পিকেকে, কুর্দি, তুরস্ক, সম্পাদকের বাছাই,

এরদোগানের সবচেয়ে বড় সফলতা : আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত হবে পিকেকে

কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি (পিকেকে) শুক্রবারের মধ্যেই ঘোষণা করবে যে তারা তুরস্কের বিরুদ্ধে তাদের সশস্ত্র সংগ্রাম সমাপ্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং সংগঠনটি ভেঙে দেবে। মিডল ইস্ট আইকে বিষয়টির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত দুটি সূত্র এমনটাই জানিয়েছেন।

ফেব্রুয়ারিতে পিকেকে-র কারাবন্দি নেতা আবদুল্লাহ ওকালানের দেয়া এক বিবৃতির পর এই সিদ্ধান্ত এসেছে। সেখানে তিনি ৪০ বছরেরও বেশি সময় আগে প্রতিষ্ঠিত সংগঠনটিকে অস্ত্র পরিত্যাগের আহ্বান জানান।

শুক্রবার পিকেকে জানায় যে তারা ৫ থেকে ৭ মে পর্যন্ত একটি কংগ্রেস আয়োজন করেছে এবং সেখানে ওকালানের আহ্বান নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

তারা জানিয়েছে, তারা এমন একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যার রয়েছে ঐতিহাসিক গুরুত্ব। তারা বলেছেন, ‘আমরা খুব শিগগিরই প্রাসঙ্গিক দলিল ও তথ্যসহ প্রকাশ করব।’

ফেব্রুয়ারির বিবৃতিতে ওকালান সশস্ত্র সংগ্রামকে অতীতের একটি অধ্যায় হিসেবে আখ্যায়িত করেন। দেড় পৃষ্ঠার এক বার্তায় তিনি ব্যাখ্যা করেন, পিকেকে-র সশস্ত্র সংগ্রাম এক সময় জরুরি ছিল। কারণ তুর্কি রাষ্ট্রের নীতিতে কুর্দি পরিচয় অস্বীকৃত ছিল এবং কুর্দিদের অধিকার ও স্বাধীনতা কঠোরভাবে সীমিত ছিল।

তিনি আরো বলেন, ‘পিকেকে জন্ম নিয়েছিল বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে সহিংস সময়ে-দুই বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী পর্বে, বাস্তব সমাজতন্ত্র ও শীতল যুদ্ধের ছায়ায়।’ তবে তিনি যুক্তি দেন, সাম্প্রতিক সময়ের তুর্কি সরকারের গণতান্ত্রিক সংস্কার এবং আঞ্চলিক উন্নয়নের প্রেক্ষাপটে সশস্ত্র সংগ্রাম এখন আর প্রাসঙ্গিক নয়। তাই সব গোষ্ঠীরই অস্ত্র পরিত্যাগ করা উচিত এবং পিকেকে-কে অবশ্যই বিলুপ্ত হতে হবে।

ওকালানের ‘সকল গোষ্ঠী’ বলতে বোঝানো হয়েছে সিরিয়া ও ইরানে পিকেকে-র সহযোগী ও শাখাসংগঠনগুলোকে এবং সহযোগী সংগঠন ‘গ্রুপ অফ কমিউনিটিজ ইন কুর্দিস্তান’ (কেসিকে)-কে, যা তুরস্ক, ইরাক, সিরিয়া ও ইরানজুড়ে সক্রিয়।

মার্চে পিকেকে প্রকাশ্যে জানায় যে তারা ওকালানের নির্দেশনা মেনে চলবে এবং একটি যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেবে।

ওকালান ও তুর্কি সরকারের মধ্যকার চলমান আলোচনার অংশ হিসেবে মার্চ মাসে একটি পৃথক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যেখানে পিকেকে-ঘনিষ্ঠ সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস (এসডিএফ)-এর কমান্ডার মাজলুম আবদি শাহিন ও সিরিয়ার রাষ্ট্রপতি আহমেদ আল-শারার অংশ নেন।

এই চুক্তির মাধ্যমে উত্তর-পূর্ব সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর দামেস্ক পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ লাভ করে, যা কার্যত কুর্দি রাষ্ট্র বা ফেডারেল ব্যবস্থার সম্ভাবনাকে বাতিল করে দেয়।

অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, ওকালানের এই আহ্বান তুরস্কের সামরিক সাফল্যের ফল। যারা ইরাকের কান্দিল পর্বতমালায় পিকেকে-কে বিচ্ছিন্ন করতে সক্ষম হয়েছে।

২০১৬ সাল থেকে তুর্কি বাহিনী উন্নত ড্রোন প্রযুক্তি ও ইলেকট্রনিক যুদ্ধক্ষমতা ব্যবহার করে পিকেকে-কে অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ ও অনুপ্রবেশের পথ থেকে বঞ্চিত করছে।

পিকেকে কিভাবে অস্ত্র সমর্পণ করবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। আঙ্কারার কিছু সূত্র জানিয়েছে, প্রতিবেশী দেশগুলোর সহযোগিতায় ইরাকি সরকার অস্ত্র সংগ্রহ ও নিবন্ধনের প্রক্রিয়ায় ভূমিকা রাখতে পারে।

সিরিয়ায় অবস্থানরত বিদেশী যোদ্ধারা নিজ নিজ দেশে ফিরে যাবে। যারা রাজনীতিতে অংশ নিতে চায়, তাদের জাতীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থায় একীভূত করা হবে। কেসিকে-র শীর্ষ নেতাদের তৃতীয় কোনো দেশে স্থানান্তরের পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানা গেছে।

কিছু বিশ্লেষকের মতে, পিকেকে নেতাদের ইরাকের সুলায়মানিয়ায় পুনর্বাসন করা হতে পারে—যা প্যাট্রিয়টিক ইউনিয়ন অব কুর্দিস্তান (পিইউকে)-এর নিয়ন্ত্রণাধীন একটি এলাকা এবং ঐতিহাসিকভাবে এই সশস্ত্র গোষ্ঠীর প্রতি সহানুভূতিশীল রাজনৈতিক শক্তি।

সূত্র : মিডল ইস্ট মনিটর

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Scroll to Top