জাতীয় নাগরিক পার্টিতে এলজিবিটি সমর্থক, কী বলছেন শীর্ষ নেতারা

টুডেনিউজ বিডি ডটনেট

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী ছাত্রদের রাজনৈতিক সংগঠন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় কমিটিতে এলজিবিটি অ্যাক্টিভিস্ট মুনতাসির মামুনকে নেয়ার কথাবার্তা চলছে। এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তুমুল সমালোচনা শুরু হয়েছে।

দেশের সচেতন মহল আশঙ্কা করছেন, এর মধ্য দিয়ে নতুন দল আগামীতে বিকৃত ও ঘৃণিত এলজিবিটি মতাদর্শ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেবে কিনা? কিছুদিন আগে এলজিবিটি প্রমোটকারী কুখ্যাত ব্যক্তিত্ব জর্জ সরোসের ছেলে বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। তার এ সফরও সন্দেহের ঘোর আরো ঘনীভূত করেছেন। এছাড়া গতকাল দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের বক্তব্যেও লিঙ্গ বৈষম্য দূর করার কথা বলা হয়েছে। এতে সন্দেহকে আরো পাকাপোক্ত করেছে। ফলশ্রুতিতে বোদ্ধা মহল বিষয়টি নিয়ে এনসিপির দলীয় অবস্থান পরিষ্কার করার আহ্বান জানিয়েছে।

বাংলাদেশে এলজিবিটি প্রতিরোধে সোচ্চার প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘আবু সাঈদরা কি কাওমে লুত তথা এলজিবিটি মতাদর্শ বাস্তবায়নের জন্য শহীদ হয়েছেন? আজকের ঘোষিত নাগরিক পার্টিতে গে এক্টিভিস্ট (MD Muntasir Mamun)কে পজিশন দেয়া হয়েছে।

তিনি হোচিমিনসহ দেশের অন্যান্য এলজি টিভি এক্টিভিস্টিদের সাথে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে। আন্দোলনের সময় হোচিমিন শেখ হাসিনার পক্ষ নেয়। কিন্তু মুনতাসির ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সমর্থন দেয়। এটা নিয়ে বিরোধ তৈরি হয় এই ভেবে যে হোচির জন্য এল জিটিভি এক্টিভিজম বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

ইলগা-এশিয়া (ILGA) হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে এলজিটিভি নেটওয়ার্ক, যেখানে দুই হাজারের বেশি এনজিও জড়িত, বাংলাদেশের আটটির মতো এনজিও যুক্ত। আমার প্রকাশিত (সমতার আড়ালে.. বইতে বিস্তারিত আছ.) ফেসবুক পেইজ এবং ইমেলের মাধ্যমে দেশের সব এক্টিভিস্টদের কাছে বিচার দেয়।

একজন ব্যক্তিগত লাইফে বেডরুমে কে কি করছে তা নিয়ে ভাবিত নই। কিন্তু ২০০০ শহীদ এবং প্রায় ৩০ হাজার আহতের বিনিময়ে অর্জিত নতুন বাংলাদেশের নেতৃত্বে এসেছে গে এক্টিভিস্ট।

৯০%+ মুসলিমের দেশে ইসলামিক মূল্যবোধ জলাঞ্জলি দিতে কে ছাত্র-জনতা প্রাণ দিলো?’

জুলাই আন্দোলনের অন্যতম ব্যক্তিত্ব সাদিক কায়েম লিখেছেন, ‘জুলাই বিপ্লবের কারিগর শহীদ আবু সাঈদ, শহীদ ওয়াসিম, শহীদ শান্ত, শহীদ মুগ্ধ, শহীদ ইয়ামিনরা এদেশের আপামর জনসাধারণের আধ্যাত্মিক মূল্যবোধকে বুকে লালন করে জুলাইয়ে বুক চিতিয়ে দিয়েছিলেন। জুলাইয়ের অগ্রসৈনিকরা, আমাদের শহীদী মিছিলের নেতারা ইসলামী মূল্যবোধ ও জীবনাদর্শকে লালন করেছেন- গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তির সেকথা ভুলে যাওয়া উচিত নয়।

বিষয়টি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তুমুল সমালোচনা শুরু হলে এনসিপির কেন্দ্রীয় অনেক নেতা ব্যক্তিগতভাবে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন।

