টুডেনিউজ বিডি ডটনেট
গাজায় ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর চলমান সামরিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদ হলেও, এই যুদ্ধ যে শুধু ফিলিস্তিনিদের জীবন ও জনপদ ধ্বংস করছে তা নয়—এর গুরুতর প্রভাব পড়ছে ইসরায়েলি সমাজ ও সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরেও। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান সে চিত্রই তুলে ধরছে।
নেসেটে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপস্থাপিত তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি বাহিনীতে আহত সৈন্যের সংখ্যা ৭৮,০০০-এ পৌঁছেছে। শুধু গত কয়েক মাসেই এই সংখ্যা বেড়েছে ১৬,০০০। এ এক বিশাল মানবিক ও প্রশাসনিক বোঝা, যা যুদ্ধের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির ইঙ্গিত দেয়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই বিপুল সংখ্যক আহতের পেছনে একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো—যুদ্ধের তীব্রতা ও রিজার্ভ বাহিনীর অপ্রস্তুত অংশগ্রহণ। তথ্য অনুযায়ী, আহতদের ৫১ শতাংশের বয়স ৩০ বছরের কম এবং অধিকাংশই রিজার্ভ বাহিনীর সদস্য। এই প্রজন্মের উপর যুদ্ধের শারীরিক চেয়েও বেশি পড়ছে মানসিক চাপ। ইতিমধ্যে PTSD বা পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার আক্রান্ত সৈন্যদের সংখ্যা বাড়ছে, যা সেনাবাহিনীর ভেতর এক দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সংকটের দিকে ইঙ্গিত করছে।
যারা ভাবেন, যুদ্ধ মানে শুধু ‘বিপক্ষকে দমন’ করা, তাদের কাছে এই পরিসংখ্যান এক কঠিন বাস্তবতা তুলে ধরছে। ৬,৩৬৩ জন সৈন্য স্থায়ী চিকিৎসা সহায়তার প্রয়োজন পড়ছে, যার মধ্যে বহুজন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। সরকারকে ৪০০ নতুন মনোবিজ্ঞানী নিয়োগ করতে হয়েছে—এতেই স্পষ্ট, যুদ্ধ মানে কেবল গোলাবারুদের খেলা নয়, এটি মানুষের মনোজগতে ক্ষত সৃষ্টির একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া।
অর্থনৈতিকভাবেও এই যুদ্ধ ইসরায়েলি প্রশাসনের উপর চাপ সৃষ্টি করছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আহত সৈন্যদের পুনর্বাসনের বাজেট ২০২০ সালের তুলনায় ৭২ শতাংশ বেড়ে ২০২৪ সালে দাঁড়িয়েছে ৮৪১ মিলিয়ন শেকেলে। বাজেট শুধু বাড়ানোই নয়, সৈন্যদের জন্য বিদেশি কর্মী নিয়োগ সহজ করার দাবি উঠছে, যার মাধ্যমে বোঝা যায় প্রশাসনিক ব্যবস্থাও এই চাপ নিতে হিমশিম খাচ্ছে।
সবচেয়ে উদ্বেগজনক দিক হলো—এই সংকটের কোনও সমাধান সরকারের নীতিতে দেখা যাচ্ছে না। কমিটির প্রধান এমকে এট্টি হাভা আতিয়া যেভাবে বলেছেন, বিদেশি কর্মীদের অস্থায়ী পারমিট বাড়িয়ে চলা নয়, বরং একটি স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন। কারণ, প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকা আহত ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত সৈনিক এবং তাদের পরিবারগুলোর দুর্ভোগ আর সামাল দেওয়া যাচ্ছে না।
এ অবস্থায় প্রশ্ন ওঠে—এই যুদ্ধের প্রকৃত ফলাফল কী? ফিলিস্তিনে হাজার হাজার নারী-শিশু নিহত হচ্ছে, বসতি ধ্বংস হচ্ছে, অথচ যুদ্ধের ফল ইসরায়েলও পাচ্ছে ক্ষয়, ক্ষতি ও সংকটের চেহারায়। যুদ্ধের নৈতিকতা নিয়ে যেমন প্রশ্ন উঠেছে, তেমনি তার কৌশলগত বুদ্ধিবৃত্তিক ভিত্তিও আজ দুর্বলতর।
যুদ্ধ যত দীর্ঘ হয়, তার ক্ষত তত গভীরে যায়—শুধু শত্রুর বুকে নয়, নিজের হৃদয়েও।
সূত্র : মিডল ইস্ট মনিটর