ডিজিটাল ছবি, তাসবির, উলামায়ে কেরাম,

ক্যামেরার ছবি ও ডিজিটাল ছবির বিধান

শায়খ ইবনুল কালাম

শরীয়তে তাছবির অকাট্যভাবে হারাম। এটি মারাত্মক কবিরা গুনাহও বটে। আরবের অধিকাংশ উলামায়ে কেরামসহ হিন্দুস্তানী সকল আলেমের নিকট ডিজিটাল-পূর্ব ক্যামেরার ছবি হাদিসে বর্ণিত তাসবিরের অন্তর্ভুক্ত।

প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সাথে রাসূল সা. এর আচরণ

ডিজিটাল ছবির বিধান

ডিজিটাল ছবির ব্যাপারে উলামায়ে কেরামের দুই ধরনের মতামত পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে অনেক আলেমের দৃষ্টিতে অধিক নির্ভরযোগ্য মত হলো, এ প্রকারের ছবিও হাদিসে বর্ণিত নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত হবে। তাই এ বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।

তবে প্রয়োজনের ক্ষেত্রে ডিজিটাল ছবি তোলা এবং তা প্রিন্ট করা জায়েজ আছে। প্রয়োজন কিছু ক্ষেত্র হলো, পাসপোর্ট, আইডি কার্ড, ভিসাপ্রাপ্তি, ড্রাইভিং লাইসেন্স ইত্যাদি আইনগত প্রয়োজনে প্রিন্ট করা, অপরাধীকে চিহ্নিত করার জন্য ছবি প্রিন্ট করা, কলেজ-ভাসির্টি কিংবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য ছবি প্রিন্ট করা, প্রতিষ্ঠানের কর্মী ও বহিরাগত ভিজিটরদের মাঝে পার্থক্য করার জন্য কর্মীদের আইডি কার্ডে ছবি যুক্ত করা ইত্যাদি। এসকল ক্ষেত্রে বাস্তব প্রয়োজন থাকায় ফুকাহায়ে কেরাম ছাড় দিয়েছে।

উল্লেখ্য, যেসব উলামায়ে কেরাম ডিজিটাল ছবি তোলার ব্যাপারে অনুমতি দিয়েছেন, তাদের মতামত অনুসারেও ঢাকাওভাবে ছবি তোলাকে জায়েজ বলার অবকাশ নেই। সেজন্য শরয়ী জরুরত পর্যন্তই এই অনুমোদনকে সীমাবদ্ধ রাখা উচিৎ। এটাকে বাহানা বানিয়ে ব্যাপকভাবে ছবি তোলার মহমারিতে লিপ্ত হওয়া উচিৎ নয়। আর বলাই বাহুল্য যে বর্তমানে ফেসবুক, ওয়াটসঅ্যাপ, ইমু ইত্যাদিতে যেসব ছবি আপলোড দেয়া হয়, সেগুলোর অধিকাংশই অপ্রয়োজনীয়। তাই ঢালাওভাবে এগুলোর অনুমোদন দেয়া যায় না।

প্রভিডেন্ট ফান্ডের বিধান

আমরা নিম্নে বাংলাদেশের বিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য দারুল ইফতা মারকাযুদ দাওয়ার একটি ফাতাওয়া উল্লেখ করে এই আলোচনার ইতি টানতে চাই। মারকাযুদ দাওয়ার মুখপাত্র মাসিক আল কাউসারের ‘আপনি যা জানতে চেয়েছে’ বিভাগে একটি প্রশ্নের উত্তরে বলা হয়েছে,
‘ডিজিটাল ছবি শরীয়াহ নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ব্যাপারে উলামায়ে কেরামের দুই ধরনের মত থাকলেও প্রিন্ট করা ও ছাপানো ছবি যে উক্ত নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত- এ ব্যাপারে আরব অনারবের প্রায় সকল নির্ভরযোগ্য আলেম একমত। তবে পাসপোর্ট, আইডি কার্ড ইত্যাদি আইনগত প্রয়োজনে প্রিন্ট করা জায়েয হবে।

উল্লেখ্য, ডিজিটাল ছবির ব্যাপারে দুই ধরনের মত থাকলেও অনেক আলেমের দৃষ্টিতে অধিক নির্ভরযোগ্য মত হল এ প্রকারের ছবিও নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত। তাই এ বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন জরুরি।’ সূত্র : মাসিক আলকাউসার, মুহাররম ১৪৪০ হি. মোতাবেক অক্টোবর ২০১৮ ঈসায়ী।

সাজাপ্রাপ্তদের ক্ষমা প্রদান, ইসলাম কী বলে

এদিকে, জাতীয় মসজিদ বাইতুল মোকাররমের খতিব মুফতি আব্দুল মালেক সাহেব তার এক প্রবন্ধে লিখেছেন,
‘শরীয়তে তাছবীর অকাট্যভাবে হারাম এবং মারাত্মক গুনাহ। আর আরবের অধিকাংশ আলেম এবং হিন্দুস্তানী সকল আলেমের নিকটেই ডিজিটাল-পূর্ব ক্যামেরার ছবি তাছবীরের অন্তর্ভুক্ত। ডিজিটাল ছবির ব্যাপারে তাদের কেউ কেউ বলেন, প্রিন্ট করার আগ পর্যন্ত এটা সম্ভবত হারাম তাছবীরের মধ্যে পড়বে না।

ব্যস! তাঁদের এ কথাকে বাহানা বানিয়ে বহুত এমন লোকও ছবির ব্যাপারে ঢিলেঢালা হয়ে গেছেন, যারা এ ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করতেন। এমনটি না হওয়া উচিত ছিল। শরয়ী প্রয়োজন ছাড়া কোনো প্রাণীর ডিজিটাল ছবি থেকেও বেঁচে থাকা জরুরি।’ সূত্র : মাসিক আলকাউসার, জুমাদাল উলা ১৪৩৭ হিজরী মোতাবেক ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ঈসায়ী।

প্রতিবিপ্লব নিরসনে রাসূল সা. এর কর্মপন্থা

এছাড়া অধিকাংশ হিন্দুস্তানী উলামায়ে কেরামের নিকটও শরয়ী প্রয়োজন ছাড়া ছবি তোলা জায়েজ নেই। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন মুফতি কিফায়েতুল্লাহ রহ., মুফতি শফি রহ., আল্লামা ইদ্রিস কান্ধলবী রহ., মাওলানা আব্দুল কাদের ফিরিঙ্গি রহ., মুফতি মাহমুদ হাসান গাংগুহী রহ., মুফতি আব্দুর রহীম লাজপুরী রহ., মুফতি রশিদ আহমাদ লুধিয়ানবী রহ., মুফতি নিজামুদ্দিন আজমী রহ., শাইখুত তাফসির মাওলানা আহমাদ আলী লাহোরী রহ., মুফতি সাঈদ আহমদ পালনপুরী রহ., মুফতি খালেদ সাইফুল্লাহ রাহমানী রহ. প্রমুখ। এছাড়া উলামায়ে দেওবন্দের বড় তিন ইলমী মারকায- দারুল উলূম দেওবন্দ, মাজাহিরুল উলূম সাহারানপুর ও জামিয়া ইসলামিয়া বানুরী টাউনও একই ফাতাওয়া দিয়ে থাকে।

লেখক : পরিচালক, নদওয়াতুল হানাফিয়া বাংলাদেশ

ইসলামে জুলুমের ধারণা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Scroll to Top