কাশ্মীর পর্যটক হামলা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক

কাশ্মীর পর্যটক হামলার পর ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক চরমে

কাশ্মীর পর্যটক হামলার পর ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক চরমে পৌঁছেছে। এ নিয়ে ভারত সরকার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ কূটনৈতিক ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ ঘোষণা করেছে।

বুধবার (২৩ এপ্রিল) কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

কাশ্মীরে পর্যটকদের উপর সন্ত্রাসী হামলা, নিহত ২৬

কাশ্মীর পর্যটক হামলার পর ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাশ্মীরের পহেলগাম শহরে ভয়াবহ পর্যটক হামলার একদিন পর ভারত সরকার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ কূটনৈতিক ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ ঘোষণা করেছে। সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর নয়াদিল্লির এই পদক্ষেপকে দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে দেখা হচ্ছে।

কাশ্মিরে হামলা : সাজানো নাটক নাকি উগ্রবাদী হামলা

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিস্রি জানিয়েছেন, কাশ্মীর হামলার “আন্তঃসীমান্ত সংযোগ” নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে আলোচনা করা হয়। বৈঠকের পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নেওয়া পদক্ষেপগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:

– প্রধান স্থল সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ ঘোষণা
– সিন্ধু নদী চুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্ত
– সার্ক ভিসা অব্যাহতি বাতিল এবং পাকিস্তানি নাগরিকদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভারত ত্যাগের নির্দেশ
– নয়াদিল্লিতে পাকিস্তানি হাইকমিশনের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টাদের “অবাঞ্ছিত ব্যক্তি” ঘোষণা
– ইসলামাবাদে ভারতীয় হাইকমিশনের সদস্য সংখ্যা ৫৫ থেকে কমিয়ে ৩০-এ নামিয়ে আনা

পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া

ভারত সরকারের ঘোষণার পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির জরুরি বৈঠক আহ্বান করেছেন। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হামলায় পর্যটক নিহত হওয়ার ঘটনায় “উদ্বেগ” প্রকাশ করে নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা ও আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছে।

রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্টের দায় স্বীকার

একটি স্বল্প পরিচিত সশস্ত্র গোষ্ঠী রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (TRF) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ হামলার দায় স্বীকার করেছে। তারা জানিয়েছে, ৮৫,০০০ “বহিরাগত” বসতি স্থাপন করছে — যা তারা “জনসংখ্যাগত পরিবর্তন” বলে অভিহিত করেছে। TRF দাবি করেছে, নিহতরা সাধারণ পর্যটক ছিল না; বরং তারা ভারতীয় নিরাপত্তা সংস্থার সাথে জড়িত ছিল।

মানবিক ক্ষতি ও আতঙ্ক

হামলায় নিহত ২৬ জনের মধ্যে ২৫ জন ভারতীয় ও একজন নেপালি নাগরিক। আহত হয়েছেন অন্তত ১৭ জন। হামলার পর আতঙ্কিত পর্যটকরা দ্রুত কাশ্মীর ছাড়তে শুরু করেছেন। কলকাতার পর্যটক মনোজিত দেবনাথ বলেন, “কাশ্মীর নিঃসন্দেহে সুন্দর, কিন্তু আমরা এখন আর নিরাপদ বোধ করছি না।”

নরেন্দ্র মোদীর প্রতিক্রিয়া

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সৌদি আরব সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরে এই হামলাকে “জঘন্য” আখ্যা দিয়ে হামলাকারীদের বিচারের আওতায় আনার অঙ্গীকার করেন। তিনি X-এ এক পোস্টে বলেন, “সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই আরও দৃঢ় হবে।”

রাজনৈতিক পটভূমি ও বিশ্লেষণ

বিশেষজ্ঞ অজয় সাহনি বলেন, কাশ্মীরে “শূন্য জঙ্গিবাদ” অর্জন অসম্ভব রাজনৈতিক সমাধানের অভাবে। তিনি উল্লেখ করেন, “স্বাভাবিকতার আখ্যান আসলে একটি উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি করে যা গোষ্ঠীগুলিকে হামলার দিকে ঠেলে দেয়।”

২০১৯ সালে কাশ্মীরের আধা-স্বায়ত্তশাসিত মর্যাদা বাতিলের পর এই অঞ্চলকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু সাম্প্রতিক এই হামলা সেই প্রচেষ্টাকে বড় ধাক্কা দিল বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।

কাশ্মীরের পহেলগাম শহরে পর্যটক হত্যাকাণ্ড কেবল মানবিক বিপর্যয় নয়, বরং এটি ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ককে আরও উত্তেজিত করেছে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নেওয়া পদক্ষেপ এবং সীমান্ত ও কূটনৈতিক সীমাবদ্ধতা এই উত্তেজনাকে আরও জটিল করে তুলেছে।

কাশ্মির হামলায় হতাহত অনেকে

জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগামে পর্যটকদের উপর ভয়াবহ হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৬ জন। বৈসরন উপত্যকার তৃণভূমিতে আজকের এই হামলাকে সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এই হামলার প্রেক্ষিতে কাশ্মীরজুড়ে শোক ও আতঙ্ক বিরাজ করছে।

কাশ্মীরে পর্যটকদের উপর সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের মধ্যে রয়েছেন মহারাষ্ট্রের দিলীপ ডিসলে ও অতুল মোনে এবং কর্ণাটকের শিবমোগা জেলার এক রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী, যাকে তার পরিবারের সামনেই গুলি করে হত্যা করা হয়। আরও দু’জন পর্যটক আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন মহারাষ্ট্রের উপ-মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ। কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া উচ্চপর্যায়ে জরুরি বৈঠক করেছেন।

২০১৯ সালের পুলওয়ামার পর সবচেয়ে বড় হামলা

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর এটিই সবচেয়ে বড় ও নৃশংস হামলা। সে সময় ৪০ জন সিআরপিএফ জওয়ান নিহত হয়েছিলেন। এবার লক্ষ্য ছিল নিরস্ত্র পর্যটক – যা পরিস্থিতিকে আরও গভীরভাবে উদ্বেগজনক করে তুলেছে।

উল্লেখ্য, এই হামলার সময় জম্মু ও কাশ্মীরে পর্যটন মৌসুম চলছে এবং আসন্ন অমরনাথ যাত্রার প্রস্তুতিও চলমান। ৩৮ দিনের এই যাত্রা শুরু হবে ৩ জুলাই, যার একটি রুট পহেলগাম থেকে। কাশ্মীরের পর্যটন খাত পুনরুদ্ধারের মাঝপথে এই হামলা নতুন করে শঙ্কা সৃষ্টি করেছে।

ওমর আবদুল্লাহ এই হামলাকে “ঘৃণ্য” ও “অবিশ্বাস্যরকম হতবাক করা” বলে বর্ণনা করেছেন।
মেহবুবা মুফতি বলেন, “কাশ্মীর ঐতিহাসিকভাবে পর্যটকদের উষ্ণভাবে গ্রহণ করেছে – এ ধরনের হামলা গভীর উদ্বেগের।”

সূত্র : আল জাজিরা

যেমন ছিলেন আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মিরী

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Scroll to Top