ইসলামে মতভেদ : গ্রহণযোগ্যতা ও সীমারেখা

শায়খ ইবনুল কালাম

ইখতেলাফ মৌলিকভাবে ছয় প্রকার। তা হলো এই যে
-الاختلاف في الأديان
-الاختلاف في الخبرية من ضروريات الدين والقطعيات والإجماعيات.
-الاختلاف في الخبرية غير السابقة
-الاختلاف في الأمور العلمية
-الاختلاف في الأمور العملية
-الاختلاف في الفروع الفقهية
এবার এসব প্রকারকে একটু ব্যাখ্যা করা যাক। যেন বিষয়টি সহজে বুঝা যায় এবং তার হুকুম নির্ধারণ করা যায়।

এক. الاختلاف في الأديان এর উদ্দেশ্য
الاختلاف في الأديان দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, ধর্মীয় ভিন্নতা। যেমন ইসলাম, হিন্দু ধর্ম, খৃষ্টধর্ম, ইহুদি ধর্ম, নাস্তিক্যবাদ ইত্যাদি। ইসলামের সাথে অন্য ধর্মের যে ভিন্নতা, এটা কখনোই গ্রহণীয় নয়। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআন শরীফে ইরশাদ করেন,
وَمَن يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَن يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ
অর্থাৎ যে ব্যক্তিই ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বীন অবলম্বন করতে চাবে, তার থেকে সে দ্বীন কবুল করা হবে না এবং আখেরাতে সে মহা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ৮৫)

দুই. الاختلاف في الخبرية من ضروريات الدين والقطعيات والإجماعيات. এর ব্যাখ্যা
এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো এমন গায়েবী বিষয়ে ইখতেলাফ করা, যেটি জরুরিয়াতে দ্বীন, কাতঈয়াতে দ্বীন কিংবা ইজমাইয়াতে দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত। যেমন আল্লাহ তায়ালার প্রতি ঈমান আনা, পরকাল বিষয়ে ঈমান আনা, ফেরেস্তাদের প্রতি ঈমান আনা। ইত্যাদি।
এসব বিষয়েও ইখতেলাফ করার কোনো সুযোগ নেই। কেউ যদি এসব বিষয়ে ইখতেলাফ করে, তাহলে সেও দ্বীনের গণ্ডি থেকে বেরিয়ে যাবে। এতে কোনো সন্দেহ নেই।

তিন. الاختلاف في الخبرية غير السابقة এর মর্ম
এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো এমন কিছু গায়েবি বিষয়, যেগুলোতে শরয়ী দলীলের ভিত্তিতে ইখতেলাফের অবকাশ আছে। কিংবা কুরুনের সালাছাতে ইখতেলাফ দেখা গেছে। যেমন,
মেরাজের রাতে রাসূল সা. আল্লাহ তায়ালাকে স্বচক্ষে দেখেছেন কিনা? এক্ষেত্রে ইবনে আব্বাস রা. বলেন, নবীজি সা. আল্লাহ তায়ালাকে দেখেছেন। কিন্তু আয়েশা রা. বিষয়টি অস্বীকার করেন।

এমনিভাবে, মৃত ব্যক্তির স্বজনদের উচ্চস্বরে কান্নাকাটির কারণে মৃত ব্যক্তিকে শাস্তি দেয়া হবে কিনা, এ নিয়েও ইখতেলাফ দেখা গেছে। আয়েশা রা. বলেন, শাস্তি দেয়া হবে না। অন্যান্য সাহাবায়ে কেরাম বলেন, শাস্তি দেয়া হবে। উভয় পক্ষ রাসূল সা. থেকে হাদিস বর্ণনা করেন।

এমনিভাবে, মৃতরা জীবিতদের কথাবার্তা শুনতে পায় কিনা? একদল সাহাবায়ে কেরাম বলেন, মৃতরা জীবিতদের কথাবার্তা শুনতে পান। কিন্তু অন্যদল তা অস্বীকার করেন।

এসব ইখতেলাফ হলো ইজতেহাদি ইখতেলাফ। এক্ষেত্রে যারা হকের উপর রয়েছে, তাদের দুই সওয়াব। আর যারা ভুলের উপর আছেন, তারা এক সওয়াব পাবেন।

চার. الاختلاف في الأمور العلمية এর অর্থ
ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয়ে যে ইলমী বিতর্ক রয়েছে, সেগুলো এই পর্যায়ের অন্তর্ভুক্ত। যেমন, জবিহুল্লাহ কে? হজরত ইসমাইল আ. নাকি হজরত ইসহাক আ.? এ নিয়ে সালাফের মাঝে ইখতেলাফ আছে। এমনিভাবে আল্লাহ তায়ালাকে কি দেখা সম্ভব না সম্ভব নয়? এসব নিয়ে সালাফের মাঝে ইখতেলাফ আছে। এসব ইখতেলাফের ক্ষেত্রে িআগের প্রকারের মতো হুকুম।

পাঁচ. الاختلاف في الأمور العملية এর মর্ম
الاختلاف في الأمور العملية দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, শরীয়াহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন আমলের ধরন বা বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে ইখতেলাফ করা। যেমন, রাসূল সা. এর পরে খলিফা কে হবে, তা নির্ণয়ে ইখতেলাফ, ওসমান রা. এর হত্যার বিচার আগে হবে না পরে হবে, তা নিয়ে ইখতেলাফ। এটার হুকুমও আগের দুই প্রকারের মতোই।

ছয়. الاختلاف في الفروع الفقهية এর উদ্দেশ্য
এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ফুকাহায়ে কেরামের ইখতেলাফ। এ নিয়ে আমরা সামনে বিস্তারিত আলোচনা করব। ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তায়ালাই উত্তম তাওফিক দাতা।

লেখক : পরিচালক, নদওয়াতুল হানাফিয়া বাংলাদেশ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Scroll to Top