গাজা যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জন করা অসম্ভব : ইসরাইলি সেনাপ্রধান

গাজা যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জন করা অসম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন ইসরাইলি সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইয়াল জামির। মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) মিডল ইস্ট মনিটরের এক প্রতিবেদনে এদই তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরাইলি সেনাবাহিনীর জন্য হামাসকে নির্মূল করার ঘোষিত লক্ষ্যসহ অন্যান্য গাজা যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জন করা অসম্ভব। যদি ঘোষিত লক্ষ্য অর্জন করতেই হয়, তাহলে সৈন্য সঙ্কট দূর করতে হবে। একইসাথে সেনাবাহিনীর কাঠামোতেও মৌলিক পরিবর্তন আনতে হবে।

কেন গাজা যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জন করা অসম্ভব

ইসরাইলের প্রভাবশালী দৈনিক ইয়েদিওথ আহরোনোথে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক নেতৃত্বের সাথে সাম্প্রতিক এক আলোচনায় জামির সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘বর্তমান বাহিনীর অধীনে গাজা যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জন করা অসম্ভব। বিশেষ করে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত লক্ষ্যগুলোর কিছু অর্জন অনেক কঠিন। কারণ, এখন সেনাবাহিনীতে জনবলের উল্লেখযোগ্য ঘাটতি রয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, যদি সেনাবাহিনী ভবিষ্যতের জন্য সংগঠিত ও কৌশলগত পরিকল্পনা গ্রহণ না করে এবং কেবল বিদ্যমান যোদ্ধাদের উপর নির্ভর করতে থাকে, তবে গাজায় চলমান বিশৃঙ্খলা আরো ঘনীভূত হয়ে পড়বে। বিশেষ করে হামাসকে ধ্বংস করার যে লক্ষ্য যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই ঘোষণা করা হয়েছে, তা এখনো অধরাই থেকে গেছে।

গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য আত্মসমর্পণের শর্ত দিলো ইসরাইল
ইসরাইলি সেনাবাহিনীতে ক্রমবর্ধমান ক্ষোভ: এক সপ্তাহে ছয়টি বিদ্রোহমূলক বিবৃতি

যুদ্ধে হামাসের কৌশল

জামির উল্লেখ করেন, ‘হামাস অভিযানের শুরু থেকেই তার কৌশলগত নীতি অব্যাহত রেখেছে। আঘাত হানার পরেও তারা সক্ষমতা বজায় ধরে রেখেছে।’

রিজার্ভ সৈন্যদের যুদ্ধ না করা ঘোষণা

এর আগে, ২০২৪ সালের জুন মাসে ইসরাইলি দৈনিক হারেৎজ এক প্রতিবেদনে জানায়, বহু রিজার্ভ সৈন্য ঘোষণা করেছে যে তারা গাজায় আর সেনা পরিষেবায় ফিরবে না। এমনকি যদি তাদের শাস্তিও দেয়া হয় তবুও নয়।

একই সময় ইসরাইলি গণমাধ্যমে রিপোর্ট করা হয়, শত শত রিজার্ভ সৈন্য গোপনে বিদেশে পাড়ি দিয়েছে। অনেকেই তাদের ইউনিট বা কমান্ডারদের না জানিয়েই চলে গেছে।

ইসরাইলি সৈন্যরা কেন যুদ্ধ চায় না

এই পরিস্থিতির পেছনে একটি বড় কারণ হিসেবে উঠে এসেছে সৈন্যদের মধ্যে প্রচণ্ড মানসিক চাপ ও উদ্বেগ। অব্যাহত লড়াইয়ের কারণে তাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক এবং পেশাগত জীবনে যে প্রভাব পড়ছে, তা নিয়েও তারা গভীরভাবে চিন্তিত। এমনকি অনেকে বিদেশে গিয়ে আইনি ব্যবস্থার মুখোমুখিও হয়েছেন, যেখানে আন্তর্জাতিক অধিকার সংগঠন ও আইনজীবীরা গাজায় সংঘটিত সহিংসতার জন্য ইসরাইলি বাহিনীর সদস্যদের জবাবদিহির আওতায় আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

গাজা যুদ্ধ শুরুর দেড় বছর পরও হামাস উপত্যকার বেসামরিক ও সামরিক নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে, যা ইসরাইলি সামরিক প্রচেষ্টার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এই প্রেক্ষাপটে ইসরাইলি সেনাপ্রধানের এমন মন্তব্য যুদ্ধের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও নীতিনির্ধারকদের পরিকল্পনা নিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

গাজার ৭০ শতাংশের বেশি স্কুল ইসরাইলি হামলার শিকার
ইউএনআরডব্লিউএ জানিয়েছে, গাজার ৭০ শতাংশের বেশি স্কুল ইসরাইলি হামলার শিকার হয়েছে। এর মধ্যে সংস্থাটির নিজস্ব ১৬২টি স্কুল অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যেগুলো এক সময় লাখ লাখ ফিলিস্তিনি শিশুদের শিক্ষা দিতো।

সংস্থাটি দুঃখ প্রকাশ করে জানায়, গাজার ওপর চলমান ইসরাইলি আগ্রাসন লাখো শিশুকে বাস্তুচ্যুত করেছে। তাদেরকে মানসিকভাবে ভেঙে দিয়েছে এবং শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেছে।

এ সময় শিশুদের শিক্ষা জীবন ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে ইউএনআরডব্লিউএ।

যেভাবে যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ হয়
উল্লেখ্য, ১৮ মার্চ ইসরাইলি সেনাবাহিনী গাজায় আবারো এক মারাত্মক সামরিক আক্রমণ চালায়। এর মধ্য দিয়ে জানুয়ারিতে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি ও বন্দী বিনিময় চুক্তি ভেঙে ফেলা হয়।

গাজায় নিহতের সংখ্যা
জাতিসঙ্ঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই নৃশংস হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৫১ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠই নারী ও শিশু।

নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা
এছাড়া, ২০২৩ সালের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে।

অন্যদিকে, ইসরাইল বর্তমানে গাজায় সংঘটিত এই যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গণহত্যার মামলার মুখোমুখিও হয়েছে।

ইসরাইলবিরোধী ৯০ হাজার পোস্ট মুছে ফেলেছে মেটা

এতো হামলার পরও এখনো ৭৫ শতাংশ টানেল ধ্বংস করতে পারেনি ইসরাইল
সূত্র : মিডল ইস্ট মনিটর

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Scroll to Top