জুলাইয়ের ঐক্য

জুলাই গণঅভ্যুত্থান কি বেহাত হয়ে গেল?

রিদওয়ান হাসান

বাংলাদেশে যতগুলো গণঅভ্যুত্থান হয়েছে, ছাত্র নেতৃত্বের সবচেয়ে কার্যকরী প্রথম সূতিকাগার হয়েছিল ১৯৯০ এর গণঅভ্যুত্থান। এর আগে ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন এবং ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে ছাত্র সমাজের ব্যাপক ভূমিকা থাকলেও রাজনৈতিক টালমাটাল পরিস্থিতিতে তা কেবলমাত্র ভূমিকা ও অবদানের নীরব স্বীকৃতি হিসেবে স্থান পেয়েছিল। মূলত ৯০ এর গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ সামরিক শাসনের পতন ঘটিয়ে ১৯৯১ সালে ইতিহাসের সবচেয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচনের পর ছাত্র নেতৃত্বের ইতিহাস একেবারে মাটিচাপা পড়েছিল।

১৯৯০ এর গণঅভ্যুত্থানকেও কেউ কেউ দলীয়ভাবে দ্বিতীয় স্বাধীনতা বলে প্রচার করতো। বিএনপিও এই গণঅভ্যুত্থানের বিজয় দাবি করতো, আওয়ামী লীগও দাবি করতো। ৬ ডিসেম্বর একইসাথে গণতন্ত্র মুক্তি দিবস পালন করতো, একই সাথে জাতীয় পার্টিও সংবিধান সংরক্ষণ দিবস পালন করতো। এরপর দ্বিদলীয় দুষ্টচক্রে ছাত্র রাজনীতির বিকল্প রাষ্ট্রচিন্তা তখনও দাফন হয়েছিল।

অনুরূপ জুলাই গণঅভ্যুত্থানেও ছাত্র রাজনীতির সূতিকাগার যেভাবে ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলন দিয়ে শুরু হয়েছিল, তার আগে ২০১৩ সালে শাপলা চত্বর আন্দোলন এবং ২০২১ সালে মোদিবিরোধী আন্দোলনের ব্যর্থ হওয়ার পর মাদরাসা শিক্ষার্থী ও আলেম সমাজের নীরব প্রস্তুতি চলছিল, তারই ধারাবাহিক সংগ্রামে প্রাথমিক বিজয় হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল জুলাই গণঅভ্যুত্থান। ঠিক যেভাবে ১৯৯০ এর গণঅভ্যুত্থানের পূর্বে ১৯৮৩ সালে শিক্ষানীতিবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সামরিক শাসনের রক্ষচক্ষুকে চ্যালেঞ্জ করেছিল ছাত্র সমাজ। এরপর কী হয়েছিল? তা আমাদের জানা। এখন কি ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে ১৯৯০ এর গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী পরিণতির দিকে যাচ্ছে ছাত্র সমাজ? কোথায় সেই ছাত্র সমাজের বিকল্প রাষ্ট্রচিন্তা ও সাংবিধানিক সংস্কার?

৮ আগস্ট সংবিধান সংরক্ষণ দিবসের মতো আরেকটি দিবস পালিত হতে যাচ্ছে নতুন বাংলাদেশ দিবস? কী এসেছে নতুন? ১৯৯০ পরবর্তী সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসেছিল, যারা স্বল্প সময়ে নির্বাচন দিয়েছিল, এই ইন্টেরিম সরকার কিছুদিন বেশি সময় নিচ্ছে, এটাই কি নতুন?

যে ছাত্র সমাজের নেতৃত্বে জুলাই গণঅভ্যুত্থান রচিত হয়েছে, সাংবিধানিক মারপ্যাঁচে সেই ছাত্র সমাজের ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে এখনও রাষ্ট্রপতি চুপ্পু বহাল, যিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতি আর ৭২ এর সংবিধানের পাহারাদার হিসেবে আছেন। ছাত্র সমাজের এটাই কি বিপ্লব ছিল? সাবেক রাষ্ট্রপতি দেশের বাইরে যাওযায় খুব তো হায়হুতাশ করল, রাতারাতি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি উঠল। এখন সেই সাবেক রাষ্ট্রপতি দেশে ফেরার পর ছাত্র সমাজ কি রিফর্ম আওয়ামী লীগের সম্মতি উৎপাদন করে যাচ্ছে? অথচ বর্তমান রাষ্ট্রপতি এখনও সপদে বহাল! আওয়ামী লীগের কার্যক্রম কোথায় নিষিদ্ধ হয়েছে? রাজপথে, সাইবার স্পেসে নাকি নির্বাচনে?

এখন শুধু ৮ আগস্ট সংবিধান সংরক্ষণ দিবস পালন করা বাকি আওয়ামী লীগের, এটাই দেখার বাকি। জুলাই ঘোষণাপত্র বিপ্লবীদের আর দেখতে হবে না। কথাটা মনে রাখবেন।

লেখক : আহ্বায়ক, সাধারণ আলেম সমাজ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Scroll to Top