আহমেদ নিঝুম
ভারত শাসিত কাশ্মিরে হামলা হয়েছে। পর্যটকদের উপর করা এই হামলা স্মরণকালের ভয়াবহ ঘটনা। করা হয়েছে। এতে অন্তত ২৬ জন পর্যটক নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে ভারতীয় সাবেক নিরাপত্তা কর্মকর্তাও রয়েছে। এই ঘটনার দায় ভারত সরকার পাকিস্তানের উপর দিতে চাচ্ছে। সেজন্য তারা ইতোমধ্যে বিভিন্ন কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
স্থানীয় মিডিয়া এবং আন্তর্জাতিক মিডিয়ার ভাষ্য এক্ষেত্রে মোদি সরকারের বয়ানের বাইরে নয়। তবে তারাও ঠিক কুল কিনার করতে পারছে না, এক্ষেত্রে দায়টা আসলে কার? অবশ্য এক্ষেত্রে দায় চাপানোর আগে আমাদের ভারতীয়দের মধ্যে যে আলোচনা চলছে, সেটি জানা আগে দরকার। এক্ষেত্রে আমরা কয়েকজন ভারতীয় ব্যক্তির সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে নজর বুলিয়ে আসি। তাহলে বিষয়টির খোলাসা করা অনেকটাই সহজ হবে।
কাশ্মিরে হামলা : ২৬ জন পর্যটক নিহত হওয়ার ঘটনায় কী ঘটেছিল
কাশ্মিরে হামলা কি পরিকল্পিত?
ভারতের চন্দননগর এলাকার সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্ট অমিত ঘোষ তার ফেসবুক পোস্টে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি দিক তুলে ধরেছেন। তিনি তার ফেসবুক পোস্টে ওই হামলায় নিহত এক পর্যটকের ছবি শেয়ার দিয়ে ক্যাপশনে লেখেন,
‘এটা বিজ্ঞান ভিত্তিক পোস্ট। সংবেদনশীল লোকেরা এই পোস্ট পড়া থেকে দূরে থাকুন।
যারা কনস্পিরেসি, বা ক্রাইসিস এক্টর সম্বন্ধে জানেন না, তারাও এই পোস্ট থেকে দূরে থাকুন। আপনাদের পোস্ট টা পড়ে বিরক্তি লাগবে।
ছবিটা আমি ডাক্তারদের এবং ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞের জন্যে দিলাম।
আমি হাজারের ওপর মৃতদেহ ঘাঁটাঘাঁটি করেছি।
আমি পেটিট ম্যাল/ ক্লোনিক টনিক সিজার পেশেন্ট দেখেছি। বুলেট ইঞ্জুরি দেখেছি। শার্প অবজেক্ট ডীপ ট্রমা কেস দেখেছি। ভায়োলেন্ট সিজার পেশেন্ট দেখেছি। ডেথবেড পেশেন্টের ডেথ প্যাংগস দেখেছি।
এই যে মুঠো করা হাত পেটের ওপর রাখা – এটা দেখিনি। কেনোনা এটা হতে পারে না। বরং জীবিত অবস্থায় সিজার পেশেন্টের যে হাতের মুঠো খোলা যায় না, তার মৃত্যুর সাথে সাথে এই দুই হাতের মুঠো খুলে গিয়ে শিথিল হয়ে পাশে চলে আসে।
আমরা আমেরিকায় ফলস ফ্ল্যাগ দেখেছি, ক্রাইসিস এক্টর দেখেছি। এবং তাদের ওপর ভিত্তি করে এমন নিয়ম কানুন আসতে দেখেছি – যেখানে সাধারণ জনগণকে কুকুর বানিয়ে রাখা হয়েছে।
যাদের নাম দেওয়া হচ্ছে, তারা যদি মারা গিয়ে থাকে, অন্ততঃ তাদের কারোরই “ডেড বডি” এটা নয়।
এটা কোনো ডেড বডি হতে পারে না।
আবার মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করা বডিও হতে পারে না। গুলি খাওয়ার চাপ চাপ রক্তে ভেসে যাবে শরীর।
মনে রাখবেন, সিআইএ কিন্তু “ইমোশন” কে সামনে রেখে সবসময় ফল্স ফ্ল্যাগ ঘটিয়ে থাকে।
লেখক: সুদীপ্ত ভক্ত Sudipto Bhakta’
কাশ্মিরে হামলা : কলকাতা ডিজিটাল মিডিয়া ফেডারেশনের কো-ফাউন্ডারের ৯ অভিযোগ
এই পোস্টের কমেন্টে Sanchita Bhattacharya নামে একজন অ্যাক্টিভিস্ট বলেন, ‘এই ছবিটা দেখে সত্যি কথা আমারও মনে হয়েছিল বড্ড সাজানো। কিন্তু বললেই লোকে রে রে করে তেড়ে আসবে। তাই চুপ করে ছিলাম।’
Panchadri Karmakar লিখেছেন, ওয়াকফ নিয়ে বিজেপি ব্যাকফুটে। তাই সম্ভবত।
পূবালী রাণা বলছেন, পূর্ব পরিকল্পিত বোঝাই যাচ্ছে।
চার্বাক তন্ত্র করেছেন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কমেন্ট। তিনিপঙ্কজ জৈনের একটি ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিন শর্ট শেয়ার করে লিখেছেন, ‘৭-ই এপ্রিল, অমিত শাহ তখন কাশ্মীর সফরে,, পঙ্কজ জৈন একটি পোষ্ট করে বলেন- ‘স্ক্রিন-শর্ট নিয়ে রাখুন,, শাহ (অমিত) সাহেব কাশ্মীর গেছেন। সেখানে দু-চার দিনের মধ্যে বড়ো কিছু ঘটতে চলেছে।’
কেন পেহেলগাম থেকে ভারতীয় সৈন্য সরানো হলো?
