টুডেনিউজ বিডি ডটনেট
মূল উত্তরের পূর্বে জালেমকে প্রতিহত করা ও মজলুমের পাশে দাঁড়ানোর ব্যাপারে ইসলামের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উসুল ও নীতি উল্লেখ করা হলো,
কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উসুল ও নীতি
১। জুলুম সর্বাবস্থায় হারাম ও ঘৃণিত। সেই জুলুমের শিকার মুসলিম বা অমুসলিম যেই হোক না কেন। কুরআনুল কারীমে জুলুমের ভয়ঙ্কর পরিণতি উল্লেখ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে,
ولا تحسبن الله عاجلا هما يَعْمَل الظَّالِمون ، إنما يؤخرهم ليوم تشخص فيه الأنصار، الهطعين تقيعي زاويهم لا يريد إليهم طرقهم واقتتهم هواة.
অর্থ: তুমি কিছুতেই মনে করো না জালেমগণ যা কিছু করছে আল্লাহ সে সম্পর্কে বেখবর। তিনি তো তাদেরকে সেই দিন পর্যন্ত অবকাশ দিচ্ছেন, যে দিন চক্ষুসমূহ থাকবে বিস্ফারিত। তারা মাথা তুলে দৌড়াতে থাকবে। তাদের দৃষ্টি পলক ফেলার জন্য ফিরে আসবে না। আর (ভীতি বিহ্বলতার কারণে) তাদের প্রাণ উড়ে যাওয়ার উপক্রম হবে। (সূরা ইবরাহীম, আয়াত নং ৪২-৪৩)
اسمع بهم وأبصر يوم يأتوننا لكن القلمون اليوم في ضلال مبين
অর্থ: যে দিন তারা আমার কাছে আসবে সে দিন তারা কতইনা শুনবে এবং কতইনা দেখবে! কিন্তু জালেমগণ আজ স্পষ্ট গোমরাহীতে নিপতিত। (সূরা মারয়াম, আয়াত নং ৩৮)
হাদীসেও এ বিষয়ে ভয়াবহ পরিণতির কথা বলা হয়েছে। হযরত ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- তোমরা জুলুম থেকে বেঁচে থাক। কেননা, জুলুম কেয়ামতের দিন ভীষণ অন্ধকার (ভয়াবহ শাস্তি) হয়ে দেখা দিবে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫৭৮)
সুতরাং জুলুম ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সর্বাবস্থায় হারাম, নিষিদ্ধ ও ঘৃণিত।
২। জুলুম যেখানেই হবে, সেখানে সাধ্যানুসারে এর বিপক্ষে অবস্থান করা, মজলুমের পাশে দাঁড়ানো, জালেমের শক্তি খর্ব করতে ভূমিকা রাখা একজন মুসলিমের ঈমানের অন্যতম দাবি। হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, নবীজী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তুমি তোমার ভাইকে সাহায্য কর, চাই সে জালেম হোক বা মজলুম হোক। একজন সাহাবী প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসুল, মজলুম হলে তো সাহায্য করব। কিন্তু জালেম হলে কিভাবে সাহায্য করব? নবীজী বললেন, তাকে তার জুলুম থেকে বাধা দিবে। এটাই তার সাহায্য করা। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৯৫২)
৩। জুলুমের প্রতিরোধ, জালেমের বিরুদ্ধে অবস্থান ও মজলুমের পাশে দাঁড়ানোর নানা পথ ও মাধ্যম রয়েছে। স্থান, ব্যক্তি ও সময় অনুসারে এসব পথ ও পদ্ধতিও ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। কোনও পদ্ধতি হয়ে থাকে নিকটতম, কোনওটা দূরবর্তী। জালেমের শক্তি খর্ব করার প্রশ্নে দূরবর্তী হলেও যেকোনও পদক্ষেপ ও পদ্ধতিতে সাধ্যানুসারে অংশগ্রহণ করা প্রত্যেক মুসলিমের ঈমানের অন্যতম দাবি ও আলামত। বিশেষত যখন জুলুম হবে মুসলিমদের উপর।