এ বিষয়ে এনসিপির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসানাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘রাজনীতির আগেও আমার পরিচয়, আমি একজন মুসলমান। আমি আমার এই পরিচয় ধারণ করি, সবসময় করেই যাবো। আমার বিশ্বাসকে কিংবা আমার দেশের মানুষের বিশ্বাসকে আঘাত করে কোনো রাজনীতি আমি কখনও করবো না।’

তিনি আরো বলেন, ‘স্পষ্ট কণ্ঠে জানিয়ে দিতে চাই, ধর্মীয় মূল্যবোধের পরিপন্থী কিছুই আমার বা আমাদের রাজনীতিতে কখনও জায়গা পাবে না। যা হয়েছে, সেটা ছিলো একটি অনিচ্ছাকৃত ভুল। আমরা নির্ভুল নই। কোনো ভুল করলে আপনারা আমাদের নিজের ভাই মনে করে ভুল ধরিয়ে দেবেন, এবং ‘যদি’, ‘কিন্তু’, ‘অথবা’ ব্যাতিত আমরা আমাদের ভুল সংশোধন করে নিবো।’

একই পোস্ট দলটির অন্য মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমও শেয়ার করেছেন।

এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব মাহিন সরকার বলেন, ‘মুনতাসির ভাই আমাদের সেফ হোমের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন, কিন্তু উনার এমন কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অবগত নই। আল্লাহর কসম! বঙ্গদেশে আমরা সমকামীতাকে চাই না।’

হাসানাতের পোস্ট শেয়ার করে এনসিপির যুগ্ম-আহ্বায়ক আশরাফ মাহদি বলেন, ‘আমাদের বক্তব্য পরিস্কার। ভুল ধরিয়ে দেয়ার জন্য আপনাদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা। এভাবেই ভাই মনে করে আমাদের ভুল ধরিয়ে দিবেন। আমরা শুধরে নেব। অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।’

এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব তারেক রেজা বলেন, ‘একজন এলজিবিটিকিউ এক্টিভিস্ট আর আমি তো এক প্লাটফর্মে রাজনীতি করতে পারি না।’

তিনি আরো বলেন, ‘মুনতাসির ভাইকে আমি চিনেছিলাম রিফাত, হান্নান আর মাহিনদের কাছ থেকে। একদিনই দেখা হয়েছিলো আমার। কিন্তু ওয়াল্লাহি! আমি ঘুর্ণাক্ষরেও উনার এলজিবিটিকিউ এক্টিভিজমের ব্যাপারে কিছু জানতাম না। বড় ভাইদের সাথে আলাপ করে জানলাম, তার এলজিবিটিকিউ এক্টিভিজমের ব্যাপারে তেমন কেউই কিছু জানতেন না। তাছাড়া তার নাম এখনো ঘোষণায় আসেনি। আর আসবেও না। ব্যক্তি মুনতাসিরকে তার জুলাইয়ের অবদানের জন্য শ্রদ্ধা করতাম। তবে তার এলজিবিটিকিউ এক্টিভিজমের প্রতি সুস্পষ্ট ঘৃণা প্রকাশ করলাম।’

পরিশেষে তিনি মুনতাসিরের জন্য হেদায়েতের দোয়া করেন।

এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব রিফাত রশিদ লিখেছেন, ‘একজন মুসলিম হিসেবে LGBTQ বা গে কমিউনিটিকে নৈতিক জায়গা থেকে আমি সমর্থন করি না। মুনতাসীর রহমান জুলাই অভ্যুত্থানকালে আমাদের যোগাযোগ মেইনটেইন করার জন্য অনেক বেশি সাহায্য করেছিলেন। কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে আমরা আটকা পরার পর সেখান থেকে আমাদের উদ্ধার করতে মুনতাসির রহমান আমাদের হেল্প করেন এবং এর পরবর্তীতেও জুলাইয়ের আন্দোলন চলাকালে উনি আমাদের সাথে কানেক্টেড ছিলেন। সেইসূত্রে তাকে আমরা হিউম্যান রাইটস এক্টিভিস্ট হিসেবেই জানতাম। কিন্তু আজকে সোশ্যাল মিডিয়ায় তার বেশ কিছু ছবি ছড়িয়ে পরেছে, যা দেখে জানতে পারলাম তিনি LGBTQ এর সাথে জড়িত। ব্যপারটা বেশ বিব্রত করেছে আমাকে। আমি আবারও আমার এথিক্যাল পজিশন স্পষ্ট করছি যে আমি কোনোপ্রকার সমকামিতাকে সমর্থন করি না।’

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Scroll to Top