টুডেনিউজ বিডি ডটনেট
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘তার সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হলো যত দ্রুত সম্ভব জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা।’
তিনি জানান, প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন হলে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
শুক্রবার, ব্যাংককে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে ভাষণ দিতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে লাখ লাখ নারী, পুরুষ, শিশু ও যুবক নয় মাসব্যাপী এক নৃশংস সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছিল।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায়সঙ্গত ও স্বাধীন সমাজের স্বপ্ন দেখেছিল—যেখানে প্রতিটি মানুষ তার স্বপ্ন পূরণ করতে পারে।
গত পনেরো বছরে জনগণ, বিশেষ করে যুবসমাজ, তাদের অধিকার ও স্বাধীনতা সংকুচিত হতে দেখেছে বলেও মন্তব্য করেন ড. ইউনূস।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রের প্রায় সব প্রতিষ্ঠানে অবক্ষয় ঘটেছে। নাগরিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে।
গণঅভ্যুত্থানে সাধারণ জনগণ একটি স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটিয়েছে বলে জানান তিনি। এতে প্রায় দুই হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, যাদের বেশিরভাগই তরুণ ও ১১৮ জন শিশু।
ড. ইউনূস বলেন, “বাংলাদেশ তার ইতিহাসে এক নবজাগরণ দেখেছে।”
তিনি জানান, এই গণজাগরণে নেতৃত্ব দেয়া ছাত্রনেতারা তাকে এই সংকটময় সময়ে দেশের দায়িত্ব নিতে অনুরোধ করেন। জনগণের স্বার্থে তিনি এই দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য শক্তিশালী ও দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার গ্রহণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তিনি বলেন, ‘আমরা সুশাসন প্রতিষ্ঠা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই এবং অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা আনার লক্ষ্যে কাজ করছি। এসবই আমাদের সংস্কারের মূল লক্ষ্য।’
সরকার ইতোমধ্যে ছয়টি কমিশন গঠন করেছে। এসব কমিশনের কাজ হলো বিচার ব্যবস্থা, নির্বাচন, জনপ্রশাসন, পুলিশ, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং সংবিধান সংস্কার নিয়ে সুপারিশ দেয়া।
তিনি জানান, কমিশনগুলো ইতোমধ্যে তাদের সুপারিশ জমা দিয়েছে। সরকার সেগুলো সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে।
একটি ৭ সদস্যবিশিষ্ট ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’ গঠন করা হয়েছে, যার নেতৃত্বে রয়েছেন তিনি নিজেই। এতে ছয়টি কমিশনের প্রধানরাও রয়েছেন। এই কমিশন সুপারিশগুলো পর্যালোচনা ও গ্রহণ করবে।
সম্প্রতি সরকার আরও চারটি কমিশন গঠন করেছে—গণমাধ্যম, স্বাস্থ্য, শ্রম এবং নারী অধিকার বিষয়ে নীতিগত সুপারিশ দেওয়ার জন্য।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশ পুনর্গঠনের এই সময়ে আমরা প্রত্যেক নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করতে দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ—তারা নারী হোক বা সংখ্যালঘু।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ও সম্মেলনের চেয়ারপারসন পেতংতার্ন শিনাওয়াত্রা, বিমসটেক মহাসচিব রাষ্ট্রদূত ইন্দ্র মনি পান্ডে এবং সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধিরা।