গাজা, ইসরাইল,

গাজায় হিরোশিমার চেয়ে ছয় গুণ শক্তিশালী বিস্ফোরক ফেলেছে ইসরাইল : জাতিসঙ্ঘ

গাজায় ইসরাইলের ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র তুলে ধরে জাতিসঙ্ঘের ফিলিস্তিনবিষয়ক বিশেষ দূত ফ্রান্সেসকা আলবানিজ জানিয়েছেন, গাজা ধ্বংসে ইসরাইল হিরোশিমার ছয়গুণ শক্তিশালী বিস্ফোরক ফেলেছে।

বৃহস্পতিবার জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে ফিলিস্তিনের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে উপস্থাপিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে তিনি বলেন, প্রায় ৮৫ হাজার টন বিস্ফোরক গাজায় ব্যবহার করা হয়েছে, যার ফলে আধুনিক ইতিহাসের অন্যতম নিষ্ঠুর গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে।

আলবানিজ বলেন, ইসরাইলকে এই বিস্ফোরক নিক্ষেপে সহায়তা করার জন্য যেসব অস্ত্র কোম্পানি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সরবরাহ করেছে, তারা প্রায় রেকর্ড মুনাফা অর্জন করেছে। তিনি তেল আবিব স্টক এক্সচেঞ্জে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২১৩ শতাংশ লাভের তথ্য তুলে ধরে বলেন, ‘এতে একজন মানুষ সমৃদ্ধ হয়েছে। আর আরেকজন মানুষ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।’

তিনি মার্কিন-ইসরাইলসমর্থিত তথাকথিত ‘গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন’-কে ‘একটি মৃত্যুফাঁদ’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, এটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে ক্ষুধার্ত ও দুর্বল ফিলিস্তিনি জনগণকে হত্যা বা বিতাড়িত করা যায়। আলবানিজ জানান, সরকারি হিসাব অনুযায়ী ২ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত বা আহত হয়েছেন, তবে শীর্ষস্থানীয় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে এই সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি হামলায় অন্তত ১১৮ জন নিহত এবং ৫৮১ জন আহত হয়েছেন। ২৭ মে থেকে এখন পর্যন্ত ৬৫২ জন ত্রাণপ্রার্থী নিহত এবং চার হাজার ৫৩৭ জন আহত হয়েছেন। অক্টোবর ২০২৩ থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় নিহত হয়েছেন ৫৭ হাজার ১৩০ জন এবং আহত হয়েছেন এক লাখ ৩৪ হাজার ৫৯২ জন।

আলবানিজ সতর্ক করে বলেন, ইসরাইল গাজাকে একটি পরীক্ষাগারে পরিণত করেছে যেখানে নতুন অস্ত্র, নজরদারি প্রযুক্তি, ড্রোন ও রাডার সিস্টেম পরীক্ষা করা হচ্ছে। তিনি জানান, ৪৮টি করপোরেট প্রতিষ্ঠান—অস্ত্র নির্মাতা, ব্যাংক, প্রযুক্তি কোম্পানি, জ্বালানি সংস্থা এবং একাডেমিক প্রতিষ্ঠান—ইসরাইলি দখলদারতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য দখলদার অর্থনীতির সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত।

তিনি জাতিসঙ্ঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আহ্বান জানান, যেন তারা ইসরাইলের ওপর পূর্ণাঙ্গ অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক স্থগিত করে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে জড়িত করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে জবাবদিহি নিশ্চিত করে।

ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি সরাসরি আহ্বান জানিয়ে আলবানিজ বলেন, ‘তাদের জরুরি ভিত্তিতে ইসরাইলের সাথে সব রকম ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে এবং ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ থেকে নিজেদের সম্পূর্ণরূপে আলাদা করতে হবে।”

গণহত্যার মুখে বিশ্বব্যাপী নিষ্ক্রিয়তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি আর শুধুমাত্র অজ্ঞতা বা আদর্শগত কারণে হচ্ছে বলে তিনি বিশ্বাস করেন না, কারণ এই গণহত্যা অত্যন্ত দৃশ্যমান ও সরাসরি সম্প্রচারিত।

বক্তব্যের শেষে তিনি নাগরিক সমাজ, আইনজীবী, ট্রেড ইউনিয়ন ও সাধারণ মানুষের প্রতি আহ্বান জানান, যেন তারা বয়কট, নিষেধাজ্ঞা এবং জবাবদিহির জন্য চাপ সৃষ্টি করে আচরণগত পরিবর্তনের পথে অগ্রসর হয়। “এরপর কী হবে, তা আমাদের সবার ওপর নির্ভর করে,” বলেন ফ্রান্সেসকা আলবানিজ।

সূত্র : আল জাজিরা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Scroll to Top