গাজায় টেকসই যুদ্ধবিরতি

গাজায় টেকসই যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা কতটুকু?

টুডেনিউজ বিডি ডটনেট

গাজায় টেকসই যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা এখন অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি অনিশ্চিত। ইসরাইলি আগ্রাসন এমন এক চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে বিশ্ব কার্যত নীরব। এই ভয়াবহতা থেকে মুক্তির কল্পনাও কঠিন হয়ে পড়েছে।

তবুও কেউ কেউ ক্ষণিক স্বস্তির জন্য সাময়িক যুদ্ধবিরতির আশা করে। কেউ আবার ভিত্তিহীন হলেও গাজায় টেকসই যুদ্ধবিরতির স্বপ্ন দেখে। কিন্তু বাস্তবতা কি সে প্রত্যাশার সঙ্গে মেলে?

গাজা যুদ্ধে শিশুদেরকেই কেন বেশি টার্গেট করছে ইসরাইল

গাজায় টেকসই যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা কতটুকু?

ইসরাইলি দৃষ্টিকোণ থেকে, গাজায় অবস্থানরত ৫৮ জন জিম্মির মুক্তি অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। তবে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর যুদ্ধ জোরদারের সংকল্প সেই জিম্মিদের জীবনের ওপর বড় ঝুঁকি তৈরি করেছে।

গত ১৫ মার্চ নেতানিয়াহু এক গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি ভেঙে দেন, যার ফলে পূর্ববর্তী ছয় সপ্তাহের স্বল্পমাত্রার শত্রুতা রক্তক্ষয়ী রূপ নেয়। এতে অন্তত ১৭০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হন। এতে ইসরাইলের ভেতরেই প্রতিবাদ তীব্র হয়, জনমত জরিপে নেতানিয়াহুর ওপর আস্থা হারাচ্ছে জনগণ। তাই গাজায় টেকসই যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা অনিশ্চিত।

গাজায় যুদ্ধ বিরতির পক্ষে সমর্থন ইসরাইলিদের

হামাসও চাপের মুখে

হামাসের দিক থেকেও চাপ রয়েছে। গাজায় তাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখা যাচ্ছে, যদিও কিছু পর্যবেক্ষক একে ফাতাহের উসকানি বলছেন।

অবরোধের কারণে গাজার জনগণ এখন চরম দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি। ২ মার্চ থেকে চলা অবরোধ ৫০ দিনেরও বেশি সময় ধরে কার্যকর—এটি গত ১৮ মাসের মধ্যে দীর্ঘতম। তবুও এখনও পুরোপুরি বিশ্লেষণ নেই যে পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ।

ইসরাইলের ভেতরেই বাজছে ভাঙনের সুর

আলোচনার অগ্রগতি কোথায়?

গত সপ্তাহে হামাস গাজায় টেকসই যুদ্ধবিরতির যে প্রস্তাব দিয়েছে, তা বাস্তবিক অর্থেই টেকসই যুদ্ধবিরতির রূপরেখা প্রদান করে: যুদ্ধ সমাপ্তি, সব জিম্মি মুক্তি, ফিলিস্তিনি বন্দীদের বিনিময়, অবরোধ প্রত্যাহার এবং পুনর্গঠন।

ইসরাইল তার উত্তরে ৪৫ দিনের স্বল্পমেয়াদি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেয়। হামাস স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, তারা কেবলমাত্র গাজায় টেকসই যুদ্ধবিরতি নিয়েই আলোচনা করতে আগ্রহী।

গাজা যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে গণস্বাক্ষর ১ লাখ ৪০ হাজার ইসরাইলির

বাস্তব চ্যালেঞ্জ : সমঝোতার কোনো ভিত্তি নেই

ইসরাইলের দাবি—হামাসের আত্মসমর্পণ ছাড়া চুক্তি নয়। অন্যদিকে, হামাসের অস্ত্র হস্তান্তরের প্রস্তাবকেও তারা আত্মসমর্পণ হিসেবেই বিবেচনা করে। দুই পক্ষই যেহেতু বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছে, তাই গাজায় টেকসই যুদ্ধবিরতির পথ কার্যত রুদ্ধ।

নেতানিয়াহুই ইসরাইলের শত্রু, তাকে বন্দী করা উচিত : সাবেক সেনাপ্রধান

মধ্যস্থতাকারীরা কী করছে?

