শায়খ আবু তাসনিম
ঈমান মুমিনের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। এটাই তার দুনিয়া আখেরাতের আসল পুঁজি। এর মধ্য দিয়ে বান্দা আল্লাহ তায়ালার কাছে তার আবদিয়ত প্রকাশ করে। সেজন্য মুমিন তার জীবন বিসর্জন দিতে পারে। কিন্তু মুহূর্তের জন্য তার ঈমান ছাড়ার কল্পনা করতে পারে না।
ওহির মাধ্যমে আল্লাহর রাসূল সা. যা প্রাপ্ত হয়েছে, তার সবকিছুকে সত্য বলে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করার নামই হলো ঈমান। আর রাসূল সা. আল্লাহ তায়ালা থেকে যা প্রাপ্ত হয়েছেন, তা আজো আমাদের কাছে অবিকৃত অবস্থায় সংরক্ষিত রয়েছে। ওসবের সমন্বিত রূপ হলো কুরআন এবং সুন্নাহ। এই কুরআন ও সুন্নাহ আমাদের কাছে কিয়ামত পর্যন্ত সংরক্ষিত থাকবে। আল্লাহ তায়ালা নিজেই তা সংরক্ষণের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।
সুতরাং একজন ব্যক্তি নিজেকে ঈমানদার হিসেবে পরিচয় দিতে হলে তাকে অবশ্যই কুরআন ও সুন্নাহের সকল অনুসঙ্গকে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতে হবে এবং মেনে নিতে হবে। এর মধ্যে একটি জিনিসকেও অস্বীকার করার কোনো অবকাশ নেই। কেউ যদি ন্যূনতম কোনো বিষয়কেও অস্বীকার করে, তবে তার ঈমান শঙ্কায় পড়ে যাবে।
মুমিনমাত্রই কুরআন ও সুন্নাহের সকল বিধি-বিধানের সামনে মাথা নত করে দেবে। এ নিয়ে তার মনে কোনো সংশয়, অনুযোগ কিংবা অভিযোগ থাকবে না। কেউ যদি এমন হয় যে কুরআন ও সুন্নাহের কোনো বিধান নিয়ে তার মনে অস্বস্তি রয়েছে, তাহলে ধরে নিতে হবে যে এটি তার ঈমানের দুর্বলতা। সেজন্য এ ধরনের কোনো অস্বস্তি হৃদয়ে অনুভব করলেই ঈমান মেরামতে মনোযোগ দিতে হবে।
মনে রাখতে হবে যে ইসলাম সর্বকালের জন্য প্রাসঙ্গিক এবং সর্বযুগেই তা আধুনিক। সেজন্য ইসলামে কোনো সংস্কার বা সংশোধনের দরকার নেই। কেউ যদি এর দাবি করে, তাহলে বুঝতে হবে, হয়তো তার হৃদয়ে ঈমান নেই। অথবা থাকলেও তা মেরামত প্রয়োজন।
আর আল্লাহ তায়ালা থেকে রাসূল সা. কেবল কুরআনই প্রাপ্ত হননি। বরং কুরআনের পাশাপাশি সুন্নাহের জ্ঞানও ওহির মাধ্যমে প্রাপ্ত হয়েছেন। কুরআনের তার স্পষ্ট স্বীকৃতিও রয়েছে। সেজন্য যারা কুরআন মানার কথা বলে সুন্নাহকে অস্বীকার করবে, তাদের ঈমান মেরামতের ফিকির করতে হবে। কারণ, শরিয়তে শুধুই কুরআন মানা বা শুধুই হাদিস মানার অবকাশ নেই। বরং উভয়টিই মানতে হবে।
আল্লাহ তায়ালা কুরআন হেফাজতের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। এর অর্থ হলো কুরআন কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে। তো কুরআন হেফাজত করার অর্থ হলো তার মর্ম যথাযথভাবে উদ্ধার করা সম্ভব হবে। কুরআনের মর্ম যথাযথভাবে উদ্ধার করার জন্য হাদিসের বিকল্প নেই। সেজন্য কুরআনকে হেফাজত করতে হলে হাদিসকেও হেফাজত করতে হবে। তাই যুগের উলামায়ে কেরামের মাধ্যমে আল্লাহ হাদিসকেও হেফাজত করেছেন। সেজন্য যারা আজ সংশয় প্রকাশ করে বলে, রাসূল সা. যা বলেছেন, তা হুবহু সংরক্ষিত নেই। তারা প্রকারান্তরে আল্লাহর দায়িত্ববোধের উপরই আঙ্গুল তোলে। তাই যারা এমন সংশয় প্রকাশ করেন, তাদের ঈমান মেরামত করা চাই।
কুরআন ও সুন্নাহের প্রায়োগিক রূপের নাম হলো ফিকহ। সুতরাং আল্লাহ তায়ালা কুরআর ও সুন্নাহ সংরক্ষণের দায়িত্ব নেয়ার অর্থ হলো ফিকাহ সংরক্ষণেরও দায়িত্ব নিয়েছেন। সেজন্য ঈমানের দাবি হলো, নিজের জীবনকে কুরআন-সুন্নাহের রঙে রাঙাতে হলে ফিকাহের আলোকে তা সাজাতে হবে।
সুতরাং রাসূল সা. আনীত সবকিছুকে মানার জন্য আমাদের জীবনকে ফিকহের রঙে রঙিন করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের যথাযথভাবে ঈমানের আলোয় আলোকিত হওয়ার তাওফিক দান করেন। আমিন।