নেতানিয়াহু

গাজা যুদ্ধ নেতানিয়াহুর টিকে থাকার কৌশল : শিন বেট প্রধান

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, যিনি দেশটির সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী নেতা হিসেবে ১৮ বছর ধরে ক্ষমতা ধরে রেখেছেন, আবারো এক নতুন রাজনৈতিক ও আইনগত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এবারের অভিযোগ এসেছে দেশের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেটের প্রধান রোনেন বারের কাছ থেকে।

নেতানিয়াহু যেভাবে ইসরাইলের একচ্ছত্র নেতা হয়ে ওঠেন

সম্প্রতি আস্থাভঙ্গের অভিযোগ এনে বারকে বরখাস্ত করার চেষ্টা করেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী। তবে ইসরাইলি সুপ্রিম কোর্ট তা আপাতত স্থগিত রেখেছে। এরই মধ্যে বার আদালতে দাখিল করা এক হলফনামায় নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছেন—যার মধ্যে রয়েছে, শিন বেট প্রধানকে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আনুগত্য রাখতে বলা এবং বিরোধীদের উপর গুপ্তচরবৃত্তি করতে চাপ দেওয়া।

গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই : নেতানিয়াহু

ক্রমাগত কেলেঙ্কারির মুখেও ক্ষমতায় নেতানিয়াহু

নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে একের পর এক কেলেঙ্কারির অভিযোগ থাকলেও, তিনি তার চিরাচরিত কৌশলেই টিকে আছেন—অভিযোগ অস্বীকার, দোষারোপ, এবং সংকট ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দেওয়া। দুর্নীতির মামলায় তার বিরুদ্ধে বিচার চলমান, কিন্তু তিনি বারবার আদালতে হাজিরা পিছিয়ে দিচ্ছেন, এমনকি গাজা যুদ্ধকেও এই বিলম্বের হাতিয়ার বানিয়েছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক নিমরোদ ফ্ল্যাশেনবার্গের মতে, ইসরাইলি সমাজে এখন “কেলেঙ্কারির ক্লান্তি” বিরাজ করছে, যেখানে সমাজের একাংশ প্রধানমন্ত্রীর আচরণকে গণতান্ত্রিক অবক্ষয়ের প্রমাণ হিসেবে দেখছে, অন্য অংশ মনে করে এটি তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।

নেতানিয়াহুর মাধ্যমেই কি মধ্যপ্রাচ্যে আধিপত্যবাদ পুনর্গঠন করবেন ট্রাম্প

দুর্বল বিরোধী দল ও দৃঢ় জোট

নেতানিয়াহুর টিকে থাকার আরেকটি বড় কারণ হলো ইসরাইলের বিরোধী রাজনীতির ভাঙন। বেনি গ্যান্টজের মতো নেতারা দুর্বল ভূমিকা পালন করায়, জনগণের আস্থা হ্রাস পেয়েছে। অন্যদিকে, নেতানিয়াহুর জোট দিন দিন আরও ডানপন্থী ও অতি-অর্থোডক্স শক্তির উপর নির্ভরশীল হয়ে উঠেছে। তার ঘনিষ্ঠ দুই মন্ত্রী ইটামার বেন-গভির ও বেজালেল স্মোট্রিচ এই ধারা স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত করছেন।

মিশরের অর্থনীতিকে যেভাবে চাপে ফেলছেন নেতানিয়াহু

গাজা যুদ্ধ : একটি রাজনৈতিক অস্ত্র?

৭ অক্টোবর, ২০২৩ সালের হামলার পর গাজায় যুদ্ধ শুরুর মাধ্যমে নেতানিয়াহু নতুন করে রাজনৈতিক ক্ষমতা সুসংহত করেছেন, যদিও ওই হামলার প্রতিরোধে ব্যর্থতার জন্য অনেকেই তাকেই দায়ী করেন। গাজায় আটক বন্দীদের মুক্ত করতে ব্যর্থতা, বা হামাসকে সম্পূর্ণভাবে পরাজিত না করলেও, যুদ্ধের সূচনার তুলনায় তিনি বর্তমানে আরও শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছেন।

তবে +৯৭২ ম্যাগাজিন জানিয়েছে, যুদ্ধ ইসরাইলের জনগণের মধ্যে দিন দিন অজনপ্রিয় হয়ে উঠছে এবং প্রায় এক লাখ রিজার্ভ সৈন্য সেনা ডাকে সাড়া দেয়নি।