৪। কখনও এমন হয়, জালেমকে তৃতীয় একটি পক্ষ সহযোগিতা করে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে অন্যদের উচিত, সেই তৃতীয় পক্ষকে সহযোগিতা করা হয়-এমন কাজ থেকেও যথাসম্ভব বিরত থাকা।
মোটকথা, জালেমের বিপক্ষে, বিশেষত মুসলিমদের উপর জুলুমের বিপক্ষে দুরবর্তী কোনও মাধ্যমে সাধ্যানুসারে অংশগ্রহণ করা একজন মুসলিমের ঈমানের গায়রত ও আত্মমর্যাদার দাবি।
উপরোক্ত মৌলিক কথাগুলো আরজের পর এবার আপনার মূল উত্তর প্রদান করা হচ্ছে-
বর্তমান ফিলিস্তিনের মজলুম মুসলিম জনগোষ্ঠির বিরুদ্ধে জায়নবাদী ইসরাইল রাষ্ট্র যে জুলুম করে যায় দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট। পশ্চিমা বিশ্বের নানা দেশ ইসরাইলকে মদদ দিয়ে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে পুর্বোক্ত নীতি অনুসারে বাংলাদেশের মুসলিমদের করণীয় হলো,
বাংলাদেশের মুসলিমদের করণীয়
ক. দলীল-প্রমাণ ও প্রয়োজনীয় বিশ্লেষণ এর ধারা নং ১ এ বর্ণিত সরাসরি ইসরাইল রাষ্ট্রকে সহযোগিতাকারী। কোম্পানির পণ্য বা সেবা ক্রয় করা থেকে যথাসম্ভব বিরত থাকা।
খ. পশ্চিমা দেশের যে সকল কোম্পানীর পণ্য/সেবার বিক্রিলব্ধ লাভের একটি অংশ সেসব রাষ্ট্র কর হিসাবে পেয়ে থাকে এবং সেই সামগ্রিক কর থেকে ইসরাইল রাষ্ট্রকে সহযোগিতা করে, এমন কোম্পানির পণ্যও যথাসম্ভব ক্রয় করা থেকে বিরত থাকা একজন মুসলিমের ঈমানের গায়রত ও আত্মমর্যাদার দাবি।
গ. যে সকল পণ্য/সেবা প্রাত্যহিক জীবনে অপরিহার্য, বিশেষত খাদ্যদ্রব্য, চিকিৎসা বা প্রযুক্তি এবং সেগুলোর কোন যথোপযুক্ত বিকল্প নেই, সেসব পণ্য প্রয়োজন পরিমাণ ক্রয় ও ব্যবহারের সাথে সাথে তার বিকল্প খোঁজা ও আবিস্কার করা মুসলমানদের ঈমানী দাবি।
ঘ. ব্যক্তিগত বর্জনের পাশাপাশি ব্যবসায়িকভাবেও সকল প্রকার (উপরোক্ত ক ও খ বর্ণিত উভয় প্রকার) পণ্য ও সার্ভিস বর্জন করা। মুদি দোকান, রেস্টুরেন্ট ও অন্যান্য ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের পণ্য না রাখা। যেমন পেপসি, কোক, নেসলের পণ্য ইত্যাদি। বরং এর বিকল্প পণ্য রাখা। শুধু তাই নয়; ‘এখানে ইসরাইল রাষ্ট্রকে সহযোগতিা করে এমন কোনও পণ্য রাখা হয় না’ মর্মে লিখিত নোটিশ টাঙ্গিয়ে দেয়া-ঈমানের আত্মমর্যাদার বড় পরিচয়। এতে মানুষ সহজেই এ ধরনের পণ্য ক্রয়ে অনাগ্রহী হবে ও এর বিকল্প গ্রহণে উৎসাহিত হবে।
৩. এ ধরনের কোনও পণ্যের ডিলার হয়ে থাকলে, বা ফ্র্যাঞ্চাইজি হয়ে থাকলে তা দ্রুত প্রত্যাহারের চেষ্টা করা এবং এর বিকল্প পণ্যের ডিলারশিপ বা ফ্র্যাঞ্চাইজিং গ্রহণের চেষ্টা করা।
চ. এ ধরনের (প্রথমোক্ত ক ও খ বর্ণিত উভয় প্রকার) কোম্পানিতে বিনিয়োগ বর্জন করা। শেয়ার বাজারে এমন কোন কোম্পানির স্টক কেনা থাকলে তা দ্রুত বিক্রি করে বের হয়ে আসা। এছাড়া অন্যান্য আর্থিক ও কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান যারা শেয়ার বাজারে বড় আকারে বিনিয়োগ করে থাকে, তাদের শেয়ার বাজারের বিনিয়োগগুলো ইসরাইলী কোম্পানিতে হলে বা ইসরাইলকে সহযোগিতা করে এমন কোন কোম্পানিতে হলে সে সকল কোম্পানির বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে বেরিয়ে আসা।
