিস্তান এখনো ওয়াশিংটনের সাথে সম্পর্ক রক্ষায় আগ্রহী। বিশেষ করে দেশটির সামরিক প্রতিষ্ঠানের অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রের সাথে দীর্ঘস্থায়ী অংশীদারিত্ব বজায় রাখতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। ইরানের সাথে সম্ভাব্য সঙ্ঘাতের প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের গুরুত্ব বাড়ছে, যা ওয়াশিংটনের দৃষ্টিতে দেশটির সাথে সম্পর্ক পুনর্গঠনের সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ফলে পাকিস্তান দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের সাথেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখছে এবং মধ্যপ্রাচ্যে ওয়াশিংটনের সাথেও ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে।

পাকিস্তানের বর্তমান সেনাপ্রধান আসিম মুনির, যিনি ইমরান খানের প্রতি রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত বিদ্বেষ পোষণ করেন, এখন দেশে একজন শক্তিশালী রাজনৈতিক চরিত্রে পরিণত হয়েছেন। তিনি ঐতিহ্যগত ইসলামী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী এবং কারাবন্দি ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) আন্দোলন দমন করতে সক্রিয়। পিটিআইর যুক্তরাষ্ট্র ও উপসাগরীয় দেশগুলোর সাথে সম্পর্কও খুব একটা ভালো নয়।

ইসলামাবাদ জানে, চীনের ওপর একক নির্ভরতা অর্থনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। তাই চীন ও যুক্তরাষ্ট্র উভয় দিক থেকে বিনিয়োগ টানতে আগ্রহী। এটি পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক কৌশলের একটি অংশ।

অন্যদিকে, ওয়াশিংটনের কাছেও পাকিস্তানকে উপেক্ষা করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। কারণ, এতে এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিপক্ষরা বাড়তি সুযোগ পেতে পারে। মার্কিন বিশ্লেষকদের মতে, আগের মতো ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক পুনঃস্থাপন কঠিন হলেও পাকিস্তানে কিছু বিনিয়োগ করা যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত স্বার্থে হবে। অন্ততপক্ষে, পাকিস্তান যেন ইরান বা উত্তর কোরিয়ার মতো শত্রুতে পরিণত না হয়, সেটাই নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ। যদিও তাদের চীনের সাথে সম্পর্ক অব্যাহতই থাকে।

ভারতের জটিল অবস্থান

এ প্রেক্ষাপটে ভারত একটি জটিল কূটনৈতিক অবস্থানে পড়েছে। ঐতিহ্যগতভাবে ইরানের সাথে ভারতের সম্পর্ক দৃঢ়, বিশেষত চাবাহার বন্দর প্রকল্পে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ভারত আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ায় প্রবেশাধিকার চায়, যেখানে পাকিস্তানের ভূগোল বড় বাধা।

২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা থেকে সাময়িক অব্যাহতি পেলে ভারত ইরানের সাথে চাবাহার উন্নয়নে ১০ বছরের চুক্তি করে। তবে ট্রাম্প প্রশাসন তা বাতিল করে দেয়। অন্যদিকে, ভারত যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়ায় এসসিও বৈঠকে ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে চীনের নেতৃত্বে গৃহীত নিন্দা প্রস্তাবেও যোগ দেয়নি। এমনকি গাজায় যুদ্ধবিরতির পক্ষে জাতিসঙ্ঘ প্রস্তাবেও ভোটদানে বিরত থাকে।

এই অবস্থাকে পাকিস্তান সুযোগ হিসেবে দেখছে। ইসলামাবাদ ভারতের সাথে ইরানের সুসম্পর্ক দুর্বল করতে এবং তেহরানের সাথে নিজের সম্পর্ক আরো জোরদার করতে চায়। এতে তারা মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকিকেও উপেক্ষা করে চলছে। যেমনটা দেখা গেছে ২০১৩ সালে, যখন যুক্তরাষ্ট্রের চাপে গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্প থেকে পাকিস্তান পিছিয়ে আসে।

কৌশলগত ভারসাম্য ও ভবিষ্যতের দিকনির্দেশ

বর্তমানে পাকিস্তান ইরানের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করতে আগ্রহী, যদিও স্থলভাগে কোনো সরাসরি সহায়তা দেয়নি বা ভবিষ্যতের সঙ্ঘাতের সম্ভাবনা পুরোপুরি নাকচ করেনি। ইসলামাবাদ বোঝে, ইরানি শাসনের পতন সীমান্ত অঞ্চলে বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে পারে, বিশেষত বেলুচিস্তানে, যেখানে বালুচ বিদ্রোহে ইসরাইলি ও মার্কিন অনুপ্রবেশের অভিযোগ রয়েছে। এই অঞ্চল চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

অভ্যন্তরীণভাবে, পাকিস্তানি শিয়া সংখ্যালঘুদের ইরানের প্রতি সহানুভূতির কারণে এবং ইসরাইলবিরোধী জনমতের পটভূমিতে, ইরানি মিডিয়া পাকিস্তান সরকারের বৈধতা নিশ্চিত করতে সাহায্য করছে। ইমরান খানের পতন ও অর্থনৈতিক সঙ্কটে জনরোষের মুখে এই সমর্থন সরকারকে বাড়তি সুবিধা দিচ্ছে।

ইরান ও পাকিস্তানের মধ্যে ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ওভারল্যাপ দুই দেশের সম্পর্কের গভীরতাকে বাড়ায় এবং অস্থির সময়ে একটি কৌশলগত সম্পদে পরিণত হয়। যদিও পুরোপুরি কৌশলগত ও সামরিক জোট আপাতত নাগালের বাইরে, তবুও যুদ্ধ-পরবর্তী ভূরাজনৈতিক পুনর্গঠনের মধ্যে ইসলামাবাদ তার সব বিকল্প খোলা রাখতে চায়।

সূত্র : আল জাজিরা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Scroll to Top