দিপ্র হাসান
শৈবাল দিঘিরে বলে উচ্চ করি শির
লিখে রেখো এক ফোঁটা দিলেম শিশির।
এই কথাটা না হয় মানা যায়। এক ফোঁটা শিশির দিছে এক ফোঁটার বাহাদুরি সে করতেই পারে। কিন্তু শৈবাল যদি দাবি করে, দিঘির পুরা জলই তো আমার দান- তখন কেমন লাগবে?
আবার ধরেন, বহু টন ওজনের একটা ট্রাক ব্রিজ পার হচ্ছে। ব্রিজের কিছু হচ্ছে না। কিন্তু যেই একটা কবুতর আইসা ট্রাকের উপর সওয়ার হইল অমনি ব্রিজটা ভাইঙ্গা গেল। এখন এই ব্রিজ ভাঙ্গায় কবুতরের অবদান কতটুকু?
হাসিনা বাংলাদেশের সকল মজলুম জনগোষ্ঠীর শত্রু ছিল। ২৮ অক্টোবর, পিলখানা, শাপলা ম্যাসাকারের সাথে ছিল বিএনপি, জামায়াত, হেফাজতের লাখ লাখ কর্মীর উপর নির্যাতন। ছিল অসংখ্য নিরপরাধ মানুষকে জঙ্গি বানানোর জুলুম। এমনকি আওয়ামী লীগের আজন্ম সহোদর বামদের উপরও নেমে আসছিল অত্যাচারের খড়গ হস্ত। ফলে আওয়ামী পক্ষ ছাড়া সব পক্ষই উন্মুখ হয়ে ছিল হাসিনাকে তার গদি থেকে টেনে নামানোর জন্য।
এমন অবস্থায় ছাত্ররা পথে নামল। কি জন্য? কোটার জন্য। দেশের জন্য না, দশের জন্য না, ১৫ বছরের জুলুমের প্রতিবাদেও না। শুধু তাদের চাকরির সুবিধার জন্য তারা পথে নামল।
কিন্তু মানুষ যেহেতু ১৫ বছরের জুলুমের কারণে হাসিনার প্রতি ক্ষিপ্ত ছিল তাই এই কোটার আন্দোলন তাদের কোনও সুবিধা দিবে না জেনেও তারা ছাত্রদের সমর্থনে পথে নামল। যাদের কোটার দরকার নাই তারাও নামল।
যখন সমন্বয়কদের গ্রেফতার করে আন্দোলন প্রায় দমিয়ে ফেলা হইছিল তখন এতদিনের নির্যাতিত রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক লোকজন নতুন করে আন্দোলনের ছক কষতে থাকে। প্রাইভেট ভার্সিটির পোলাপান কোটার আশায় থাকে না জানি। কিন্তু এই সময়টায় এরাই হয়ে উঠল নয়া যুদ্ধের তুর্যবাদক।
তারপর হাসিনার পতন হইল। রাজনৈতিক দলের লোকেরা বলল, ছোট ছোট ফেরেস্তারা আমাদের মুক্তিদূত হিসেবে আবির্ভূত হইছে বইলা আইজ আমরা মুক্ত। আর ছোট ছোট ফেরেস্তারা কি বলল? তারা বলল, রাজনৈতিক দলগুলো ব্যর্থ হইছে বইলাই আমাদের পথে নামতে হইছে। বলল, ১৫ বছরে আপনারা কিছু করতে পারেন নাই। আমরা ৩৬ দিনেই হাসিনারে ফালায়া দিছি।
তাইলে পুরানা দিনের রাজনীতি নতুন বাংলাদেশে কারা ফিরায়া আনল? কারা অকৃতজ্ঞতার সুত্রপাত করল? কারা অপরকে অস্বীকার করে মুক্তিযুদ্ধের আওয়ামী লীগ হইয়া উঠতে চাইল? আমাদের মুক্তিদূত এই ছোট ছোট ফেরেস্তারা কি বলতে পারত না যে, এই কৃতিত্ব আমাদের একার না। এই কৃতিত্ব সমগ্র জাতির? এতে কি তাদের কৃতিত্ব কইমা যাইত? এর সাথে আবার যুক্ত হইছে মাস্টার মাইন্ড বানানোর খেলা। একদল বাটপার আন্দোলন ধ্বংসের জন্য একজনকে মাস্টার মাইন্ড ঘোষণা দিল। তার উচিত ছিল বলা যে, এখানে একক কোন মাস্টার মাইন্ড নাই। আন্দোলনের সাথে যুক্ত সবাই ছিল মাস্টার মাইন্ড। কিন্তু না তার নয়া বঙ্গবন্ধু হওয়া লাগবে। সে হাসি মুখে কৃতিত্ব বগলদাবা কইরা বসল। শুরু হইল কৃতিত্ব নিয়া কাদা ছোঁড়াছুড়ি। ফলে বিপ্লব পুরা হওয়ার আগেই সব ভেস্তে গেল।
রাজনীতিতে নয়া যুগের সূচনা করতে হইলে ছাত্রদেরকে এই সব ভুলগুলো অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে। হাসিনাত্তোর বাংলাদেশে বিপ্লবের পক্ষের সকল মত ও পথের লোকদের ঐক্যবদ্ধ রেখে তাদের চলতে হবে। মনে রাখতে হবে, আপনি বা আমি একা কিছুই না। কিন্তু আমাদের সম্মিলিত শক্তি জগতের যে কোন অপশক্তিকে নাড়িয়ে দিতে পারে।
লেখকের ফেসবুক থেকে নেয়া