টুডেনিউজ বিডি ডটনেট
ইসরাইলি সেনাবাহিনীতে গাজা যুদ্ধের প্রভাব ক্রমশ প্রকট হয়ে উঠছে। সম্প্রতি ইসরাইলি পার্লামেন্ট নেসেটে এক বিশেষ অধিবেশনে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরাইলি দখলদার বাহিনীতে আহত সৈন্যের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৮,০০০-এ, যা পূর্ববর্তী পরিসংখ্যানের চেয়ে ১৬,০০০ জন বেশি।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি অধিবেশনে জানান, আহতদের মধ্যে ৫১ শতাংশের বয়স ৩০ বছরের নিচে এবং এদের অধিকাংশই রিজার্ভ বাহিনীর সদস্য। শুধু শারীরিক আঘাত নয়, যুদ্ধ-পরবর্তী মানসিক ট্রমাও মারাত্মক আকার ধারণ করছে। মন্ত্রণালয় আশঙ্কা করছে, PTSD বা পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত সৈনিকদের সংখ্যা দ্রুতই বৃদ্ধি পাবে।
প্রতিনিধির বক্তব্য অনুযায়ী, আহতদের মধ্যে প্রায় ১০ শতাংশ মাঝারি থেকে গুরুতর মাত্রার আঘাতে ভুগছেন। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে ৬,৩৬৩ জন আহত স্থায়ী চিকিৎসা সহায়তার প্রয়োজনবোধ করছেন। এই প্রেক্ষাপটে সরকার মানসিক স্বাস্থ্যসেবার পরিসর বাড়ানোর অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে ৪০০ জন নতুন মনোবিজ্ঞানী নিয়োগ করেছে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপস্থাপিত তথ্য অনুযায়ী, আহত সেনাদের পুনর্বাসন ও চিকিৎসা সহায়তার জন্য বরাদ্দ বাজেট ২০২০ সালের তুলনায় ৭২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৪ সালে দাঁড়িয়েছে ৮৪১ মিলিয়ন শেকেল (প্রায় ২৩২ মিলিয়ন ডলার)। ২০২০ সালে এই খাতে বরাদ্দ ছিল ৪৯২ মিলিয়ন শেকেল (প্রায় ১৩৬ মিলিয়ন ডলার)।
অধিবেশনে কমিটির বিভিন্ন সদস্য, বিশেষ করে প্রতিবন্ধী সৈনিকদের নিয়ে কাজ করা প্রতিনিধিরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানান যে, আহত ও অক্ষম সৈনিকদের সেবায় নিযুক্ত বিদেশি কর্মীদের নিয়োগ পদ্ধতি যেন আরও সহজ করা হয়। কমিটির প্রধান এমকে এট্টি হাভা আতিয়া বিদেশি কর্মীদের জন্য অস্থায়ী পারমিট বাড়ানোর পরিবর্তে একটি স্থায়ী ও টেকসই সমাধানের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
তিনি সতর্ক করে বলেন, আহত সৈনিকদের পাশাপাশি তাদের পরিবারগুলিও ক্রমবর্ধমান দুর্ভোগের মুখে পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে সরকারকে আরও মানবিক ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
ইসরাইলের অভ্যন্তরীণ এই পরিসংখ্যান স্পষ্ট করে দিচ্ছে—গাজায় চলমান যুদ্ধ শুধু ফিলিস্তিনিদের উপরই নয়, বরং ইসরাইলি সমাজের অভ্যন্তরেও এক গভীর সংকট ও মানবিক বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুদ্ধের প্রকৃত খরচ শুধু রাজনৈতিক নয়, তা মনের গভীর ক্ষত হয়ে থেকেও যায়।
সূত্র : মিডল ইস্ট মনিটর