গণজাগরণ মঞ্চ,

গণজাগরণ মঞ্চ : যেভাবে শুরু হয় শাহবাগ আন্দেলন (পর্ব-৭)

(পূর্ব প্রকাশিতের পর থেকে)

হুব্বে রাসূল কর্মসূচির পর হেফাজতের উল্লেখযোগ্য কর্মসূচি আর দেখা যায় না। এভাবে একে একে তিনটি মাস পেরিয়ে যায়। এরই মধ্যে তৈরি হয় নতুন ইস্যু।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার তার নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী কথিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজ শুরু করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াতের শীর্ষ নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার বিচারকার্য শুরু হয়। যদিও অভিযোগ প্রমাণিত নয়, তবুও এ সময় তাকে ৩টি মামলায় ১৫ বছরের কারাদণ্ড এবং ২টি মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়।

তথাপি ট্রাইব্যুনালের এই সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট হতে পারেনি বামপন্থী গোষ্ঠীগুলো। ফলে আদালতের রায় অবমাননা করে তারা কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে রাজধানী ঢাকার শাহবাগে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে।

৫ ফেব্রুয়ারি বিকেলে প্রথমে কিছু অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও ব্লগার শাহবাগে জড়ো হয়। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিল ইমরান এইচ সরকার। পরে তারা অনলাইনে প্রচারণা চালাতে থাকলে এতে ছাত্রলীগ ও বামপন্থী নানা রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের লোকজন জড়ো হতে থাকে। পরে ইমরান এইচ সরকার তাদের সংগঠন ‘ব্লগার অ্যান্ড অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট নেটওয়ার্ক’ ভার্চুয়াল জগতে যা বোয়ান নামে পরিচিত, সেই বোয়ানের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করে আরো অনেককে সেখানে সম্পৃক্ত করে। পরে তারা এই জমায়েতকে নিয়ে সেখানে বসে পড়ে এবং ঘোষণা দেয় যে কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তারা শাহবাগ চত্বর ছেড়ে যাবে না।

এ সময় বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আনিসুল হক উস্কানি দিয়ে বলেন, ‘কাদের মোল্লার সাজা বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার সুযোগ এখনো রয়েছে।’ ফলে আন্দোলনে আরো গতি পায়।

পরে আন্দোলনকারীরা এ দাবি আদায়ের জন্য গঠন করে গণজাগরণ মঞ্চ। এরপর ৮ ফেব্রুয়ারি তারা বড় ধরনের সমাবেশের আয়োজন করে। সেখানে ইমরান এইচ সরকার মুখপাত্র হিসেবে কাজ করেন।

এবার আন্দোলন থেকে তারা দাবি করে, কাদের মোল্লাকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে সর্ব্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করতে হবে; যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত সকলকে সর্ব্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে; জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে; এমনিভাবে জামায়াত-শিবির সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানকে বয়কট করতে হবে। এই দাবিতে তারা দেশব্যাপী কর্মসূচিও পালন করতে শুরু করে। এরই ফলশ্রুতিতে তারা সিলেটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, চট্টগ্রামের প্রেসক্লাব চত্বর, রাজশাহীর আলুপট্টি মোড়, খুলনার শিববাড়ি মোড়, বরিশালের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, বগুড়ার সাতমাথা, যশোরের চিত্রা মোড়, কুমিল্লার কান্দিরপাড়, কুষ্টিয়ার থানা মোড় এলাকায় সমাবেশ করে।

একটা পর্যায়ে এসে গণজাগরণ মঞ্চ ইসলামের বিরুদ্ধে নগ্নভাবে বিষোদগার শুরু করে। বিভিন্ন ধরনের উস্কানিমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে ধর্মীয় নানা সিম্বলকে অবমাননা করা। যেমন ইসলামী লেবাস ও সংস্কৃতির বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়। কুকুরের মাথায় টুপি দিয়ে ইসলামী পোশাকের অবজ্ঞা করে। ইসলামপন্থীদের রাজাকারের প্রতীক বানিয়ে তোলে। ইত্যকার আরো বিভিন্ন অবমাননাকর কার্যকলাপ শুরু করে। এই বিষয়ে আমরা সামনে আরো সবিস্তর তুলে ধরব। হেফাজতের ১৩ দফার আলোচনাতেও আসবে।

এহেন পরিস্থিতিতে গণজাগরণ মঞ্চের নেতৃস্থানীয়দের নিয়ে বিভিন্ন মহলে অনুসন্ধান শুরু হয়। পরে বেরিয়ে আসে তাদের নেতাদের ইসলামবিদ্বেষের নানা দিক। দেখা গেছে, প্রত্যেকের ব্লগেই রাসূল সা.কে অবমাননা, তার পরিবার নিয়ে চরম বেয়াদবিপূর্ণ ও সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক লেখাজোখা, ইসলাম সম্পর্কে কটূক্তিসহ নানা ইসলামবিদ্বেগী লেখায় ভরপুর।

এরই মধ্যে নাস্তিক ব্লগার রাজিব হায়দারের নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় তার হত্যাকাণ্ডের সাথে ইসলামপন্থীদের জড়িয়ে ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধে জানাতে শুরু করে গণজাগরণ মঞ্চ। তবে ওই দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এরপর রাজিব হায়দারকে নিয়ে বেরিয়ে আসতে শুরু করে ভয়ঙ্কর সব তথ্য। আমার দেশ ও ইনকিলাব তার ইসলামবিদ্বেষ নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এরপর তাদের ব্যাপারে সোচ্চার হতে শুরু করে ইসলামপন্থী মহল। এরই প্রেক্ষাপটে নতুন করে সামনে আসে হেফাজতে ইসলাম।

চলবে…

হেফাজতে ইসলাম কেন গঠন করতে হলো (১ম পর্ব)
হেফাজতে ইসলাম কেন গঠন করতে হলো (পর্ব-২)
হেফাজতে ইসলাম কেন গঠন করতে হলো (পর্ব-৩)
যেভাবে হেফাজতের আবির্ভাব (পর্ব-৪)
হেফাজতে ইসলামের প্রথম কেন্দ্রীয় কমিটি (পর্ব-৫)
ইনোসেন্স অফ মুসলিমস ও হেফাজতের হুব্বে রাসূল সমাবেশ (পর্ব-৬)

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Scroll to Top