মুফতি লুৎফুর রহমান ফারায়েজি
আমাদের দেশে প্রচলিত নির্বাচন পদ্ধতির নাম অসমানুপাতিক (তথা বিসপা)। আমরা চাচ্ছি আনুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচন। উদাহরণসহ বিষয়টি বুঝলে সহজ হবে। ধরুন সারাদেশে নির্বাচন হবে ১০০ আসনে। ৭টি দল উক্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করল। যেমন, বিএনপি, আওয়ামী লীগ, খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, জাতীয় পার্টি ও জামাতে ইসলাম।
প্রতিটি আসনে বিএনপি পেল ২৫ শতাংশ ভোট। ইসলামী আন্দোলন ১৫ শতাংশ। এনসিপি পেল ১০ শতাংশ ভোট। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস পেল ১৫ শতাংশ ভোট। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ১০ শতাংশ। জামাতে ইসলামী পেল ১৫ শতাংশ এবং জাতীয় পার্টি পেল ১০ শতাংশ। বর্তমান বিসপা পদ্ধতি অনুসারে ১০০ আসনের মাঝে প্রতিটি আসনেই বিজয়ী ঘোষণা করা হবে বিএনপিকে। কারণ তারা প্রতিটি আসন থেকে একক দল হিসেবে বেশি ভোট পেয়েছে। অথচ যারা একটি আসনও পায়নি, তাদের ভোটের শতাংশ সম্মিলিতভাবে বিএনপির তুলনায় ৭৫ শতাংশ। এর মানে ৭৫ শতাংশ ভোটার বিরোধীদলের হবার পরও তারা একটি আসনও পাবে না। আর মাত্র ২৫ শতাংশ ভোটার পক্ষে থাকার কারণে বিএনপি ১০০ আসনেই নিজেদের প্রতিনিধি ক্ষমতায় আসীন করবে।
এটি অন্যায্য ও অন্যায় পদ্ধতি। এ পদ্ধতির কারণে প্রতিটি আসনে প্রার্থীরা বিজয়ী হবার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে। ভোট জালিয়াতি থেকে নিয়ে কেন্দ্রদখল, টাকা দিয়ে ভোট কেনাসহ নানা ধরণের অপকর্মে লিপ্ত হয় স্থানীয় প্রার্থীরা। তাছাড়া নির্বাচন কেন্দ্রীক হত্যা, হানাহানি বৃদ্ধি পায় অস্বাভাবিকভাবে। কারণ, এক সময়ের বিজয়ী দল পরের নির্বাচনে একদম নিশ্চিহ্ন হয়ে পড়ার সম্ভাবনাও তৈরী হয়।
কিন্তু আনুপাতিক হারের নির্বাচনে এমনটি হবার সম্ভাবনা নেই। কারণ, উপরোক্ত উদাহরণে যদি ভোটের শতাংশের আনুপাতিক হারে প্রার্থী বিজয়ী ঘোষণা করা হয়, তাহলে সংসদে ১০০ আসনের মাঝে বিএনপির প্রার্থী বিজয়ী হিসেবে সদস্য হবে মাত্র ২৫ জন। আওয়ামিলীগ পাবে ১৫ সংসদ সদস্য। খেলাফত মজলিস পাবে ১৫ জন সংসদ সদস্য। ইসলামী আন্দোলন ও পাবে ১৫ জন সংসদ সদস্য। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ১০ সংসদ সদস্য। জামাতে ইসলামী পেল ১০ সদস্য এবং জাতীয় পার্টি পাবে ১০ জন সংসদ সদস্য।
এ পদ্ধতির নির্বাচনে ছোট থেকে ছোট দলের প্রতিনিধিও সংসদে যাবার সম্ভাবনা থাকে। সেইসাথে কোন দল একদম নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে না। সেইসাথে সরকার গঠন করা বিজয়ী দলের একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথও রুদ্ধ হয়ে যায়। কারণ, তাদের বিপরীতে বিরোধীদল বিশাল সংখ্যক, সুতরাং তারা ইচ্ছেমত আইন পরিবর্তন করতে পারবে না। বরং অধিকাংশের মতৈক্য জরুরী হওয়ায় আইন প্রণয়নে ভারসাম্যতা নিশ্চিত হবে।
আমি মনে করি, বিসপা পদ্ধতির বদলে আমাদের দেশে আনুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচন ব্যবস্থা প্রচলন ভবিষ্যতের একনায়কতান্ত্রিক ও স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থারোধে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হতে পারে।
লেখক : গবেষক, বিতার্কিক ও লেখক