গাজা, ইসরাইল, ট্রাম্প, হামাস, হোয়াইট হাউজ, ইসরাইলি বন্দী,

গাজা নিয়ে ট্রাম্পের আশাবাদে বিস্ময় ইসরাইলি কর্মকর্তারা, নেই সমঝোতার লক্ষণ

গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের চলমান সামরিক অভিযান ও রাজনৈতিক অচলাবস্থার মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আশাবাদী মন্তব্যকে ঘিরে। ইসরাইলি সংবাদমাধ্যমের মতে, ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা নিয়ে আশা প্রকাশ ইসরাইলি প্রশাসনের ভেতর বিস্ময় ও সংশয় তৈরি করেছে, বিশেষত যখন হামাস ও প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর পক্ষ থেকে কোনো নমনীয়তার ইঙ্গিত মেলেনি।

ইসরাইলের চ্যানেল ১২ নিশ্চিত করেছে যে আগামী রোববার গাজা ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা। সেনাবাহিনী সেখানে গাজাসম্পর্কিত বিভিন্ন সামরিক ও রাজনৈতিক বিকল্প উপস্থাপন করবে, যার মধ্যে পুরো উপত্যকার দখল বা একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত। প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, চিফ অফ স্টাফ মন্ত্রিসভাকে জানাবেন যে সেনাবাহিনী গাজায় তার লক্ষ্য অর্জনের কাছাকাছি পৌঁছেছে।

এদিকে, ইসরাইলের অন্যতম বৃহৎ দৈনিক ইয়েদিওথ আহরোনোথ জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আশাবাদকে ঘিরে ইসরাইলি কর্মকর্তারা হতবাক। তাদের মতে, এই আশাবাদের পেছনে বাস্তব কোনো কূটনৈতিক অগ্রগতি নেই এবং যুদ্ধ শেষ করার বিষয়ে হামাস বা নেতানিয়াহুর অবস্থানে নমনীয়তা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। তারা ধারণা করছেন, ইরানের সাথে সাম্প্রতিক যুদ্ধের পর রাজনৈতিকভাবে এগিয়ে যেতে ট্রাম্প এই আশাবাদী মনোভাব গ্রহণ করেছেন।

তবে ইসরাইলি কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন যে পর্দার অন্তরালে কিছু সংলাপ চলছে, যদিও এখন পর্যন্ত তা বাস্তব কোনো ফলাফল আনতে পারেনি।

অন্যদিকে, ইসরাইলি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগে নেতানিয়াহুর সরকার ‘দেশকে বিভক্ত করতে বা শত্রুর কাছে কোনো ভূখণ্ড হস্তান্তর’ করবে না। তিনি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের ধারণাকে ‘সন্ত্রাসবাদী’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, এটি ইসরাইলের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। স্মোট্রিচ আরো দাবি করেন, নেতানিয়াহু ও ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যকে ফিলিস্তিনি স্বার্থের কাছে বন্ধক রাখার প্রচেষ্টা থেকে ইসরাইলকে মুক্ত করবেন।

গাজা যুদ্ধের সমাপ্তি এবং বন্দী ইসরাইলিদের মুক্তির বিষয়ে আলোচনার কিছু অগ্রগতির কথা জানিয়েছে ইসরাইলি সূত্রগুলো, বিশেষ করে কৌশলগত বিষয়ক মন্ত্রী রন ডার্মারের আসন্ন ওয়াশিংটন সফরকে কেন্দ্র করে। তবে ইসরাইলি ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনের মতে, এখন পর্যন্ত আলোচনার জন্য কোনো প্রতিনিধি দল পাঠানো হয়নি। কারণ মূল মতবিরোধ যুদ্ধ সমাপ্তির শর্ত এবং হামাসের দাবিকৃত নিরাপত্তা গ্যারান্টি ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে।

এছাড়া, হারেৎজ পত্রিকা জানিয়েছে, হোয়াইট হাউসের একজন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন যে রন ডার্মারকে ওয়াশিংটনে জানানো হবে যুদ্ধ বন্ধ করা এবং অবশিষ্ট বন্দীদের মুক্তি জরুরি। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, যুদ্ধ বন্ধের পর হামাসকে ভাঙা যেতে পারে। তবে ওয়াশিংটন এই চাপ প্রয়োগে কতটা দৃঢ় অবস্থানে থাকবে তা এখনো পরিষ্কার নয়।

এই প্রেক্ষাপটে গাজা পরিস্থিতি আরো জটিল ও অনিশ্চিত হয়ে উঠছে। একদিকে কূটনৈতিক আশাবাদ, অন্যদিকে রাজনৈতিক হঠকারিতা এবং ময়দানে সেনা অভিযান, সব মিলিয়ে গাজা সঙ্কটের শিগগিরই কোনো সমাধান দেখা যাচ্ছে না।

সূত্র : আল জাজিরা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Scroll to Top