‘কাতারগেট’ কেলেঙ্কারি : নেতানিয়াহু কেন বারবার আদালতে হাজিরা দিচ্ছে

রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও হতাশা

এখন ক্ষমতাসীন দলকে সরাতে হলে এখন কেবল একটি পথ খোলা—নির্বাচন। কিন্তু সেটি অনুষ্ঠিত হবে না ২০২৬ সালের ২৭ অক্টোবরের আগে। অ্যাটর্নি জেনারেল তাকে অযোগ্য ঘোষণা করতে পারেন তত্ত্বগতভাবে, তবে সেটি সম্ভাবনাহীন। এ অবস্থায় তিনি বিরোধী শিবিরের কৌশলগত দুর্বলতা তার অবস্থান আরও মজবুত করেছে।

জোট সংহত রাখতে হামাসের বিরুদ্ধে শক্তি প্রদর্শন করছে নেতানিয়াহু

আন্তর্জাতিক আলোচনার জটিলতা

ট্রাম্প প্রশাসনের দূতরা তিনটি জটিল আলোচনায় যুক্ত—এর একটি গাজা। ইরান-যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনা, গাজার জনসংখ্যা স্থানান্তরের পরিকল্পনা এবং মিশর-ইসরাইল উত্তেজনা—সবকিছুই একে অপরের সঙ্গে জড়িত। আলোচনার ব্যর্থতা ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী আরও চরম পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করতে পারে।

ইসরাইলের বড় শত্রু এখন নেতানিয়াহু

ভবিষ্যতের দিকনির্দেশ

বিশ্লেষকদের মতে, যদি রোনেন বার ও শিন বেটের আইনি সংঘাত আরও তীব্র হয় এবং গাজা যুদ্ধবিরোধী আন্দোলন বিস্তৃত হয়, তবে পরিস্থিতি পরিবর্তনের সম্ভাবনা সৃষ্টি হতে পারে। তবে এই মুহূর্তে ইসরাইলি জনগণের জন্য প্রতিরোধমূলক কৌশল সীমিত—যেমন ধর্মঘট, যা অতীতে কিছুটা ফলপ্রসূ হয়েছে।

ইসরাইলি শাসনব্যবস্থা এক জটিল সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে—যেখানে কেলেঙ্কারি, দুর্বল বিরোধী দল, শক্তিশালী জোট এবং যুদ্ধকালীন রাজনীতি একসাথে মিলে একটি অস্থির, অথচ স্থিতিশীল শাসনের প্রতিচ্ছবি তৈরি করছে। তবুও, নেতৃত্বে পরিবর্তন আনার পথ সীমিত, এবং তা যতটা না আইন বা নৈতিকতার প্রশ্ন, তার চেয়েও বেশি রাজনৈতিক বাস্তবতার সাথে যুক্ত।

ঢাকায় ‘মার্চ ফর গাজা’: নেতানিয়াহু, ট্রাম্প ও মোদির ছবিতে জুতা মেরে ক্ষোভ প্রকাশ

উল্লেখ্য, গাজা যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচিতে অংশ নিলো ১ লাখ ৪০ হাজার ইসরাইলি। শনিবার (১৯ এপ্রিল) মিডল ইস্ট মনিটরের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

সর্বশেষ পাওয়া তথ্যমতে, স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে ১২৭,২৫৫ জন বেসামরিক নাগরিক এবং ১১,১৭৯ জন সামরিক সদস্য রয়েছেন। বেসামরিকদের মধ্যে ৭৩,৫৯৯ জন সাধারণ ইসরাইলি নাগরিক, ১,৫০০ জন সক্রিয় সৈন্যের পিতামাতা এবং ১,৩০০ জন নিহত সৈন্যদের আত্মীয়স্বজন অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।

মার্কিন ইহুদিরা কেন ইসরায়েল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে

এই আন্দোলন যুদ্ধের দীর্ঘস্থায়ীতা ও সরকারের বন্দিমুক্তিতে ব্যর্থতা নিয়ে জনসাধারণের গভীর উদ্বেগকে তুলে ধরছে।

সূত্র : আল জাজিরা

মার্কিন-ইসরাইল সম্পর্ক কি তবে ভেঙ্গে যাচ্ছে

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Scroll to Top