পাকিস্তান, চীন, তালেবান

চীনের উদ্যোগে ‘সম্পর্ক পুনরুদ্ধার’ পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের

বেইজিংয়ে চীন, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ত্রিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই বৈঠকের মাধ্যমে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের পথে এগোচ্ছে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। চীন এতে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ভূমিকা নিচ্ছে।

২০১৭ সালে এই ত্রিপক্ষীয় ফোরাম গঠিত হয়। সর্বশেষ বৈঠক হয়েছিল ২০২৩ সালে। এবারের বৈঠকে তিন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা উপস্থিত ছিলেন। চীন জানায়, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান রাষ্ট্রদূত বিনিময়ের বিষয়ে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে। সম্পর্ক উন্নয়নে চীন সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।

পাকিস্তানের কাছে নিরাপত্তা এখন প্রধান উদ্বেগ। বিশেষ করে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)-এর হামলা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৪ সালে পাকিস্তানে সহিংসতা ৭০ শতাংশ বেড়েছে। নিহতের সংখ্যা প্রায় এক হাজার। এসব হামলার জন্য আফগানিস্তানে থাকা উগ্রবাদীদের দায়ী করে ইসলামাবাদ।

এ বিষয়ে চীনও উদ্বিগ্ন। সিপিইসি প্রকল্পে নিযুক্ত চীনা নাগরিকদের ওপর একাধিক হামলা হয়েছে। এছাড়া চীনের দৃষ্টিতে পূর্ব তুর্কিস্তান ইসলামিক মুভমেন্ট (ইটিআইএম) একটি বড় হুমকি। চীন চায়, এসব গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আফগানিস্তান ব্যবস্থা নিক।

বিশ্লেষকদের মতে, চীন ও পাকিস্তানের জন্য আফগানিস্তানের নিরাপত্তা এখন অভিন্ন স্বার্থ। চীন মনে করছে, এই গোষ্ঠীগুলো পরস্পরের সাথে যুক্ত। তাই আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহযোগিতা প্রয়োজন।

এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ভারত-পাকিস্তান সাম্প্রতিক উত্তেজনার ঠিক পরে। পেহেলগামে হামলার প্রতিশোধে ভারত পাকিস্তানে বিমান হামলা চালায়। পাকিস্তানও এর জবাব দেয়। এ সময়ে পাকিস্তান চীনা অস্ত্র ব্যবহার করে। আর চীন প্রথম থেকেই পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নেয়।

একই সময়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে ফোনে কথা বলেন। তিনি পেহেলগাম হামলার নিন্দা করার জন্য কৃতজ্ঞতা জানান। এটি আফগান-ভারত সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতার ইঙ্গিত দেয়।

ভারতের সাথে তালেবানের সম্পর্ক পাকিস্তানের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে। অতীতে তালেবান ও তাদের মিত্রদের হাতে ভারতের কূটনৈতিক মিশন আক্রান্ত হয়েছিল। তবে নতুন পরিস্থিতিতে দুই পক্ষ আবার যোগাযোগ শুরু করেছে।

তালেবান এখন বাণিজ্য ও আঞ্চলিক সংযুক্তির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। পাকিস্তান চায়, তালেবান টিটিপির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক। দুই পক্ষের অগ্রাধিকার ভিন্ন হলেও চীন একটি সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করতে চায়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, তালেবানের ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি। ভারত, পাকিস্তান বা চীন কারোরই উদ্বেগ সৃষ্টি না করেই তাদের আঞ্চলিক কূটনীতি পরিচালনা করতে হবে।

ত্রিপক্ষীয় বৈঠকটি আঞ্চলিক নতুন বাস্তবতা তৈরি করছে। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার হতে পারে। চীন এই প্রক্রিয়ায় সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছে। একইসাথে ভারতের সাথে তালেবানের ঘনিষ্ঠতা নতুন প্রশ্ন তুলছে। সবমিলিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন কূটনৈতিক সমীকরণ তৈরি হচ্ছে।

সূত্র : আল জাজিরা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Scroll to Top