ইরান, ইসরাইল, ভারত, মধ্যপ্রাচ্য,

ইসরাইল-ইরান সঙ্ঘাত : ভারতের কূটনীতির জন্য কঠিন এক পরীক্ষা

ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে সাম্প্রতিক সঙ্ঘাত ভারতের জন্য একটি কঠিন কূটনৈতিক পরীক্ষায় পরিণত হয়েছে। বরাবরের মতো সঙ্কটকালে প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষগুলোর সাথে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার নীতিতে অটল থাকার চেষ্টা করলেও এবার পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন।

গত সপ্তাহে যখন ইসরাইল ইরানের উপর হামলা চালায়, তখন ভারতের জন্য এই ভারসাম্য রক্ষা কঠিন হয়ে পড়ে। বিশেষ করে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা (এসসিও) ইরানের উপর ইসরাইলি হামলার নিন্দা করে একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করলে তাতে স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানায় ভারত। এই অবস্থান কিছুটা ইঙ্গিত দেয় যে নয়াদিল্লি তার প্রচলিত নীতির পথ থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছে।

দক্ষিণ এশিয়ার ঘটনাবলী নিয়ে বিশ্লেষণধর্মী মার্কিন ম্যাগাজিন ফরেন পলিসিতে বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান লিখেছেন, এই সিদ্ধান্তই প্রমাণ করে যে মধ্যপ্রাচ্যে উদ্ভূত নতুন সঙ্ঘাত ভারতের কূটনীতিকে গুরুতর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করবে।

কুগেলম্যান মনে করেন, কয়েক দশক ধরে ভারত কৌশলগত স্বাধীনতার ভিত্তিতে ইরান-সৌদি, ইসরাইল-ফিলিস্তিন, যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া সবার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করেছে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইউক্রেন যুদ্ধ এবং গাজার পরিস্থিতির মতো ইস্যুতে এই নীতি বজায় রাখা তাদের জন্য সহজ ছিল না। যদিও ভারত কোনো পক্ষকে চূড়ান্তভাবে বিরক্ত না করে এসব পরিস্থিতি অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছে।

কিন্তু ইসরাইল-ইরান সঙ্ঘাতের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। একদিকে, ইসরাইল ভারতের অন্যতম ঘনিষ্ঠ প্রতিরক্ষা অংশীদার। ভারত ইসরাইলি অস্ত্রের সবচেয়ে বড় ক্রেতা এবং তেল আবিব ভারতের অন্যতম শীর্ষ রফতানিকারক। গত দশকে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ৩৩ গুণ বেড়েছে। সেমিকন্ডাক্টর চিপ আমদানি, জল-সাশ্রয়ী কৃষি প্রযুক্তিতে সহযোগিতা এবং ইসরাইলি হাইফা বন্দরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া এসবই দুই দেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের প্রমাণ।

এছাড়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর শাসন শৈলীতেও অনেক মিল রয়েছে বলে উল্লেখ করেন কুগেলম্যান।

তবে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের পক্ষ থেকে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গাজায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ উত্থাপিত হওয়াও ভারতের অবস্থানকে জটিল করে তুলেছে।

এদিকে ইরান ও মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের সাথেও ভারতের উল্লেখযোগ্য স্বার্থ রয়েছে। যদিও মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরান থেকে ভারতের জ্বালানি আমদানি কমেছে। তবে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ক এখনো রয়ে গেছে। পাশাপাশি সৌদি আরব, মিসর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারদের সাথে ভারতের শক্তিশালী অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে।

এই বাস্তবতায় কুগেলম্যান মনে করেন, ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি ইউক্রেন যুদ্ধের সময়কার মতোই দ্বিমুখী থাকবে। একদিকে তারা ইসরাইলকে প্রকাশ্যে নিন্দা করবে না, অন্যদিকে সঙ্ঘাত কমাতে কূটনৈতিক সমাধানের উপর জোর দেবে।

সবশেষে, কুগেলম্যান ব্যাখ্যা করেন, এই সঙ্ঘাত ভারতের স্বার্থে সরাসরি হুমকি নয়। কিন্তু এটি ভারতের বহুমুখী পররাষ্ট্রনীতির ভারসাম্য রক্ষায় একটি বড় পরীক্ষা হয়ে উঠেছে।

সূত্র : ফরেন পলিসি/আল জাজিরা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Scroll to Top