অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপন, ইসলাম, মানবদেহ,

ইসলামে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনের বিধান

মুফতি খাইরুল ইসলাম

ইসলাম মানবকল্যাণে নিবেদিত একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, যা জীবন রক্ষার্থে বৈধ পন্থায় সকল প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে। তবে এ ক্ষেত্রে শরীয়তের সীমারেখা অতিক্রম করা যায় না। চিকিৎসাবিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সম্পর্কিত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনের তিনটি পদ্ধতি ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে মূল্যায়ন করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে দুইটি পদ্ধতি জায়েজ (বৈধ) এবং একটি নাজায়েজ (অবৈধ) হিসেবে বিবেচিত।

জায়েজ পদ্ধতিসমূহ

১. কৃত্রিম অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ব্যবহার
মানবদেহের কোনো অঙ্গ যদি বিকল বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে চিকিৎসাশাস্ত্রে স্বীকৃত জড় পদার্থ (যেমন: ধাতু, প্লাস্টিক বা সিনথেটিক মেটেরিয়াল) দ্বারা তৈরি অঙ্গ প্রতিস্থাপন ইসলামে অনুমোদিত।

২. প্রাণীজ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ব্যবহার
মানবেতর প্রাণী (যেমন: গরু, ছাগল বা অন্যান্য হালাল প্রাণী) এর হাড়, চামড়া বা অন্য কোনো টিস্যু মানুষের দেহে স্থানান্তর করা জায়েজ, যতক্ষণ তা চিকিৎসাগতভাবে নিরাপদ ও প্রয়োজনীয় হয়।

নাজায়েজ পদ্ধতি

৩. মানবদেহ থেকে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপন:
এক ব্যক্তির দেহ থেকে অপর ব্যক্তির দেহে অঙ্গ স্থানান্তর করা ইসলামী শরীয়তে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। যদিও এতে সাময়িক উপকারিতা থাকতে পারে, তবে এর দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতিকর দিকগুলো গোটা মানবজাতির জন্য ধ্বংসাত্মক পরিণতি বয়ে আনতে পারে।

নিষিদ্ধতার কারণ
মানব মর্যাদার অবমাননা

আল্লাহ তাআলা মানুষকে আশরাফুল মাখলুকাত (সৃষ্টির সেরা জীব) হিসেবে সম্মানিত করেছেন। মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বাণিজ্যিক লেনদেন বা দানের বস্তুতে পরিণত করলে এ মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়।

অঙ্গের মালিকানা সংক্রান্ত বিধান

ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষ নিজ দেহের মালিক নয়; বরং তা আল্লাহর আমানত। তাই কেউ নিজের অঙ্গ বিক্রি, দান বা হস্তান্তর করার অধিকার রাখে না। যেমনিভাবে আত্ম*হ*ত্যা হারাম, তেমনি অন্যকে সন্তুষ্ট করতে গিয়েও অঙ্গদান করা নিষিদ্ধ।

শরীয়তের স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা

ইসলামে চরম সংকটকালেও মানবদেহের কোনো অংশ ভক্ষণ বা ব্যবহারের অনুমতি নেই। উদাহরণস্বরূপ, দুর্ভিক্ষের সময় মৃতপ্রাণীর গোস্ত খাওয়া বৈধ হলেও অন্য মানুষের মাংস খাওয়া চিরতরে হারাম। অনুরূপভাবে, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দান বা বিক্রয়ও নিষিদ্ধ, কারণ এটি মানুষের মালিকানাধীন সম্পদ নয়।
দারুল ইফতা, দারুল উলুম দেওবন্দ। ফাতাওয়া নং ৫৪৩২-

সুতরাং ইসলাম জীবন রক্ষার গুরুত্ব স্বীকার করে বৈধ পন্থাকে উৎসাহিত করে, কিন্তু মানবদেহের পবিত্রতা ও শ্রেষ্ঠত্ব রক্ষার্থে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিনিময়কে নিষিদ্ধ করেছে। এ বিধান কুরআন-সুন্নাহর আলোকে প্রতিষ্ঠিত এবং মানবতার কল্যাণেই প্রণীত।

লেখকের ফেসবুক থেকে গৃহীত

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Scroll to Top