ইসরাইলের বর্তমান রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি গভীর বিভাজনের মুখোমুখি। একদিকে, ইসরাইলের সরকার গাজার বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল। অন্যদিকে দেশের নাগরিকরা, বিশেষত গাজায় বন্দী থাকা ইসরাইলি নাগরিকদের পরিবার, সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। এই প্রতিরোধে ইসরাইলের রাজনৈতিক মঞ্চে নতুন এক দ্বন্দ্বের জন্ম হয়েছে, যেখানে যুদ্ধের চলমানতা এবং মানবিক দায়বদ্ধতার মধ্যে বড় ধরনের মতবিরোধ দেখা যাচ্ছে।
গাজা যুদ্ধের প্রসার এবং জনগণের ক্ষোভ
গাজার বিরুদ্ধে অভিযান বাড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকার অব্যাহতভাবে চাপের মুখে রয়েছে। এই যুদ্ধের প্রসার, যেখানে ইসরাইলি নাগরিকরা হামাসের হাতে বন্দী, সেইসব পরিবারের জন্য এক গভীর মানবিক সংকট সৃষ্টি করেছে। তাদের দাবি, গাজার বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের পরিবর্তে তাদের প্রিয়জনদের মুক্তি দেওয়া হোক, যা সম্প্রতি তেল আবিবে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে। গাজার বন্দী বিনিময় চুক্তি এবং বন্দীদের মুক্তি নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে হাজার হাজার ইসরাইলি নাগরিক প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সামনে জড়ো হয়েছিলেন।
বিক্ষোভের অন্তর্নিহিত বার্তা
এই বিক্ষোভগুলি শুধুমাত্র সরকারের প্রতি একটি প্রতিবাদ নয়। বরং এটি ইসরাইলের রাজনৈতিক ও সামাজিক বিভাজনকেও ফুটিয়ে তুলেছে। একটি বড় অংশ এখনও গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার পক্ষেই রয়েছে, যা সশস্ত্র সংঘর্ষে জড়িতদের প্রতি সমর্থন এবং জাতীয় নিরাপত্তা বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হচ্ছে। অন্যদিকে, মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে আরও অনেকেই বন্দীদের মুক্তির দাবি জানাচ্ছেন, যাদের মতে, যুদ্ধের মাধ্যমেই মানবাধিকারের লঙ্ঘন হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা কী বলছেন?
বিশিষ্ট সাংবাদিক গিডিয়ন লেভি এই পরিস্থিতির বিশ্লেষণে বলেন, “এটি পুরনো বিক্ষোভ, যথেষ্ট সাহসী এবং নিবেদিত, তবে নেতানিয়াহুর সরকারের কাছে তা প্রভাব বিস্তার করতে পারছে না।” তিনি আরও বলেন, “ইসরাইলি সমাজের একটি বৃহৎ অংশ যুদ্ধকেই সমর্থন করে চলেছে, যা সরকারের নীতির প্রতি অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে।”
সামাজিক এবং রাজনৈতিক বিভাজন
ইসরাইলি সমাজে এই বিভাজন শুধু রাজনৈতিক রূপেই সীমাবদ্ধ নেই, বরং সামাজিক স্তরে যে এক গভীর অস্থিরতা রয়েছে, সেটিও স্পষ্ট হচ্ছে। একদিকে, বন্দীদের মুক্তি চাওয়া ইসরাইলি নাগরিকদের পক্ষ থেকে এক মানবিক দাবি উঠে এসেছে, অন্যদিকে সরকার যুদ্ধের কৌশল অব্যাহত রাখতে চাইছে। এই দ্বন্দ্ব ইসরাইলের ভবিষ্যত রাজনৈতিক দৃশ্যপটে এক গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে, যেখানে মানবিক এবং নিরাপত্তাজনিত দায়বদ্ধতার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করার চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
এখানে, ইসরাইলের জনগণ শুধু সরকারকে নয়, নিজেদের সামাজিক চেতনা এবং মূল্যবোধের মধ্যেও বিভাজিত হয়ে পড়েছে। যুদ্ধ এবং শান্তির দাবির মধ্যে ভারসাম্য স্থাপন করার দিকে দেশটির নেতৃত্বের দৃষ্টিভঙ্গি ভবিষ্যতের দিকে গড়ে উঠবে।
সামগ্রিকভাবে গাজার বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের প্রসার, বন্দীদের মুক্তি এবং মানবিক দাবীগুলির মধ্যে এক গভীর রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের সূচনা করেছে, যা ইসরাইলি সমাজের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাজন তৈরি করেছে।