ছ. ইসরাইলকে মদদ করে এমন পণ্য ও সেবা বর্জনকে দীর্ঘমেয়াদী ও কার্যকর করতে বিকল্প দেশীয় কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা এবং অন্যকে উৎসাহিত করা। এতে দেশের অর্থনীতি ও মুদ্রা শক্তিশালী হবে এবং দীর্ঘমেয়াদে দেশের বাজারে পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল হবে ইনশাআল্লাহ।
এক কথায়, এমন সকল কার্যক্রম যা ইসরাইলকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে সহযোগিতা করে তা সর্বৈব বর্জন করা, এবং অন্যকে বর্জন করতে সহযোগিতা ও উৎসাহিত করা বর্তমান সময়ে প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য এবং ঈমানের দাবি, যার প্রতি সকলকে সচেষ্ট হতে হবে।
মুসতানাদাত: দলীল-প্রমাণ ও প্রয়োজনীয় বিশ্লেষণ
১। ইসরাইল রাষ্ট্রকে সহযোগিতাকারী কোম্পানী বলতে বোঝানো হয়েছে-
১.১ যেসব কোম্পানির মালিকানা শতভাগ বা আংশিক নিচের কারো কাছে রয়েছে:
-ইসরাইলের নাগরিক
-পৃথিবীর অন্য কোনো দেশের নাগরিক যিনি জায়নবাদী ইসরাইল রাষ্ট্রকে প্রকাশ্য সমর্থন ও সহযোগিতা করেন।
-ইসরাইলে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান
– পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান যা জায়নবাদী ইসরাইল রাষ্ট্রকে প্রকাশ্য সমর্থন ও সহযোগিতা করে
১.২ যেসব কোম্পানি ১.১ এ বর্ণিত কোনো কোম্পানির ফ্র্যাঞ্চাইজি বা পার্টনার, যার ফলে উপরোক্ত কোম্পানিগুলো নিয়মিত আয়ের অংশ পেয়ে থাকে।
২। বর্তমান পরিস্থিতিতে ইসরায়েল রাষ্ট্রকে কোনও না কোনও ভাবে সহায়তা করে এমন কোম্পানির পণ্য বা সেবা ক্রয় থেকে বিরত থাকার শরীয়াহ কারণ হলো
২.১ প্রথমত, ইসরাইল রাষ্ট্রকে সহায়তা করে এমন কোম্পানির পণ্য বা সার্ভিস ক্রয়ের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে তাদেরকে জুলুমে সহায়তা করা হয়, যা সন্দেহাতীতভাবে অন্যায় ও অপরাধ। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ রব্বুল আলামীন অন্যায়ে সহযোগিতা করাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, “তোমরা গুনাহ ও যুলুমের কাজে একে অন্যের সহযোগিতা করো না।” (সুরা মায়িদাহ, আয়াত নং ২)
তাফসীরে সা’দীতে উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, এখানে জুলুম দ্বারা হত্যা, সম্পদ আত্মসাৎ ও সম্মানহানি উদ্দেশ্য। বান্দার জন্য উচিত সব ধরনের জুলুম থেকে নিজে বিরত থাকা এবং অন্যকে বিরত থাকতে সহযোগিতা করা।
উপমহাদেশের উলামায়ে কেরামের বক্তব্য
হাকীমুল উম্মত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রাহ, বলেন,
بالنکات یا نان کو اپرشین به شرعا افراد جہاد میں سے نہیں بلکہ مستقل تدابیر مقاومات کی ہیں جو فی نفسہ مباح ہیں۔ অর্থাৎ বয়কট ও অসহযোগ আন্দোলন এটা মৌলিকভাবে জিহাদ নয়; তবে তা শত্রুকে দুর্বল করার একটি কৌশল। যা মুবাহ তথা একটি বৈধ পন্থা। (হাকীমুল উম্মত কী সিয়াসী আফকার, পৃ. ৫৪)
