সম্পাদকীয় ডেস্ক
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ আর শুধু নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদই নন। তিনি হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের এক বলিষ্ঠ আন্তর্জাতিক মুখ। বিশ্ব রাজনীতির নানা গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চে তার উপস্থিতি, পরিণত ভাষা ও কূটনৈতিক দক্ষতা বাংলাদেশের ভাবমর্যাদাকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিচ্ছে।
জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন, ডি-৮ সম্মেলন, চীন সফর কিংবা সর্বশেষ থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিমসটেক সম্মেলন- সবখানেই ড. ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ পেয়েছে দৃঢ়, আত্মবিশ্বাসী ও আকর্ষণীয় উপস্থাপন। তিনি শুধু অংশগ্রহণ করেননি। বরং দেশের স্বার্থকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছেন দক্ষতার সঙ্গে।
বিশেষ করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে বৈঠকে তার উপস্থিতি ও আলোচনার ধরন আন্তর্জাতিক মহলে দারুণ সাড়া ফেলেছে। সেখানে তিনি পানিবণ্টন, সীমান্তে বিএসএফের অতর্কিত গুলিবর্ষণসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু অত্যন্ত স্পষ্ট ও যুক্তিনিষ্ঠভাবে তুলে ধরেছেন। দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তার ‘সেভেন সিস্টার’ অঞ্চলকে ‘ল্যান্ডলকড’ এবং বাংলাদেশকে ‘সমুদ্রের অভিভাবক’ হিসেবে তুলে ধরা এক কৌশলী বার্তা, যা প্রতিবেশী মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানের সাথে একাধিক বৈঠকে সামরিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তার প্রতিশ্রুতি আদায়, ড্রোন সরবরাহের মতো গুরুত্বপূর্ণ অর্জন ইতোমধ্যেই দৃশ্যমান। এই সহায়তা শুধু প্রতিরক্ষা নয়, আঞ্চলিক ভারসাম্য রক্ষায়ও বাংলাদেশের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সম্প্রতি বিশ্বের ৫০টি দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সাথে তার বৈঠক এবং যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপসংক্রান্ত ইস্যুতে তার দৃঢ় অবস্থান দেখিয়েছে অর্থনৈতিক কূটনীতিতেও তিনি সমান পারদর্শী।
আরো একটি ব্যতিক্রমী দিক হলো- তার বিদেশ সফর শেষে সাধারণত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নয়। বরং তার নিজস্ব প্রেস উইং থেকেই বিস্তারিত ব্রিফিং দেয়া হয়। এতে স্পষ্ট হয়, তিনি শুধু নেতৃত্বে নয়, আন্তর্জাতিক পরিসরে যোগাযোগ ও উপস্থাপনেও এক ভিন্নমাত্রা তৈরি করেছেন।
অতীতে কোনো রাষ্ট্রনায়কের হাত ধরে বাংলাদেশ এভাবে বিশ্বে নিজেকে উপস্থাপন করতে পারেনি। ড. ইউনূসের এই সাহসী ও দূরদর্শী নেতৃত্ব আমাদের জন্য নিঃসন্দেহে আশীর্বাদ। দল-মতের ভেদাভেদ ভুলে জাতির স্বার্থে তার অন্তর্বর্তী নেতৃত্বকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা এখন সময়ের দাবি।