গাজা নিয়ে ইসরাইলের পরবর্তী পরিকল্পনা

ওসামা আল-শরীফ

ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরায়েলের দমন-পীড়ন ক্রমশ বাড়ছে। গাজার যুদ্ধ আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচারের জন্য এক কঠিন পরীক্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিচার হতে দীর্ঘ সময় লাগবে, আর অপরাধ আদালত আদৌ ব্যবস্থা নেবে কিনা তা অনিশ্চিত। এই যুদ্ধ ধীরে ধীরে বিশ্বব্যবস্থার নৈতিকতা ও স্থায়িত্বের পরিক্ষায় পরিণত হয়েছে।

আজকের বিশ্বে ফিলিস্তিনিরা একা। তাদের কোনো শক্তিশালী সমর্থক নেই। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে তাদের অবস্থান দুর্বল। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতির সুযোগ গ্রহণ করেননি। বরং, তিনি যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করে নিজের রাজনৈতিক অবস্থান শক্তিশালী করছেন এবং ৭ অক্টোবর, ২০২৩-এ হামাসের হামলার জন্য দায়বদ্ধতা এড়ানোর চেষ্টা করছেন।

ইসরায়েলের লক্ষ্য কেবল হামাস ধ্বংস নয়, বরং গাজাকে পুরোপুরি দখল করা ও এর জনগণকে বাস্তুচ্যুত করা। গাজার ওপর আক্রমণ এক পরিকল্পিত জাতিগত নিধনযজ্ঞে রূপ নিয়েছে। শহরগুলোর অবকাঠামো ধ্বংস করা হচ্ছে, হাসপাতাল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে লক্ষ্যবস্তু বানানো হচ্ছে। মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ উঠলেও ইসরায়েল দায়মুক্তির সঙ্গে এগিয়ে চলেছে। পশ্চিম তীরে নতুন করে বসতি স্থাপন বেড়েছে, জমি দখল চলছে। ইসরায়েলি সেনারা নিরীহ মানুষ হত্যা করছে, হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে আটক করে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে।

গাজার জনগণের জন্য মানবিক সহায়তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। খাদ্য, পানি ও ওষুধের প্রবাহ নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। দুর্ভিক্ষ অনিবার্য হয়ে উঠছে। এর মধ্যেই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ও স্থল অভিযান চালিয়ে গাজায় হত্যাকাণ্ড চালানো হচ্ছে। প্রতিদিন শিশুসহ হাজার হাজার নিরীহ মানুষ নিহত হচ্ছে। হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্রগুলো ধ্বংস হওয়ায় আহতদের চিকিৎসার সুযোগও নেই।

পশ্চিম তীরে শরণার্থী শিবির ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে। হাজার হাজার ফিলিস্তিনি গৃহহীন হয়ে পড়েছে। স্থানীয়দের উচ্ছেদ করে বসতি স্থাপনের জন্য উগ্র ইহুদি বসতিস্থাপনকারীদের উস্কানি দেওয়া হচ্ছে। সেনাবাহিনী বেসামরিক এলাকায় ট্যাঙ্ক পাঠাচ্ছে, রাস্তা ও বাজারে নির্বিচারে গুলি চালানো হচ্ছে। এভাবে ফিলিস্তিনিদের অস্তিত্ব বিলুপ্ত করার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে।

বিশ্ব সম্প্রদায় নীরব। জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা উদ্বেগ প্রকাশ করলেও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে। ইসরায়েল দায়মুক্তির সুযোগ নিয়ে তার দখলদারিত্ব আরও বাড়াচ্ছে। গাজার অবরোধ ও হামলা এখনো অব্যাহত রয়েছে। ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করার পরিকল্পনা সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

এই সংঘাতের ইতিহাস দীর্ঘ। ইউরোপীয় ইহুদিরা ফিলিস্তিনে শরণার্থী হিসেবে এসেছিল। কিন্তু স্থানীয় জনগণের সঙ্গে সহাবস্থান না করে, তারা উপনিবেশ স্থাপন করল। ঔপনিবেশিক শক্তির সহায়তায় তারা ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করল। এখন, উগ্র জাতীয়তাবাদ ও ধর্মীয় চরমপন্থার মাধ্যমে পুরো ফিলিস্তিনের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ইসরায়েল যেকোনো উপায়ে ফিলিস্তিনিদের বিলুপ্ত করতে চাইছে। অথচ বিশ্ব তা দেখেও নিশ্চুপ।

সূত্র : আরব নিউজ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Scroll to Top