হযরত মাওলানা যফর আহমদ উসমানী রাহ. বলেন-
اگر کسی مصلحت کے لئے ولایتی مال کو چھوڑ کر دیسی مال اختیار کر لیا جائے اور اعتقادا اسکو بھی جائز سمجھا جائے تو یہ بھی جائز ہے بلکہ مصلحت پر نظر کر کے اچھا ہے
অর্থাৎ যদি কোনো বৃহৎ স্বার্থের কারণে শত্রু-রাষ্ট্রের পণ্য ছেড়ে দেশি পণ্য ব্যবহার করা হয় তবে সেটা বৈধ; বরং বৃহৎ স্বার্থ বিবেচনায় এমনটি করা উত্তমও বটে। (ইমদাদুল আহকাম ৪/৩৩২)
মুফতী কেফায়াতুল্লাহ রহ. বলেন-
کھ رہنے کا حکم ملک و وطن کی بھلائی اور دشمن کو کرور کرنے کی ایک عزیر ہے۔
(ইংরেজদের কাপড় বয়কট করে) খদ্দরের কাপড় পরা দেশ ও জাতির কল্যাণ এবং শত্রুকে দুর্বল কয়ার একটি কৌশল। (কিফায়াতুল মুফতী ৯/৩৮৭)
৪। অর্থনৈতিক বয়কটের প্রভাব
অতীত-বর্তমানে সকল যুগেই ‘অর্থ’ যুদ্ধের অন্যতম চালিকা শক্তি। তাই বিপক্ষ শক্তিকে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল করতে ও চাপ প্রয়োগ করতে অর্থনৈতিক বয়কটের বড় প্রভাব রয়েছে। বিশেষ করে বর্তমান সময়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ব্যাপকতার ফলে অর্থনৈতিক বয়কট একটি শক্তিশালী ও কার্যকরী প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসাবে গণ্য হয়ে থাকে।
এই বয়কটের প্রভাব একদিকে যেমন জায়োনিস্ট ইসরাইল ও তার সহযোগীদের উপর রয়েছে, অন্যদিকে এর অনেক ভালো প্রভাব রয়েছে বয়কটকারী মুসলমানদের জন্যও। নিম্নে তা পেশ করা হল:
ক. জায়োনিস্ট ইসরাইল ও তার সহযোগীদের উপর বয়কটের প্রভাব:
-১৯৯৯ সাল পর্যন্ত আরব রাষ্ট্রসমূহের বয়কটের ফলে ইসরাইল প্রায় ৯০ বিলিয়ন ডলার পরিমাণ ক্ষতির শিকার হয়।
-২০০২ সালে OIC ভুক্ত রাষ্ট্রগুলো এবং মিশরের বয়কটের ফলে আমেরিকা প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতির শিকার হয়। যা তাদের বৈশ্বিক আয়ের ১৫-২০% সমপরিমাণ। (দ্র. আল মুকাতাআতুল ইকতিসাদিয়্যাহ, পৃ. ৪৬, মাস্টার্স থিসিস, আবেদ ইবনে আব্দুল্লাহ আসসাদুন)
-২০১৩-২০১৪ সালে অর্থনৈতিক বয়কটের ফলে ইসরাইলের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলার। ফলশ্রুতিতে ইসরাইলের জিডিপির পরিমাণ ৩.৪% কমে গেছে।
সম্প্রতি আল জাজিরার সংবাদে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াজ এবং অর্থমন্ত্রীর কাছে ৩০০ ইসরায়েলি অর্থনীতিবিদদের একটি প্রতিনিধি দল বিশ্বময়ী অর্থনৈতিক বয়কটের ফলে পরিস্থিতির ভয়াবহতা নির্দেশ করে একটি খোলা চিঠিতে বলেছে: “ইসরায়েলের অর্থনীতি যে সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে তার মাত্রা আপনি বুঝতে পারছেন না।
-সেখানে আরো বলা হয়েছে, বয়কটের সবচেয়ে বড় ক্ষতি হল দেশে দেশে ইসরাইলি পণ্যের বিকল্প তৈরি করা হচ্ছে। এসকল বিকল্প এবং দেশিয় পণ্যের ব্যবহার যত বেশি বাড়বে, বিশ্বব্যাপি ইহুদী পুঁজির আধিপত্য ততবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। (https://www.aljazeera.net/ebusiness/2023/12/10)
