নেতানিয়াহু, ভ্যাটিকান

‘কাতারগেট’ কেলেঙ্কারি : নেতানিয়াহু কেন বারবার আদালতে হাজিরা দিচ্ছে

টুডেনিউজ বিডি ডটনেট

নেতানিয়াহুর সহযোগীদের গ্রেপ্তারের মাধ্যমে ইসরায়েলের ‘কাতারগেট’ কেলেঙ্কারি আরও গভীরতর হয়েছে

ইসরায়েলে তথাকথিত “কাতারগেট” কেলেঙ্কারি আরও গভীরতর হওয়ার প্রেক্ষাপটে সোমবার ইসরায়েলি পুলিশ প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর দুই ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টাকে গ্রেপ্তার করেছে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন নেতানিয়াহুর সিনিয়র মিডিয়া উপদেষ্টা জোনাথন উরিচ এবং সামরিক মুখপাত্র এলি ফেল্ডস্টেইন। তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও কাতারি কর্মকর্তাদের মধ্যে সম্পর্কের তদন্তের অংশ হিসেবে।

এই দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিদেশি এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ, অর্থ পাচার, ঘুষ গ্রহণ, জালিয়াতি ও বিশ্বাস ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়েছে।

সোমবার আদালতে নিজের দুর্নীতি ও জালিয়াতির মামলায় সাক্ষ্য দেওয়ার সময় নেতানিয়াহুকে তার উপদেষ্টাদের সংশ্লিষ্ট মামলায় সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য আদালত কক্ষ ত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়।

নেতানিয়াহু ছাড়াও, এক সাংবাদিক, যার নাম এখনো প্রকাশ করা হয়নি, এই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়েছে। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজ জানিয়েছে, পুলিশ শিগগিরই অন্যান্য সাংবাদিকদেরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করবে।

তদন্তটি একটি গোপন আদেশের আওতায় থাকায় অনেক বিবরণ এখনো প্রকাশ করা হয়নি। তবে ইসরায়েলি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উরিচ, ফেল্ডস্টেইন ও অন্যান্য সন্দেহভাজনদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে তারা কাতারি সরকারের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের কাছে বার্তা পাঠিয়েছেন। এসব বার্তা এমনভাবে তৈরি করা হয়েছিল যেন তা ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো হয়েছে।

জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের প্রাক্তন উপ-প্রধান ইরান এটজিওন বলেছেন, “এখনই ঘটনার প্রকৃত গভীরতা নির্ধারণ করা কঠিন। তবে যদি উরিচ ও ফেল্ডস্টেইন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এবং কাতারি কর্মকর্তাদের জন্য কাজ করে থাকেন, তাহলে তারা সংবেদনশীল তথ্যের অধিকারী।”

তিনি আরও বলেন, “আইনগতভাবে এটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ডাবল এজেন্ট নিয়োগের সমতুল্য হতে পারে, যা রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকি এবং রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল।”

‘কাতারগেট’ কী?
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম প্রথম গত নভেম্বর মাসে “কাতারগেট” কেলেঙ্কারি প্রকাশ করে। হারেৎজের প্রতিবেদনে বলা হয়, নেতানিয়াহুর দীর্ঘদিনের উপদেষ্টা উরিচ ও অপর উপদেষ্টা স্রুলিক আইনহর্নকে ২০২২ সালের ফুটবল বিশ্বকাপের আগে কাতারে নিয়োগ করা হয়েছিল।

তাদের মিডিয়া পরামর্শক সংস্থা পারসেপশনের মাধ্যমে কাতারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার এবং দেশটিকে “বিশ্ব শান্তি ও স্থিতিশীলতার প্রতীক” হিসেবে উপস্থাপনের জন্য কাজ করার অভিযোগ রয়েছে।

এছাড়াও, তারা ইসরায়েলি সাংবাদিকদের কাতারে আমন্ত্রণ জানিয়ে দেশটির জনসংযোগ উন্নত করার জন্য কাজ করেছিল।

ফেব্রুয়ারিতে চ্যানেল ১২ নিউজ জানায়, নেতানিয়াহুর সামরিক মুখপাত্র ফেল্ডস্টেইনও এই কেলেঙ্কারিতে জড়িত ছিলেন। তিনি কাতারের অর্থায়নে পরিচালিত একটি সংস্থায় কাজ করছিলেন, যা ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে আলোচনায় মধ্যস্থতার জন্য কাজ করেছে।

ব্রিটিশ সংবাদপত্র ইহুদি ক্রনিকল ও জার্মান সংবাদপত্র বিল্ড-কে হামাস সম্পর্কিত গোপন নথি সরবরাহের সন্দেহে ফেল্ডস্টেইনকে আগেও গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পরে জানা যায়, এসব প্রতিবেদনের তথ্য মিথ্যা ছিল এবং ইহুদি ক্রনিকলকে তাদের ওয়েবসাইট থেকে সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন সরিয়ে নিতে বাধ্য করা হয়।

নেতানিয়াহুর প্রতিক্রিয়া
নেতানিয়াহু তার উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তার দল লিকুদ এক বিবৃতিতে এই তদন্তকে “একজন ডানপন্থী প্রধানমন্ত্রীকে অপসারণের রাজনৈতিক প্রচেষ্টা” বলে অভিহিত করেছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “এটি কোনো আইনগত তদন্ত নয়, এটি গণতন্ত্র হত্যার ষড়যন্ত্র এবং জনগণের ইচ্ছাকে আমলাতান্ত্রিক শাসনের সঙ্গে প্রতিস্থাপনের চেষ্টা।”

সম্প্রতি, নেতানিয়াহু শিন বেটের প্রধান রোনেন বারকে বরখাস্ত করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন, যা অনেকে এই তদন্ত ব্যাহত করার চেষ্টা হিসেবে দেখছেন। সুপ্রিম কোর্ট আগামী মাসে এ বিষয়ে শুনানি করবে।

রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা
এই কেলেঙ্কারি প্রকাশের পর থেকে নেতানিয়াহু তার ঘনিষ্ঠ মিত্র, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতোই “ডিপ স্টেট” ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রচার করছেন।

এক টিকটক ভিডিওতে তিনি বলেছেন, “বামপন্থী ডিপ স্টেট আমাকে এবং আমার সরকারকে পরাস্ত করতে চায়।”

নেতানিয়াহুর সাম্প্রতিক মন্তব্য ইসরায়েলে ব্যাপক সমালোচনা কুড়িয়েছে, বিশেষত হামাসের হাতে বন্দি ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে। কারণ, তিনি তার উপদেষ্টাদের প্রসঙ্গে “জিম্মি” শব্দটি ব্যবহার করেছেন।

জাতীয় নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ এটজিওন বলেন, “নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক অবস্থান সংকটের মুখে। তিনি এখন মরিয়া, বিপজ্জনক ও নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছেন। পরিস্থিতি থেকে দৃষ্টি সরাতে তিনি সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারেন।”

কেলেঙ্কারির গভীরতা, তদন্তের ফলাফল এবং এর রাজনৈতিক প্রভাব সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা কঠিন। তবে এটি স্পষ্ট যে, ইসরায়েলের রাজনৈতিক অঙ্গনে এই ঘটনাটি বড় ধরনের অস্থিরতা তৈরি করেছে।

সূত্র : মিডল ইস্ট আই

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Scroll to Top