চীন ছাড়া অন্যান্য দেশের শুল্ক স্থগিত করলেন ট্রাম্প

টুডেনিউজ বিডি ডটনেট

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি আকস্মিক ঘোষণায় জানিয়েছেন, চীন ব্যতীত বিশ্বের অন্যান্য দেশের ওপর আরোপিত সকল “পারস্পরিক” শুল্ক ৯০ দিনের জন্য সম্পূর্ণভাবে স্থগিত করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত মধ্যরাত থেকেই কার্যকর হয়েছে। একইসঙ্গে চীনের ওপর শুল্কহার ১০৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।

ট্রাম্প তার নিজস্ব সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল-এ এক বিবৃতিতে বলেন, “আমি ৯০ দিনের জন্য শুল্ক বিরতির অনুমোদন দিয়েছি এবং এই সময়ে পারস্পরিক শুল্ক ১০ শতাংশ হ্রাস করছি, যা সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর হবে।”

তবে চীনের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করে তিনি আরও লেখেন, “চীন বিশ্ববাজারের প্রতি যে অব্যাহত অবজ্ঞা প্রদর্শন করেছে, সে কারণে আমি যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে চীনের ওপর শুল্কহার ১২৫ শতাংশে উন্নীত করছি, যা তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে।”

তিনি যোগ করেন, “আশা করি, খুব শিগগিরই চীন বুঝবে—মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশকে একতরফাভাবে শোষণের দিন শেষ হয়েছে। এ প্রবণতা আর গ্রহণযোগ্য নয়, এবং টেকসইও নয়।”

ট্রাম্পের এই ঘোষণার পেছনে চীনের নতুন প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপের হুমকি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তার প্রশাসন শুরু থেকেই চীনের বাণিজ্যনৈতিক কৌশল ও বাজারনীতির কঠোর সমালোচক ও প্রতিপক্ষ হিসেবে পরিচিত।

এদিন, ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট মন্তব্য করেন, “এই নীতির প্রতি অটল থাকার জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অসাধারণ সাহসিকতা প্রদর্শন করেছেন।” তিনি আরও বলেন, “বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে আমরা বার্তা দিয়েছি— প্রতিশোধ পরিহার করুন, এবং পুরস্কার প্রাপ্ত হোন। আলোচনায় অংশ নিতে ইচ্ছুক প্রতিটি দেশের কথাই আমরা গুরুত্ব সহকারে শুনতে প্রস্তুত।”

বেসেন্টের ভাষ্যমতে, এই সিদ্ধান্ত প্রমাণ করে যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বাণিজ্যকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছেন এবং সৎ বিশ্বাসে একটি সুবিবেচিত আলোচনার পরিবেশ গড়ে তুলতে চান।

ট্রাম্প যখন তার বার্তাটি প্রকাশ করেন, তখন তার সঙ্গে ছিলেন ট্রেজারি সেক্রেটারি বেসেন্ট ও বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিক। পরে এক্স (পূর্বতন টুইটার)-এ লুটনিক লেখেন, “স্কট বেসেন্ট এবং আমি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বসা অবস্থায় ছিলাম, যখন তিনি তার রাষ্ট্রপতিত্বকালের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ ট্রুথ পোস্টটি লেখেন।”

তিনি আরও মন্তব্য করেন, “বিশ্ব এখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্বে বিশ্ববাণিজ্যের ভারসাম্য পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এগিয়ে আসছে। কিন্তু চীন এর বিপরীত পথে হাঁটছে।”

ট্রাম্পের ঘোষণার পরপরই মার্কিন শেয়ারবাজারে ইতিবাচক সাড়া পরিলক্ষিত হয়। ডাও জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাভারেজ বেড়ে যায় ২,২০০ পয়েন্ট বা ৫.৯ শতাংশ। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক বৃদ্ধি পায় ৬.৫ শতাংশ এবং নাসডাক কম্পোজিট ৮ শতাংশেরও বেশি উল্লম্ফন করে। বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, গত সপ্তাহে সম্ভাব্য শুল্ক বৃদ্ধির জেরে যে অস্থিরতা দেখা দিয়েছিল, এই ঘোষণা তা প্রশমিত করেছে।

তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এখনো স্পষ্ট করে বলেননি যে কানাডা ও মেক্সিকো ব্যতীত অন্যান্য বাণিজ্য অংশীদারদের ওপর যে ১০ শতাংশ সর্বজনীন শুল্ক আরোপিত হয়েছে, তা এই স্থগিতাদেশের আওতায় আসবে কি না। এ বিষয়ে ট্রেজারি সেক্রেটারি বেসেন্ট নিশ্চিত করেছেন, যেসব দেশ “পারস্পরিক শুল্ক”-এর আওতাভুক্ত, তাদের ওপর ১০ শতাংশ হারে শুল্ক বলবৎ থাকবে।

সূত্র : সিএনএস

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Scroll to Top