আহমেদ নিঝুম
জীববৈচিত্র্য—পৃথিবীতে বসবাসরত প্রাণী, উদ্ভিদ ও অন্যান্য জীবনের বৈচিত্র্য—মানব অস্তিত্ব ও পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় একটি অপরিহার্য উপাদান। আধুনিক পরিবেশবিজ্ঞান যেমন এটি রক্ষার জন্য ব্যাপকভাবে তাগিদ দিচ্ছে, তেমনি ইসলামও এই বিষয়ে সুস্পষ্ট ও নীতিগত নির্দেশনা প্রদান করেছে। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের নানা দিক উঠে এসেছে, যা মানবজাতির প্রতি আল্লাহর এক বিশেষ দায়িত্ব হিসেবে বিবেচিত।
সৃষ্টিজগতের কল্যাণে জীববৈচিত্র্য
পবিত্র কোরআনের একাধিক আয়াতে জীববৈচিত্র্য তথা প্রাণিকুলের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, *“তিনি তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন আসমানসমূহ ও জমিনের সমস্ত কিছু নিজের অনুগ্রহে।”* (সুরা জাসিয়া: ১৩)। এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা যায়, জীবজগৎ মানুষের কল্যাণেই সৃষ্টি হয়েছে, আর মানুষকে তাদের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে।
প্রাণিকুলের সামাজিকতা ও অধিকার
সুরা আনআমের ৩৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, *“ভূ-পৃষ্ঠে বিচরণশীল এমন জীবন নেই বা নিজ ডানার সাহায্যে এমন কোনো পাখি ওড়ে না কিন্তু তারা তোমাদের মতো একটি জাতি।”* এই আয়াত প্রাণিকুলের মধ্যে সমাজবদ্ধতা, শ্রেণিবিন্যাস ও অধিকার স্বীকার করার পক্ষে একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। আল্লামা ইবনে কুতাইবা এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, তারা খাবার, জীবিকা ও ধ্বংস থেকে রক্ষার দিক থেকে মানুষের মতো। অর্থাৎ ইসলাম প্রাণিকুলের জীবনধারা, পরিবেশ ও নিরাপত্তা রক্ষাকে গুরুত্ব দেয়।
প্রাণিজগতের উপকারিতা ও সংরক্ষণের নির্দেশনা
সুরা নাহলের ৫-৮ আয়াতে আল্লাহ প্রাণিকুলের বহুমুখী উপকারিতা তুলে ধরেছেন। সেখানে বলা হয়েছে, তারা শীত প্রতিরোধ করে, ভার বহন করে, খাদ্য ও রূপে সৌন্দর্য এনে দেয় এবং এমন অনেক কাজে আসে যা মানুষ নিজে একা করতে সক্ষম নয়। *“তিনি সৃষ্টি করেছেন ঘোড়া, খচ্চর ও গাধা—আরও অনেক কিছু যা তোমরা জানো না।”* এই নির্দেশনা প্রাণিজগতের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও তাদের সুরক্ষার প্রতি সচেতনতা তৈরি করে।
ইতিহাসে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের নজির
নবী নুহ (আ.)-এর যুগের মহাপ্লাবনের সময় আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিয়েছিলেন, *“তাতে উঠিয়ে নাও প্রতিটি শ্রেণির যুগলের দুটি করে।”* (সুরা হুদ: ৪০)। এটি একটি সুস্পষ্ট নিদর্শন যে, সংকটকালেও আল্লাহ প্রাণিকুলের অস্তিত্ব রক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন। এটি ইসলামে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের ঐতিহাসিক প্রমাণ।
ইসলাম জীববৈচিত্র্যকে কেবল একটি পার্থিব সম্পদ হিসেবে নয়, বরং একটি ঈমানি দায়িত্ব ও আমানত হিসেবে চিহ্নিত করেছে। প্রতিটি মুসলমানের উচিত নিজ নিজ জায়গা থেকে জীবজগৎ রক্ষায় যতটুকু সম্ভব সচেষ্ট হওয়া। প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় উদাসীনতা ইসলামসম্মত নয়। বরং সজাগতা, দায়িত্ববোধ এবং প্রয়োজনে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়াই হলো প্রকৃত মু’মিনের পরিচয়। ইসলামী শিক্ষার আলোকে একটি টেকসই পরিবেশ গড়ে তোলাই হবে সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি অর্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।