ইসলামী দলগুলো

ইসলামী দলগুলোর সামনে উজ্জ্বল নির্বাচনী সম্ভাবনা

টুডেনিউজ বিডি ডটনেট

বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ইসলামী দলগুলোর সামনে উজ্জ্বল নির্বাচনী সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) জনপ্রিয় ইসলামী ব্যক্তিত্ব মাওলানা শরীফ মুহাম্মদ তার এক ফেসবুক পোস্টে এমন মন্তব্য করেছেন।

এ সময় তিনি প্রধান প্রধান দলগুলোর জনপ্রিয়তা কমার প্রেক্ষিতে ইসলামী দলগুলোকে এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ৩৫-৪০টি আসনে ফোকাস করে কৌশলগত প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। একইসাথে হেফাজতের ভূমিকা ও সীমারেখা, জোট গঠন, মেনিফেস্টো ও কৌশল নিয়ে সচেতন ও দূরদর্শী থাকারও আহ্বান জানান।

বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ইসলামী দলগুলোর সম্ভাবনা

মাওলানা ফেসবুক পোস্টে বলেন, আলেম-উলামা ভিত্তিক ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলোর একটি ভাল নির্বাচনী সম্ভাবনার সময় যাচ্ছে এ মুহূর্তে। এ সুযোগ কাজে লাগানোর সম্ভাব্য চেষ্টা করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। সংস্কার, বিচার, ইন্তেরিমের মেয়াদ বৃদ্ধি-যাই চলুক নির্বাচনের প্রস্তুতিটাই এখন দলগুলোর সামনে, এমনকি সরকারের গাড়িও শিগগির নির্বাচনের রাস্তায় উঠে যাবে বলে মনে হচ্ছে।

জোট ও আসন ভাগাভাগির বাস্তবতা

তিনি আরো বলেন, লক্ষণীয় ব্যাপার হল, বিএনপি, এনসিপি, জামায়াত; প্রায় প্রতিটি দলের জনপ্রিয়তা ও সম্ভাবনা গত কয়েক মাসে কমেছে, ভিন্ন ভিন্ন কারণে। এ অবস্থাটা সামনের মাসগুলোতে আরও চেলেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। এ সময়টাতে ইসলামি আন্দোলন-সহ অপরাপর দলগুলো জোট করে ৩৫/৪০ টি আসন টার্গেট করে কাজ শুরু করতে পারে। এবং প্রাথমিক এই জোট নিয়ে বড়/আলোচিত কোন দল বা প্লাটফর্মের সাথে নির্বাচনী এলায়েন্স হতে পারে।

৫০ আসনে ভোটের প্রস্তুতিতে জমিয়ত, ২০ আসন বিশেষ টার্গেট

সতর্ক করে এই আলেম বলেন, তবে হেফাজতে ইসলামকে, হেফাজতের নাম ব্যানার ইমেজ ও প্রেশারকে নির্বাচনী জোট কিংবা আসন সমঝোতায় দর কশাকশির উপলক্ষ হিসেবে ব্যাবহার করার চেষটা করাটা ভুল হবে। দলীয় রাজনিতি-মুক্ত প্লাটফর্ম হেফাজতের নেতৃত্বে থাকা নির্বাচনমুখি রাজনৈতিক নেতারা এ কথাটা মাথায় রাখলে ভালো করবেন। এ জায়গাটায় ভুল করলে নেতারা নির্বাচনের আগেই ভেতরে-বাইরে জটিল বিতর্কে পড়বেন। এবং অরাজনৈতিক সার্বজনীন দীনি প্লাটফরমটির অস্বাভাবিক ও দুর্ভাগ্যজনক সমাপ্তি ঘটবে। এতে জটিলতা আরও বাড়বে। নির্বাচনের সমঝোতা ও বারগেইনিং-এর জন্য নিজ নিজ দল ও জোটকে সামনে রাখাটাই বুদ্ধির কাজ হবে।

নির্বাচনী বার্তা ও মেনিফেস্টোর প্রস্তাবনা

এ প্রেক্ষাপটে করণীয় নির্দেশ করে তিনি বলেন, অবশ্য ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী কেম্পেইন, বক্তব্য, আচরণে আলাদা কিছু বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার। থাকা দরকার তাদের শর্ট ও লং মেনিফেস্টো, অঞ্চল ও বিশ্ব সম্পর্ক ক্ষেত্রে জুতসই পলিসি, ইসলাম ও আধুনিকতার মুখোমুখি ইস্যুর আলোচিত প্রসঙ্গ নিয়ে ভাল বোঝাপড়া, অর্থ বাজার বিনিয়োগ সংখ্যালঘু, নারি-সহ কিছু ইস্যুর ক্ষেত্রে কিছু বাড়তি স্পষ্টতা এবং মৌলিকভাবে দীনি রাষ্ট্নীতি এবং সিস্টেমের মধ্যেও আলেম-ইসলামি মানুষদের দেশসেবার আকর্ষণীয় ও বিশহাসযোগ্য উপস্থাপন। এবং এ জাতীয় আরও কিছু কিছু বিশেষ নির্বাচনী পলিসি ও কৌশল।

যোগ্য প্রার্থী নির্বাচন ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

তিনি আরো বলেন, নির্বাচনী প্রস্তুতি, জোট, আসন সমঝোতা ইত্যাদি প্রয়াসের মধ্য দিয়ে টার্গেট করা ৪০ জনের ভেতর থেকে যোগ্য ও ভাল ইমেজের ১০ জন বের হয়ে এলে সেটাও সুন্দর ব্যাপার হবে এবং অনেক কাজের সম্ভাবনা তৈরি করবে

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে কওমী ঘরানাভিত্তিক (দেওবন্দি চিন্তাধারার) ইসলামি দলগুলো হলো ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ (চরমোনাই), বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলন বাংলাদেশ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ও ইসলামী ঐক্যজোট। এসব দল সাধারণত মাদরাসা-ভিত্তিক আলেম সমাজ দ্বারা পরিচালিত। তারা দারুল উলুম দেওবন্দের আদর্শে অনুপ্রাণিত।

কওমী ঘরানার দলগুলোর মধ্যে জোট গঠন সম্ভব। তবে এজন্য প্রয়োজন ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা ছাড়িয়ে সমষ্টিগত বুদ্ধিমত্তা, কৌশলগত নমনীয়তা এবং নির্বাচনী বাস্তবতা ও জনসম্পৃক্ততা নিয়ে স্পষ্ট পরিকল্পনা। এ বিষয়গুলো যদি নিশ্চিত করা যায়, তাহলে একটি উজ্জ্বল জোট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Scroll to Top