সম্পাদকীয় ডেস্ক
ভারত বাংলাদেশকে দীর্ঘদিন ধরে যেসব সুবিধা দিয়ে আসছিল, তার মধ্যে অন্যতম ছিল ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা। এর ফলে বাংলাদেশ নিজ ভূখণ্ড থেকে সরাসরি পণ্য পাঠাতে না পারলেও ভারতীয় বন্দর ও বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে রপ্তানি করতে পারত। কিন্তু ভারত হঠাৎ করে এই সুবিধা বাতিল করেছে, যার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে চাপ তৈরি করলেও, বিশ্লেষকদের মতে এই সিদ্ধান্তে ভারতই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
প্রথমত, ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধার মাধ্যমে বাংলাদেশের পণ্যের বিপরীতে মোটা অঙ্কের রাজস্ব আয় করত। পণ্য পরিবহনে ব্যবহৃত প্রতিটি কার্গো ভারতের জন্য আয় এবং বাণিজ্যিক চাহিদা তৈরি করত। এখন এই সুবিধা বাতিলের ফলে সেই রাজস্বের বড় অংশ হারাবে দেশটি।
দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ ভারতীয় বন্দর ও বিমানবন্দর ব্যবহার বন্ধ করে শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের মতো দেশের বিকল্প ব্যবস্থার দিকে ঝুঁকতে বাধ্য হবে। ফলে ভারতীয় লজিস্টিক নেটওয়ার্কে বাংলাদেশভিত্তিক ব্যবসার যে অংশ ছিল, তা ধীরে ধীরে অন্যত্র স্থানান্তর হবে। এতে ভারতের বন্দর ও বিমানবন্দরের কার্গো ভলিউম কমে যাবে।
তৃতীয়ত, অতীতে ভারতীয় রপ্তানিকারকেরা বাংলাদেশের কার্গোর কারণে জায়গার স্বল্পতা ও ধীরগতির অভিযোগ করলেও, বাস্তবে সেই কার্গোগুলোই অতিরিক্ত সক্ষমতা ব্যবহারে সহায়ক ছিল। এখন এই কার্গো না এলে অব্যবহৃত অবকাঠামোর খরচ বেড়ে যাবে।
চতুর্থত, ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধের পদক্ষেপটি কিছুটা একপাক্ষিক ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বলেই ধারণা সংশ্লিষ্টদের। এতে আঞ্চলিক বাণিজ্যিক সহযোগিতার ধারাবাহিকতা ব্যাহত হবে, এবং ভারত তার বাণিজ্যিক কৌশলে একটি প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের জন্য দ্বার রুদ্ধ করার মাধ্যমে নিজেই আঞ্চলিক বাণিজ্যে সুযোগ হারাবে।
সর্বশেষ, বাংলাদেশের বিমানবন্দরের সক্ষমতা বাড়ছে এবং ঢাকার তৃতীয় টার্মিনালের কার্যক্রম শুরু হলে দেশের নিজস্ব ট্রান্সশিপমেন্ট ক্ষমতা অনেকাংশে উন্নত হবে। ফলে ভারতীয় ভূখণ্ডের ওপর নির্ভরতা কমে যাবে, কিন্তু ভারতের হারানো রাজস্ব আর ফিরে পাওয়া যাবে না।
এইসব যুক্তির ভিত্তিতে বলা যায়, ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত আপাতত নিজস্ব সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করলেও দীর্ঘমেয়াদে এই সিদ্ধান্ত তাদের অর্থনৈতিক স্বার্থের জন্যই ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে।