ঘে, ট্রান্সজেন্ডার, মৈত্রী,

ট্রান্স থেকে ‘মৈত্রী যাত্রা’ : বাংলাদেশে ঘে-এজেন্ডার পেছনের গল্প

জিম তানভির

বাংলাদেশে ‘ঘে’ সম্প্রদায়ের কার্যক্রম শুরু হয় ২০০০ সালের আগেই। তখন বিষয়টি উপস্থাপন করা হতো এইডস প্রতিরোধ ও যৌন স্বাস্থ্যসেবার ব্যানারে। মূলত স্বাস্থ্যসেবা ও মানবাধিকার আলোচনার ছত্রছায়ায় একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী তাদের অবস্থান গড়ে তোলে।

২০০৬-০৭ সালের দিকে তারা ‘যৌন সংখ্যালঘু’ পরিচয়ে আত্মপ্রকাশের চেষ্টা করে এবং ‘যৌন অধিকার’ নিয়ে কথাবার্তা জনপরিসরে আনার উদ্যোগ নেয়। ধীরে ধীরে বিষয়টি ‘এলজিবিটিকিউ’ ব্যানারে রূপ নেয় এবং ২০০৯ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত তারা আরও প্রকাশ্য হয়ে ওঠে। এ সময় নানা ধরনের ম্যাগাজিন প্রকাশ, উৎসব আয়োজন, সেমিনার, ফ্যাশন শো এবং র‍্যালির মাধ্যমে নিজেদের কার্যক্রম জোরদার করে।

তবে ২০১৬ সালে জুলহাজ মান্নান হত্যাকাণ্ডের পর কার্যক্রমে এক ধরনের স্থবিরতা দেখা যায়, যা প্রায় ২০১৮ পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এরপর ২০১৯ সালে তারা আবার নতুন মোড় নেয় — এবার ‘ট্রান্সজেন্ডার’ ব্যানারকে সামনে রেখে।

২০২৩-২৪ সাল নাগাদ এদের কার্যক্রম ঘিরে ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়। ‘ট্রান্স’ পরিচয়ের আড়ালে যেসব কর্মকাণ্ড চলছিল, তা জনসমক্ষে ব্যাপকভাবে উন্মোচিত হতে থাকে। ফলে ২০২৫ সালে তারা নতুনভাবে হাজির হয় ‘নারীর ডাকে মৈত্রী যাত্রা’ নামের একটি ব্যানারে। তবে পর্যবেক্ষকদের মতে, যারা এ ধরনের কর্মসূচির আয়োজনে যুক্ত, তাদের অনেকেই বহু বছর ধরে একই ধরনের কর্মকাণ্ডে সক্রিয়। সময় ও প্রেক্ষাপট বুঝে শুধু ব্যানার ও স্লোগান পাল্টায়।

এই গোষ্ঠীর প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে তাদের বিকৃত প্রবণতাগুলোর সামাজিক স্বীকৃতি আদায় ও এগুলোকে সমাজে স্বাভাবিকীকরণ করা—এমনটাই দাবি করছেন সংশ্লিষ্ট অনেক বিশ্লেষক। এদের পেছনে রয়েছে বিভিন্ন এনজিও, কূটনৈতিক মিশন এবং দাতা সংস্থাগুলোর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সহায়তা। ‘বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার’, ‘ব্র্যাক’, ‘আইসিডিডিআরবি’ সহ আরও কিছু প্রতিষ্ঠানকে এই কার্যক্রমের সক্রিয় পৃষ্ঠপোষক হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

তাদের প্রচারণায় সহায়তা করে আসছে কিছু গণমাধ্যমও, যেমন ‘প্রথম আলো’, ‘ডেইলি স্টার’ এবং ‘বিবিসি বাংলা’। একইসাথে একাধিক অ্যাকাডেমিক ব্যক্তিত্ব ও লেখক তাদের মতাদর্শিক ভিত্তি দিতে চেষ্টারত। কিছু নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে এই আন্দোলনের সেলিব্রেটি ফিগার হিসেবেও উপস্থাপন করা হচ্ছে।

এছাড়া, নবগঠিত একটি রাজনৈতিক দল ‘এনসিপি’ এই গোষ্ঠীকে রাজনৈতিক ছত্রছায়া দিতে পারে- এমন আশঙ্কা ইতোমধ্যেই প্রকাশ পেয়েছে।

আজকের ‘মৈত্রী যাত্রা’তে উপস্থিত কয়েকজনকে দেখে আন্দোলনের গুরুত্ব বা ব্যাপকতা খাটো করে দেখা ভুল হবে। কারণ, এদের পেছনে রয়েছে সুসংগঠিত ফান্ডিং ও নেটওয়ার্ক।

সবমিলিয়ে, এ ধরনের কর্মসূচির বিরোধিতা সহজ নয়। যারা এ প্রবণতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে চান, তাদেরকে হয়তো দীর্ঘ ও সুসংহত সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগ্রামের পথে হাঁটতে হবে।

লেখকের ফেসবুক থেকে নেয়া, ঈষৎ পরিমার্জিত

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Scroll to Top