অমিত ঘোষ আরেকটি পোস্টে বলেন, ‘পুলওয়ামা পহেলগাঁও স্থান ভিন্ন মিল এক। পুলওয়ামায় হামলার আগে চেকপোস্ট তুলে নেওয়া হয়েছিল। পহেলগাঁও এ হামলার আগে সেনা তুলে নেওয়া হয়েছিল। ভাবুন, ভাবা প্র্যাকটিস করুন।’
এই পোস্টের কমেন্ট থেকে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। পার্থ প্রয়াস নামের এক অ্যাক্টিভিস্ট কমেন্টে আনন্দবাজার পত্রিকার একটি নিউজের স্ক্রিনশর্ট শেয়ার করেন। ওই নিউজের শিরোনাম হলো, ‘জম্মুতে ধৃত লস্কর জঙ্গি ছিলে বিজেপির আইটি সেলের প্রধান’। এটাকে সামনে রেখে সাম্প্রতিক ঘটনার ক্লু মেলানো যেতে পারে। মানে বর্তমানের হামলার দায় স্বীকার করেছে লস্কর জঙ্গিদের দল। তো আনন্দবাজারের ঘটনা অনুযায়ী লস্কর বাহিনীতে বিজেপির সদস্য রয়েছে।
কাশ্মিরে হামলা : সাজানো নাটক নাকি উগ্রবাদী হামলা
কমেন্টে Sanchita Bhattacharya নামের একজন বলেছেন, ‘ঠিক এই কথাই তো বলে যাচ্ছি। সবচেয়ে বড় কথা হিন্দু জিজ্ঞেস করে মারবে কেন। না জিজ্ঞেস করলেও তো হিন্দুই মরত। তার মানে এটা তো একেবারেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আর মানুষ এটা বুঝতে না পেরে ফাঁদে পা দিচ্ছে।
Indranil Majumder নামের একজন লিখেছেন, ‘শুধু পহেলগাঁও নয়, গোটা কাশ্মীর থেকেই প্রায় অর্ধেক সেনা সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল, যেটা তুলে ধরলেন কাল জেনারেল ভিজ টিভিতে। পহেলগাঁও তে কখনোই অনন্তপুর, বাঁদিপোরার মতো নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না। গত বছরই গিয়ে দেখেছি, আর্মি ডিপ্লয়মেন্ট শুরুই হচ্ছে এগিয়ে অমরনাথের দিকে। থিক থিক ভীড়, পনি, সহিসদের। পহেলগাঁও একটা ক্রিটিকাল গ্যাপ। অমরনাথ রুট, শুধু চন্দনবাড়িই ক্রিটিকাল নয়। কাশ্মীর নর্মাল এই ন্যারেটিভ দেওয়া হচ্ছিল। মাসিভ উইড্রয়াল অফ ফোর্স হলো। দায় কার? পুলোয়ামার দায় কার ছিল, আমরা জানি? সরকারি কোনও বিবৃতিতে একথা বলা হয় নি শুধু হিন্দুদেরই টার্গেট করা হয় বা লস্কর জড়িত। আজ আল জাজিরা বলল লোকাল গ্রুপ। বি বি সি সরকারি টুইট তুলে দিল। কোনও তথ্য নেই শুধু ড্রাম বাজছে।’
কাশ্মীর পর্যটক হামলার পর ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক চরমে
অমিত ঘোষের সন্দেহ
তৃতীয় আরেকটি পোস্টে অমিত ঘোষ সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, পুলওয়ামার জঙ্গি হানার মতো এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত থেমে যাবে নাতো?
Sayak Ghosh Choudhury এর অভিযোগ
Sayak Ghosh Choudhury নামের এক অ্যাক্টিভিস্ট বলেন, যখনই বিজেপির সময়ে “কাশ্মীর” সম্পর্কিত কোনো না কোনো জঙ্গী আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে, অজিত দোভাল সেই সময়েই কোনো না কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন।
এখানে মাসুদ আজাহারের পেছন পেছন অজিত দোভাল হাঁটছেন।
প্রশ্ন হলো, “এতগুলো বিরাট বিরাট সরকারি ব্যর্থতার পরেও অজিত দোভাল তাঁর পদ ধরে রাখেন কি করে ?”
