জাতীয় সঙ্গীত, জাতীয় পতাকা

জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তনের দাবি নতুন নয়

অতীতে বাংলাদেশে জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তনের একাধিক উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল, যা অনেকেরই অজানা। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর খন্দকার মোশতাক আহমেদ রাষ্ট্রপতি হন। ক্ষমতায় এসেই তিনি ‘আমার সোনার বাংলা’ বদলে দেয়ার লক্ষ্যে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. দ্বীন মুহাম্মদের নেতৃত্বে সেই কমিটি কাজী নজরুল ইসলামের ‘চল চল চল’ এবং ফররুখ আহমেদের ‘পাঞ্জেরী’ গান দুটি জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে প্রস্তাব করে। তবে রাজনৈতিক পালাবদলে সেই প্রস্তাব আর আলোর মুখ দেখেনি।

এরপর ১৯৭৯ সালে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তনের আরেকটি উদ্যোগ নেয়া হয়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমান এক গোপন চিঠিতে রবীন্দ্রনাথের লেখা গান সংস্কৃতির চেতনাবিরোধী উল্লেখ করে ‘প্রথম বাংলাদেশ, আমার শেষ বাংলাদেশ’ গানটিকে জাতীয় সঙ্গীত করার প্রস্তাব দেন। সেই প্রস্তাব অনুযায়ী বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠানে গানটি প্রচারের নির্দেশও দেয়া হয়। কিন্তু ১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমান নিহত হলে এ উদ্যোগও স্থগিত হয়ে যায়।

২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তনের আরেকটি প্রস্তাব দেয়া হয়। ২০০২ সালে তৎকালীন মন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মুজাহিদ ইসলামী মূল্যবোধের আলোকে জাতীয় সঙ্গীত সংশোধনের যৌথ সুপারিশ প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার কাছে পেশ করেন। সেই প্রস্তাব মন্ত্রণালয় ঘুরে শেষ পর্যন্ত আর বাস্তবায়নের পর্যায়ে পৌঁছায়নি।

উল্লেখযোগ্য যে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তন অযোগ্য—এমন কোনো আইন নেই। বিশ্বের নানা দেশে সময় ও পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তনের দৃষ্টান্ত রয়েছে। যেমন ২০০৬ সালে নেপাল, ১৯৯৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা, এমনকি ইরাক ও আফগানিস্তানেও একাধিকবার জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তিত হয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Scroll to Top