খ. মুসলমানদের জন্য বয়কটের ভালো প্রভাব:
-এর মাধ্যমে বিশ্ব মুসলিমের ঐক্যের চিত্র ফুটে উঠে। “তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে সকলে মিলে আঁকড়ে ধর, বিচ্ছিন্ন হয়ো না” (সূরা আলে ইমরান, আয়াত নং ১০৩), “নিশ্চয় মুমিনগণ পরস্পর একে অপরের ভাই” (সুরা হুজরাত, আয়াত নং ১০) ইত্যাদি আয়াত সমূহের মর্ম প্রস্ফুটিত হয়।
মুসলমানদের পরস্পরের মাঝে সাহায্য ও সহযোগিতার মনোভাব প্রকাশ পায়। “তোমরা পরস্পর একে অপরকে নেক ও তাকওয়ার কাজে সহযোগিতা কর” (সূরা মায়েদা, আয়াত নং ২), “মুমিনগণ পরস্পর সহানুভূতি, ভালোবাসা ও সহমর্মিতার ক্ষেত্রে একটি দেহের মতো। যার কোন একটি অঙ্গ আক্রান্ত হলে তা পুরো দেহের অসুস্থতা ও অনিদ্রার কারণ হয়” (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬০১১) ইত্যাদি আয়াত ও হাদীসের শিক্ষা ব্যাপক হয়।
-দেশিয় পণ্যের প্রোডাকশন এবং ব্যবহার বৃদ্ধি পায়। যা দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করে।
হাটহাজারী মাদরাসার ফতোয়া:
– ইহুদিরা হলো কুরআনে বর্ণিত অভিশপ্ত জাতি এবং মুসলিমদের প্রতি প্রচণ্ড বিদ্বেষ লালনকারী। যারা নিজেদেরকে নবী মুসা (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর অনুসারী ও আল্লাহর আস্থাভাজন হিসেবে দাবি করলেও ইতিহাসে বারবার তাদের পরিচয় বিবৃত হয়েছে প্রতারক, হন্তারক ও চুক্তিভঙ্গকারি হিসেবে। তাদের অত্যাচারের হাত সবসময় প্রসারিত হয়েছে একত্ববাদের অনুসারীদের উপর, পূত-পবিত্র আম্বিয়াদের উপর।
তাদেরই উত্তরসূরী বর্তমানের ইসরায়েলের অধিবাসীরা। যারা কুটচালের আশ্রয় নিয়ে ও হিংস্র বৃটিশদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় পুণ্যভুমি ফিলিস্তিনে ১৯৪৮ সনে ইসরাইল নামক অবৈধ রাষ্ট্র গঠন করে দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে ফিলিস্তিনের নিরীহ মানুষদের উপর সামরিক ও অর্থনৈতিক আগ্রাসন চালাচ্ছে। আর এই সামরিক আগ্রাসনের খরচের বিশাল একটা অংশ আসে বহির্বিশ্বে তাদের বিভিন্ন পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে। জেনে না জেনে যা আমরা ব্যবহার করে যাচ্ছি এবং তাদের অর্থনীতিকে সচল রাখছি। ফলস্বরূপ এই লভ্যাংশ দিয়ে তারা ফিলিস্তিনিদের উপর তাদের সামরিক আগ্রাসন অব্যাহত রেখেছে। অতএব প্রত্যেক মুসলিমের ঈমানী দায়িত্ব ও শরয়ী আবশ্যকীয় কর্তব্য হলো, সাধ্যমতো নিজের স্থান থেকে তাদের পণ্য বয়কট করে বিকল্প পণ্য গ্রহণ করা ও ফিলিস্তিনি মুসলিমদের সাহায্যে এগিয়ে আসা। আল্লাহ সবাইকে নিজের সাধ্যানুযায়ী ফিলিস্তিনিদের সহযোগিতা করার তাওফিক দান করুক। (কপি সংরক্ষিত)
এছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মুসলিম স্কলারগণ এককভাবে ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ইসরাইলি ও তাদের সমর্থনকারীদের পণ্য বর্জন ও অর্থনৈতিক বয়কটের ফতোয়া দিয়েছেন।
মারকাযু দিরাসাতিল ইকতিসাদিল ইসলামীর ফাতাওয়া থেকে সংক্ষেপিত