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি স্টিভ উইটকফের মতো ব্যক্তিরা চেষ্টা করছেন, কিন্তু একইসাথে রাশিয়া-ইউক্রেন, ইরান ও গাজা সংকট একত্রে সামলানো কতটা বাস্তবসম্মত, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ট্রাম্পের মতো নেতারা এখনো গাজাকে “মূল্যবান রিয়েল এস্টেট” বলছেন, যা যুদ্ধোন্মাদ নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভাকে আরো উৎসাহিত করছে।

গাজা যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জন করা অসম্ভব : ইসরাইলি সেনাপ্রধান

ইউরোপীয় ভূমিকা : ফ্রান্সের ব্যতিক্রমী অবস্থান

ইউরোপ এখনো নির্লিপ্ত। তবে ফ্রান্স একটি ব্যতিক্রম—ম্যাক্রোঁ আগামী জুনে সৌদি আরবের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্মেলনের ঘোষণা দিয়েছেন এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার সম্ভাবনাও উজ্জ্বল করেছেন।

ইসরাইলি সেনাবাহিনীতে ক্রমবর্ধমান ক্ষোভ: এক সপ্তাহে ছয়টি বিদ্রোহমূলক বিবৃতি

বাস্তবতা : গাজা আর অপেক্ষা করতে পারছে না

দুর্ভিক্ষ, বাস্তুচ্যুতি ও মানবিক বিপর্যয়ের মুখে গাজার জনগণ আর দীর্ঘ প্রতীক্ষার সামর্থ্য রাখে না। ইসরাইল গাজার ৩ শতাংশ এলাকা বাফার জোন হিসেবে দখল করে ফেলেছে, যা কার্যত ফিলিস্তিনিদের নিজেদের ভূমি থেকেই উচ্ছেদের পথ প্রশস্ত করছে।

গাজায় টেকসই যুদ্ধবিরতি এখন সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বিষয়। কিন্তু যত সময় যাচ্ছে, ততই এই শান্তির আশা ম্লান হয়ে আসছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস ছাড়া এই সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়।

গাজা যুদ্ধের ইসরাইলি লক্ষ্য অর্জন অসম্ভব
ইসরাইলের প্রভাবশালী দৈনিক ইয়েদিওথ আহরোনোথে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক নেতৃত্বের সাথে সাম্প্রতিক এক আলোচনায় ইসরাইলি সেনাপ্রধান জামির সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘বর্তমান বাহিনীর অধীনে গাজা যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জন করা অসম্ভব। বিশেষ করে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত লক্ষ্যগুলোর কিছু অর্জন অনেক কঠিন। কারণ, এখন সেনাবাহিনীতে জনবলের উল্লেখযোগ্য ঘাটতি রয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, যদি সেনাবাহিনী ভবিষ্যতের জন্য সংগঠিত ও কৌশলগত পরিকল্পনা গ্রহণ না করে এবং কেবল বিদ্যমান যোদ্ধাদের উপর নির্ভর করতে থাকে, তবে গাজায় চলমান বিশৃঙ্খলা আরো ঘনীভূত হয়ে পড়বে। বিশেষ করে হামাসকে ধ্বংস করার যে লক্ষ্য যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই ঘোষণা করা হয়েছে, তা এখনো অধরাই থেকে গেছে।

এছাড়া ২০২৪ সালের জুন মাসে ইসরাইলি দৈনিক হারেৎজ এক প্রতিবেদনে জানায়, বহু রিজার্ভ সৈন্য ঘোষণা করেছে যে তারা গাজায় আর সেনা পরিষেবায় ফিরবে না। এমনকি যদি তাদের শাস্তিও দেয়া হয় তবুও নয়।

একই সময় ইসরাইলি গণমাধ্যমে রিপোর্ট করা হয়, শত শত রিজার্ভ সৈন্য গোপনে বিদেশে পাড়ি দিয়েছে। অনেকেই তাদের ইউনিট বা কমান্ডারদের না জানিয়েই চলে গেছে।

সূত্র : আরব নিউজ 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Scroll to Top