ব্যাপারটা এমন নয় তো যে হাফিজ সাঈদের সঙ্গে বিজেপির linkman দোভালই ?
নয়তো পহেলগাঁওয়ের ঘটনায় কি দেখা গেলো ?
চারিদিকে খোলা উপত্যকা ! সেখান দিয়ে জঙ্গীরা হেঁটে এলেও ৩-৪ কিমি দূর থেকেই তাদের দেখা যাবে।
এটা guerrilla কায়দায় ambush নয়।
তাহলে এতো বিস্তীর্ণ এলাকায় … কোনো security নেই ?
যেটা আবার পর্যটন এলাকা ?
কাশ্মীরে আগে যত জায়গাতেই গেছি, military cover ছিল। প্রতি ৫ মিটার অন্তর। মিলিটারি টহল দিতো।
আরেকটা incident -এর কথা মনে পড়লো, বিস্তীর্ণ এলাকায় মিলিটারি কভার তুলে নেওয়া হয়েছিল।
“পুলওয়ামা জঙ্গী হানা”
“৩০০ কেজি RDX”
“গুজরাত নম্বরের গাড়ি”
“security check ছাড়াই কাশ্মীরের এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছিল”
“পুলিশ অফিসার দাভিন্দার সিংহ”
এবং …
“সেই অজিত দোভাল”…
সংক্ষেপে অভিযোগগুলো
এভাবে কাশ্মিরে সাম্প্রতিক পর্যটক হত্যাকাণ্ডকে সাজানো নাটক (False Flag Operation) বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন অনেক ভারতীয় নাগরিক ও সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্ট। তাদের সন্দেহের পক্ষে উত্থাপিত মূল অভিযোগগুলো সংক্ষেপে হলো,
১. মৃতদেহের অস্বাভাবিক ভঙ্গি:
অমিত ঘোষ বলেন, মৃতদেহের হাতে অস্বাভাবিকভাবে মুঠো করা ছিল, যা বাস্তবিকভাবে মৃত্যু অবস্থায় হয় না। ফলে তিনি এটি “ক্রাইসিস অ্যাক্টরের” দেহ বলেই মনে করছেন।
২. সেনা প্রত্যাহার আগে থেকেই:
হামলার আগে পেহেলগাঁও এলাকা থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল, যেমনটা আগে পুলওয়ামার সময়ও দেখা গেছে। এটা পূর্বপরিকল্পনার ইঙ্গিত দেয়।
৩. পূর্বাভাসমূলক পোস্ট:
পঙ্কজ জৈন ৭ই এপ্রিল একটি ফেসবুক পোস্টে বলেন, “অমিত শাহ কাশ্মীরে গেলে বড় কিছু ঘটবে”। কয়েকদিন পরেই হামলা ঘটে, যা সন্দেহ বাড়ায়।
৪. বিজেপি–লস্কর সংযোগ সন্দেহ:
আনন্দবাজার পত্রিকার খবরে দাবি, ধৃত লস্কর জঙ্গি বিজেপির আইটি সেলের প্রধান ছিলেন। তাহলে বিজেপির সঙ্গে লস্করের যোগাযোগ আছে কি?
৫. শুধু হিন্দুদের টার্গেট কেন?
হামলায় শুধু হিন্দু পর্যটক নিহত হওয়া উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেই অনেকের সন্দেহ। যেহেতু কাশ্মীরে হিন্দু-মুসলিম উভয়ই ভ্রমণ করে।
৬. সেনা না থাকা সত্ত্বেও জঙ্গিরা এল কীভাবে?
এত উন্মুক্ত এলাকায় কোনো নিরাপত্তা না থাকা, কোনো গুলি বিনিময় না হওয়া, ৩-৪ কিমি দূর থেকেও কারও নজরে না আসা, সবই সন্দেহজনক।
৭. পুরনো ঘটনার পুনরাবৃত্তি:
অনেকেই বলেছেন, ঠিক পুলওয়ামার মতো কাহিনি তৈরি হচ্ছে—যেখানে RDX ভর্তি গাড়ি, পুলিশ অফিসারের জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগ, দোভালের উপস্থিতি, সবই মিলছে।
৮. অজিত দোভালের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ:
বহু হামলার সময় দোভাল দায়িত্বে থেকেছেন, কিন্তু কোনো জবাবদিহিতা নেই। কেউ কেউ অভিযোগ করছেন, তিনি BJP-এর সঙ্গে চক্রান্তে যুক্ত।
এই অভিযোগগুলো একত্রে একটি সুপরিকল্পিত রাজনীতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত “False Flag” হামলার আশঙ্কা তৈরি করেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। যদিও সরকারি ও আন্তর্জাতিক মিডিয়া এখনো এ বিষয়ে নিশ্চিত কিছু বলেনি, তবে ভারতীয় নাগরিকদের মধ্যে স্পষ্টতই ব্যাপক সন্দেহ দানা বাঁধছে।